বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশেও রয়েছে বিপুল কৌতূহল। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি ডেমোক্র্যাট প্রার্র্থী জো বাইডেন; কে জিতলে বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে, এখন চলছে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প জিতলে অভিবাসননীতি কঠোর করবেন। ফলে বিপাকে পড়তে পারেন সেখানে বসাবসরত বাংলাদেশি অভিবাসন প্রত্যাশীরা। অন্যদিকে বাইডেন নির্বাচিত হলে উদার অভিবাসননীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তেমনটি হলে সুবিধা পাবেন বাংলাদেশিরা। তা ছাড়া বাইডেন নির্বাচিত হলে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসনের মতো বিষয়গুলো প্রাধন্য দেবেন। সেইসঙ্গে
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে সামরিক গুরুত্বের পাশাপাশি অর্থনৈতিক গুরুত্ব বাড়তে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেই জিতুক, তার তেমন কোনো প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়বে না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। কারণ সরকার পরিবর্তন হলেও যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রনীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আনে না।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘এখনো বলা যাচ্ছে না নির্বাচনে আসলে কী হবে। যেহেতু আমরা দেখেছি অতীতে অনেকে পপুলার ভোট কম পেয়েও ইলেক্টরাল কলেজের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে গেছে। গতবারও ট্রাম্প এভাবে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। তবে এবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন পপুলার ভোট বেশি পাবেন- এমনটাই মনে হচ্ছে। তার মানে যে বাইডেন জিতে যাবেন- এমনটা বলা মুশকিল। ট্রাম্প যদি সুইং ভোট আর ইলেক্টরাল ভোট বেশি পান, তা হলে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হয়ে যাবেন। তবে ট্রাম্প আর বাইডেন যেই জিতুক, আমাদের ওপর খুব একটা প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশ যেহেতু অর্থনৈতিক উন্নতি করছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সফল হয়েছে কিংবা রোহিঙ্গা ইস্যু সামলাচ্ছে, সেই হিসাবে আমাদের ওপর বিভিন্ন দেশের একটা প্রভাব রয়েছে। সেটি শুধু আমেরিকা নয়, অন্যান্য দেশেরও বাংলাদেশের ওপর নজর আছে। সুতারং বাইডেন বা ট্রাম্প আসুক, আমাদের ঝামেলা হওয়ার কথা নয়। তবে পৃথিবী হয়তো স্বস্তিবোধ করবে বাইডেন ক্ষমতায় এলে। কারণ ট্রাম্প জামানায় বর্ণবাদ ও অভিবাসননীতিতে অস্বস্তি ছিল। ট্রাম্প সরকার কোভিড পরিস্থিতি ভালোভাবে সামলাতে পারেনি। এই বিষয়টি বাইডেনকে সুবিধা দিতে পারে। তবে বাইডেন জিতলে নেগেটিভ ভোটে জিতবে, কারণ তিনি এমন কোনো ক্যারিশমা দেখাতে পারেননি যে, ভোট টানতে পারেন।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ‘এবারের নির্বাচন আগের নির্বাচনগুলোর চাইতে ব্যতিক্রম। উগ্র বর্ণবাদের উত্থান, শ্বেতাঙ্গ সুপ্রিমেসি, বেকারত্ব আর কোভিড-১৯ রোধে ব্যর্থতা অতীতের সব নির্বাচনের চাইতে এ নির্বাচনকে পার্থক্য করেছে। সর্বোপরি পোস্টাল ব্যালট নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। শেষ অবধি এই পোস্টাল ব্যালট নিয়ে বিষয়টি সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত গড়াতে পারে। তবে যেই নির্বাচিত হোক, বাংলাদেশের ওপর সে অর্থে কোনো প্রভাব পড়বে না। অবশ্য ট্রাম্প বিজয়ী হলে বাংলাদেশিদের অভিবাসন প্রক্রিয়া থেমে যাবে। আর বাইডেন বিজয়ী হলে বাংলাদেশিদের জন্য এই ইস্যুতে মঙ্গল হবে বলে মনে করা হচ্ছে।’
ড. তারেক আরও বলেন, ‘নির্বাচনে যেই জিতুক বাংলাদেশের কাজ হবে নতুন মার্কিন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা। জিএসপি সুবিধার দাবি অব্যাহত রাখা। তবে আমেরিকার নেতৃত্বে চীনবিরোধী কোনো জোটে বাংলাদেশের যাওয়া ঠিক হবে না। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা চুক্তির বাইরে নিজেকে নিরপেক্ষ রাখাই হবে বাংলাদেশের কাজ। আমরা কোনো স্নায়ুযুদ্ধের অংশ হতে পারি না।’
Leave a Reply