1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন

“ওসি প্রদীপের নির্দেশে গুলি করেন ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী”

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০২০

টেকনাফের বাহারছড়ায় চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস মামলাটি দায়ের করেন। আর্জি শুনানিকালে শারমিন হতবিহ্বল, শোকাহত অবস্থায় ছিলেন।

মামলায় সদ্য প্রত্যাহার হওয়া এসআই লিয়াক আলীকে এক ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশকে দুই নম্বর আসামি করে ৯ জনকে আসামি করা হয়।

টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদি শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস অভিযোগ করেছেন, টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাসের নির্দেশে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করেছেন পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী।

তিনি শুনানির পর আদালত প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের বলেন, গুলির কিছুক্ষণ পর ওসি প্রদীপ কুমার দাস ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসেই তখনো জীবিত থাকা মেজর সিনহাকে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার শরীরে লাথি মারেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে একটি ‘ছারপোকা’ (মিনি ট্রাক) গাড়িতে তুলে মেজর সিনহাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছরা পুলিশ চেকপোস্টে মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে দুই নাম্বার আসামি করা হয়েছে।

অন্যান্য আসামিরা হলেন বাহারছরা তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা।

তবে, ওই মামলায় মোট ৯ আসামির তালিকায় পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের নাম নেই। মামলাটি ‘ট্রিট ফর এফায়ার’ হিসেবে আমলে নিয়ে ৩টি আদেশ দিয়েছে আদালত।

আদালতের দেয়া আদেশে পুলিশকে বলা হয়েছে, মামলাটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে।

দ্বিতীয় আদেশে বলা হয়, মামলাটি রেকর্ডের পর এলিট ফোর্স র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) মামলাটি তদন্ত করবে।

আদালতের তৃতীয় আদেশে বলা হয়, আগামি ৭ কার্যদিবসের মধ্যে মামলার অগ্রগতি আদালতকে অবহিত করতে হবে।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ৩১ জুলাই রাতে একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও চিত্র ধারণ শেষে রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে মেজর (অব:) সিনহা মো: রাশেদ খান নিজস্ব প্রাইভেট কার নিয়ে টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে পৌছলে ১নং আসামি লিয়াকত ও ৩নং আসামি এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত গাড়ি গতিরোধ করে মেজর সিনহা পরিচয় দেয়। এরপরও সিনহার সঙ্গে থাকা ক্যামরাম্যান সিফাতকে টানা হেচড়া করে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলে। এসময় সিফাত দুই হাত উচু করে গাড়ী বসে থাকা সিনহার পরিচয় দেয়। পরিচয় দেয়ার পরও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ‘তোর মত অনেক মেজর দেখেছি’ বলে সিনহাকেও গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলে। মুহূর্তে কয়েক রাউন্ড গুলি করলে সিনহা মাটিতে পড়ে যান। এসময় মেজর সিনহা জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা তাকে চেপে ধরে পুনরায় মাটিতে ফেলে দেয়।

এজহারে বলা হয়, মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ১নং আসামি এসআই লিয়াকত আরো এক রাউন্ড গুলি করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে টেকনাফ থানা পুলিশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

সিনহার মৃত্যুর ঘটনাটি ধাপাচাপা দেয়ার জন্য ইয়াবা, গাজা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ আনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়।

আদালত থেকে বেরিয়ে মামলার বাদি শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, ‘ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশনা মতে এসআই লিয়াকত ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। পরে আমার ভাইয়ের শরীরে ও মুখে বিভিন্ন জায়গায় পা দিয়ে লাথি মেরে মুখ বিকৃত করার চেষ্টা করে। এসময় অন্যান্য আসামি তাদের সহযোগিতা করে। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।

বাদি শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস আরো বলেন, ওসি প্রদীপ মধ্যরাতে ফোন করে মায়ের কাছে জানতে চায় সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের পরিচয়। মৃত্যুর কথাও বলেনি।

তিনি বলেন, পুলিশের কাছে মামলা করলে ধীরগতি হতে পারে তাই আদালতে মামলা করেছি।

তিনি বলেন, ‘আমি চাই, আমার ভাই রাশেদের হত্যাকারিরা আইনের আওতায় আসুক। দোষীদের শাস্তি কামনা করছি।’

মামলার প্রধান কৌশুলী সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, মামলার শুনানি শেষে সন্তুষ্ট হয়ে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক তামান্না ফারাহ।

বাদি পক্ষের আইনজীবি মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে টেকনাফ থানাকে গ্রহণের নির্দেশ ও একইসঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলে র‌্যাবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তদন্ত কমিটির কাজ শুরু
কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১২ টা থেকে কক্সবাজার হিলডাউন সার্কিট হাউজে শুরু হওয়া বৈঠক বেলা সোয়া ৩টায় সম্পন্ন হয়।

বৈঠক শেষে তদন্ত কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে জানান, তদন্তের কাজ শুরু করা হয়েছে। আজকের বৈঠকে একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী কাজ চলছে। ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কিভাবে তদন্তের কাজ শেষ করতে পারি সে বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। এ জন্য যেখানে যাওয়া দরকার, যাকে যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার সবই করা হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন তদন্ত কমিটির সদস্য স্বশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি লে. কর্নেল সাজ্জাদ, চট্টগ্রাম অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহা: শাহাজান আলি।
গত ৩১ জুলাই রাতে বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশীর সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com