অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। দিবসটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হবে। এর আগেই দেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশেই দিবসটি পালন করবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপি ও দেশে অবস্থানরত দলটির নেতারা। এদিকে ইতিমধ্যে তার জন্য গুলশান এভিনিউয়ের বাড়ি প্রস্তুত করা হয়েছে। দেশে ফিরে তিনি এই বাড়িতেই উঠবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে দায়ের করা মামলা। এগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবিলা করেছেন আইনজীবীরা। তিনি এখন মুক্ত। তার দেশে ফেরার বিষয়টি আমরা অনুধাবন করছি। এ নিয়ে দলে, দলের বাইরে আলোচনা চলছে। তবে দেশে ফেরার সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। দেশে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেই নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘দেশে ফেরার পর তারেক রহমান যে বাসায় উঠবেন তা প্রস্তুত বলে জানতে পেরেছি। ধারণা করছি লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের যে বৈঠক হয়েছে এবং বৈঠক শেষে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে যে সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পরই দিন-তারিখ ঠিক করবেন।’ জানা গেছে, দেশে ফিরতে হলে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের পাসপোর্ট দরকার। পাসপোর্ট না হলে অন্তত ট্রাভেল পাস দরকার। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত তিনি পাসপোর্ট কিংবা ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করেননি। যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতারা দেশ রূপান্তরকে জানান, পাসপোর্ট কিংবা ট্রাভেল পাস সংগ্রহ তেমন জটিল কোনো প্রক্রিয়া নয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফেরার দিন-তারিখ চূড়ান্ত করলে এগুলো সংগ্রহ করা একদিনের বিষয়। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে সরকার কিংবা নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষণা এলেই কেবল দিন-তারিখ চূড়ান্ত করবেন তারেক রহমান। সেক্ষেত্রে ৫ আগস্টের আগেই দেশে ফিরতে পারেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন সে বিষয়ে কিছু জানি না। সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ জানানো হয়নি। দিন-তারিখ ঠিক হলে গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
গত ১৯ জুন বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আগামী ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকবে। দিবস উপলক্ষে ৫ আগস্ট ছুটি ঘোষণা করা হবে। এটা এই বছর থেকে প্রতিবছর পালিত হবে।’ তিনি বলেন, ‘বৈঠকে জুলাই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে কী কী কাজ করতে পারি তার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। ৫ আগস্টকে টার্গেট করে ১ জুলাই থেকে কর্মসূচি শুরু হবে। মূল ইভেন্ট শুরু হবে জুলাইয়ের ১৪ তারিখ থেকে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে জুলাইয়ে যেভাবে সারা বাংলাদেশ এক হয়েছিল, তার অনুভূতিটাকে আবার ফিরিয়ে আনা। সেটা আমাদের মধ্যে আছে, তারপরও আরও পুনরুজ্জীবিত করা।’
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য এম এ মালেক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছেন। তিনি জুলাই-আগস্টের মধ্যেই দেশে ফিরতে চান। নতুন করে কোনো সংকট তৈরি না হলে দেশে ফিরবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন এমন বার্তাই দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ১০ জুন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এমন ইঙ্গিত দেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারেক রহমান অবশ্যই দেশে ফিরবেন। তিনি খুব শিগগিরই ফিরছেন।’ তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ তিনিও বলেননি।
বিএনপি মহাসচিবের এই বক্তব্যের পর গত ১২ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারেক রহমানের ফিরে আসার ক্ষেত্রে কোনো সরকারি বাধা নেই।’
গত ১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন তারেক রহমান। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, শিগগিরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। এর পর থেকে তিনি কবে ফিরবেন, সেটি নিয়ে নতুন করে আগ্রহ, কৌতূহল এবং আলোচনা চলছে দেশে। এরই মধ্যে তারেক রহমান ঢাকায় কোথায় থাকবেন, সেই বাড়ির প্রস্তুতির খবরও প্রকাশিত হয়েছে দেশ রূপান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর দ্রুততার সঙ্গে তারেক রহমান প্রায় সব মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। এছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাসহ আরও যেসব মামলায় সাজা হয়েছিল আদালতের রায়ে তার সবগুলো থেকেই তিনি খালাস পেয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে এই মুহূর্তে তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো ধরনের বাধা নেই।
তারেক রহমান দেশে ফিরে রাজধানীর গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে উঠবেন। বিচারপতি আবদুস সাত্তার সরকারের সময় দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত বাড়িটি খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এত বছর বাড়িটি তার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নামজারি করা ছিল না। অন্তর্র্বর্তী সরকার গত ৪ জুন বাড়িটির নামজারির কাগজ খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেন। বাড়িটিতে তিন বেড, ড্রয়িং, ডাইনিং, লিভিং রুম, সুইমিং পুলসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এর আগে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর সিইও (প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা) এ বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ছয় মাস আগে তিনি বাড়িটি ছেড়ে দেন। এরপরই তারেক রহমান থাকার উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাড়িটি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত।
Leave a Reply