দুদকের চোখে ৩০০ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ মালিক পিকে হালদার বিমান থেকে দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত আদালতে সোপর্দ করতে গত বুধবার নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। তিনি যাতে ‘নিরাপদে’ দেশে ফিরে আত্মসমর্পণ করতে পারেন, সে জন্য পুলিশপ্রধান, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। আজ রবিবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে (ইকে৫৮২) তার দেশে ফেরার কথা ছিল। একদিন আগে গতকাল শনিবার জানা গেল তিনি এখন দেশে ফিরছেন না। অর্থপাচারের মামলার মুখে নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের হেফাজতে দেশে ফেরার ইচ্ছার কথা জানালেও পিকে হালদার সিদ্ধান্ত বদলেছেন বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) আইনজীবী ই-মেইল করে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানিয়েছেন, পিকে হালদার এখন দেশে ফিরছেন না। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে বছরের শুরুতে পিকে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ৩০০ কোটি টাকার ‘অবৈধ সম্পদের’ খবর দিয়ে মামলা করে।
একপর্যায়ে আইএলএফএসএল আদালতকে জানায়, ‘আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত দিতে’ জীবনের নিরাপত্তার জন্য আদালতের আশ্রয়ে দেশে ফিরতে চাইছেন পিকে হালদার।তার পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার হাইকোর্ট এক আদেশে বলেন, পিকে হালদার বিমান থেকে দেশের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত আদালতে সোপর্দ করতে হবে।
পিকে হালদার ফিরছেন কিনা- শনিবার জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন জানিয়েছেন, আইএলএফএসএলের যে আইনজীবী (মাহফুজুর রহমান মিলন), উনি জানিয়েছেন যে ওই লোক (পিকে হালদার) না কি আসবেন না। দুদক ও অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়কে একটি মেইল করেছেন। কেন আসছেন না- প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি তো আসলে জানি না কেন আসছেন না। উনার মক্কেল উনি জানেন। উনি একটা মেইল করেছেন, ওই লোকের নাকি কোভিড হয়েছে, জানি না। ওরা জানে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, মাহফুজুর রহমার মিলন আমাদের (দুদককে) জানিযেছেন, পিকে হালদার আসছেন না বলে তাদের মেইল করেছেন। সে মেইলের একটি কপি আমাদের কাছেও পাঠিয়েছেন।শারীরিক অসুস্থতা ও কোভিড ১৯-এর কারণে তিনি আসছেন না। সে কখন আসবেন পরে জানাবেন।
আইএলএফএসএলের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে করা আবেদনে বলা হয়েছিল, আগামী ২৫ অক্টোবর দুবাই থেকে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় আসার জন্য তিনি টিকিট কেটেছেন। বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ওই ফ্লাইট ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবে। এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর এই বেঞ্চে এ সংক্রান্ত আরেকটি আবেদন করেছিল আইএলএফএসএল।
সেদিন আদালত বলেছিল, পিকে হালদার কবে, কখন, কোন ফ্লাইটে দেশে ফিরতে চান, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানালে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ও দুদকসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।
শুনানিতে বিচারক এও বলেছিলেন, আত্মসাৎকারীরা টাকা ফেরত দিতে চাইলে সে সুযোগ যেমন থাকা দরকার, তেমনি তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখাও প্রয়োজন।
বিদেশে থাকা পিকে হালদার গত ২৮ জুন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে একটি আবেদন করেন।
সেখানে বলা হয়, আইএলএফএসএল তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মালিকানার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছে। তার অনুপস্থিতি ও দেশের মধ্যে সৃষ্ট ‘অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে’ ওইসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ‘জটিল আকার’ ধারণ করেছে।
তিনি দেশে ফিরতে পারলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ‘সংকট কেটে যাবে’ এবং মহামারীর সময়ে দেশের অর্থনীতিতে ‘ইতিবাচক ভূমিকা’ রাখতে পারবে বলে সেখানে দাবি করা হয়।
Leave a Reply