1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

রাজনীতির সেকাল ও একাল

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২০

মো: ইখতিয়ার উদ্দিন রিবা: অসংখ্য জাতি ও ভাষার বর্তমান বিশ্ব আজ বহুবিধ অধীন ও স্বাধীন রাষ্ট্রে বিভক্ত। এর কিছু রাজতান্ত্রিক (রাজ্যের মালিক রাজা এবং জনগণ তার প্রজা), গণতান্ত্রিক (দেশের মালিক জনগণ এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির শাসন) এবং কিছু সমাজতান্ত্রিক (দেশের মালিকানাসহ ‘নির্বাচিত’ একদলীয় প্রতিনিধির শাসন) পদ্ধতিতে পরিচালিত। এগুলো আবার ‘উন্নত’ ও ‘উন্নয়নশীল’ বলে সাধারণত বিবেচিত হয়ে থাকে। পুঁজিবাদ অনুমোদন করা না হলে কার্যত দুর্নীতি হয় নিরুৎসাহিত। কিন্তু পুঁজিবাদ থাকা সত্ত্বেও সুশাসনের কারণে উন্নত, পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব অনেকটা দুর্নীতিমুক্ত। পক্ষান্তরে ‘গণতন্ত্রের অনুসারী’ উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রায় সব দেশেই দৃশ্যত অনৈতিকতা ও গণতন্ত্রের আকালসহ দুর্নীতির মহামারী যেন অনারোগ্য ব্যাধি। ফলে এসব দেশে পুঁজিবাদ, আশীর্বাদপুষ্ট কথিত গণতন্ত্র ও দুর্নীতি একে অন্যের পরিপূরক হওয়ায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরূপী অনেক শাসক বিক্রেতা আর অদৃষ্টের পরিহাসে নির্বাচনকারী জনগণ ভূমিকা নিয়েছে ক্রেতার।

এমন অপ্রত্যাশিত অবস্থায় গণ-আন্দোলন বা সেনা-অভ্যুত্থানে শাসক হটানো গেলেও করা যায় না গণতন্ত্রের জন্য একান্ত অপরিহার্য, স্বচ্ছ ও নীতি-আদর্শের রাজনৈতিক ধারার প্রতিষ্ঠা। উন্নয়নশীল অনেক দেশেই কখনো কখনো সরকার হটানো সত্ত্বেও হয়নি দুর্নীতি ও কলুষমুক্ত রাজনীতি। কারণ শাসনব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের জন্য হয়নি কোনো বিপ্লব। ব্রিটিশ রাজনীতিজ্ঞ এডমন্ড বার্কের (১৭২৯-১৭৯৭) কথায়, Make the revolution a parent of settlement, and not a nursery of future revolations (বিপ্লব করা হয় মূল সমস্যার নিষ্পত্তির জন্য এবং তা আরো বিপ্লব লালনপালনের ধাত্রী গৃহ নয়)।

১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ঔপনিবেশিক যুগে মাত্র ৫২টি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল পৃথিবীতে। যুদ্ধের পরে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯২০ সালের জানুয়ারি মাসে ৬৩টি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘লিগ অব নেশনস।’ কিন্তু আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র নিজে এর সদস্য হওয়া থেকে বিরত থাকে এবং রাশিয়া ও জার্মানি সদস্য ছিল স্বল্পকালের জন্য। আন্তর্জাতিক এই সংস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়ার ব্যর্থতায় সংঘটিত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানে ১৯৪৫ সালে এর বিলুপ্তি ঘটে এবং গঠিত হয় বর্তমান জাতিসঙ্ঘ। তখন এর ৫১ সদস্য সংখ্যা পরের বছর ১৯৪৬-এ বেড়ে হয় ৭৪। এককালে ‘সূর্যাস্ত না যাওয়া’ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের (আগেই স্বাধীন হওয়া আমেরিকা, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া ব্যতীত) অবশিষ্ট অঞ্চলসহ এই মহাযুদ্ধের পরে ফ্রান্স, ইতালি, পর্তুগাল ও স্পেনের ঔপনিবেশিক অঞ্চলগুলোর ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতা ও সদস্য পদ অর্জনের ফলে বর্তমানে জাতিসঙ্ঘের সদস্য সংখ্যা ১৯৩ এবং দু’টি রয়েছে ‘পর্যবেক্ষক’ পদমর্যাদার রাষ্ট্র। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ ও অঞ্চলসহ বিশ্বে এখন মোট রাষ্ট্রের সংখ্যা ২৪৭ বলা হয়।

নব্য স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর নিরক্ষতা, রাজনৈতিক অজ্ঞতা ও অসচেতনতা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, শিল্পহীনতা, সম্পদের স্বল্পতা, পরমুখাপেক্ষিতা ইত্যাদি ছিল প্রকট। তা সত্ত্বেও সেকালে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন সুশিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত, নিঃস্বার্থ ও আত্মত্যাগী রাজনীতিবিদরা। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও সমর্থন ছিল জনসাধারণের। কারণ রাজনৈতিক স্বার্থে না তারা কখনো মিথ্যার আশ্রয়ে জনগণকে প্রতারিত করেছেন, না স্বাধীনতার দাবি পরিহারের বিনিময়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার করেছেন। শাসকদের চাটুকারিতা কিংবা চারিত্রিক দুর্বলতার কখনো নজির রাখেননি। বরং তারা অনেকেই নির্যাতিত, কেউ কেউ সহায় সম্বল ও বিত্ত-বৈভব হারিয়ে নিঃস্ব ও রাষ্ট্রহীন হওয়ার দৃষ্টান্তও রেখেছেন। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে অনেক সাধারণ মানুষ জীবন উৎসর্গও করেছেন।

কিন্তু স্বাধীনতা-উত্তরকালে অনেক দেশেই এসব নেতার মাঝে রাজনৈতিক মতানৈক্যজনিত বিরোধ ও বিভক্তি অনেক সমস্যা সমাধানে সহায়ক হয়নি। পরিতাপ যে, স্বাধীন সংগ্রামীরা এ প্রজন্মের সামনে উত্তরসূরিদের অনুসরণের বা নীতি-আদর্শ অনুকরণের খুব একটা প্রমাণ রাখেননি; বরং তারা ক্ষমতার অনৈতিক ব্যবহারের অবাধ সুযোগে অর্জিত ধন ও ঐশ্বর্যের সাথে ‘বিশিষ্ট সুযোগ’ বলে স্বাধীনতাকে ধারণ করেছেন। গান্ধীজীর What is morally wrong, cannot be politecally right. কথাটি তাদের কাছে নিরর্থক।

উন্নত বিশ্বে রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার ধারাবাহিকতা সেকালের মতো একালেও বিদ্যমান। কারণ বিদ্যমান আইন তাদের কাছে অলঙ্ঘনীয়, যা গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল বিশ্বে পরাধীনতার যুগে নজির থাকলেও স্বাধীনতার একালে তা প্রশ্নাতীত নয়। আমেরিকার ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বলেছিলেন, অংশ Ask not what your country can do for you; ask what you can do for your country. (জিজ্ঞেস করো না তোমার জন্য রাষ্ট্র কী করতে পারে, জিজ্ঞেস করো- তুমি তোমার রাষ্ট্রের জন্য কী করতে পারো।) এমন কথা উন্নয়নশীল বিশ্বে যদি প্রয়োগ করা হয়, তবে এসব দেশ থেকে অনেক রাজনীতিকের অবৈধ অর্থ পাচার করে বিদেশে নেয়া সম্ভব নয়। এটাই হলো সেকাল ও একালের অনেক রাজনীতিকের মধ্যকার পার্থক্য।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com