1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন

ডেঙ্গু করোনা বায়ুদূষণে ত্রিশঙ্কু বিপদ

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই বলে আসছেন, এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং পরিস্থিতি সেদিকেই যাচ্ছে। এর মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছে। একদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা, আরেকদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা রোগী। আগে থেকেই খারাপ অবস্থা ঢাকার বায়ুমানের। সামনে ঈদুল আজহার ছুটি শেষে অফিস-আদালত খুললে বায়ুর মান আরও খারাপ হবে। রাজধানীতে চিরচেনা ভিড় বাড়লে করোনা ও ডেঙ্গু সংক্রমণের হারও বাড়তে পারে। ফলে তিন বিপদের আশঙ্কায় আছে ঢাকাবাসী।

ডেঙ্গু এখন আর শহরের রোগ নয়। এ বছর ডেঙ্গু সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের ৫৮টি জেলায় এটি দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি রোগী দেখা যাচ্ছে বরিশাল বিভাগে এবং একই বিভাগের বরগুনা জেলায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ হিসাবে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে একদিনে মারা গেছেন ৫ জন। যার মধ্যে চারজনই বরগুনার, আর একজন ঢাকায় মারা গেছেন। এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫৯ জন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়াল ২৮ জনে। আর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৫৭০ জন।

শুক্রবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি নতুন রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৩, ঢাকা বিভাগে নয়জন, চট্টগ্রাম বিভাগে নয়জন, খুলনা বিভাগে তিনজন এবং বরিশাল বিভাগে ১২৪ জন ও সিলেট বিভাগে একজন ভর্তি হয়েছেন।

ডেঙ্গু নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৫৩১ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ১২৭ জন। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছেন ৪০৪ জন।

দেশে ২০২৪ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হন; মৃত্যু হয় ৫৭৫ জনের। ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির এ সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। আর মৃতের সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। দুজনের মধ্যে একজন ঢাকা বিভাগের, আরেকজন চট্টগ্রাম বিভাগের বাসিন্দা; দুজনই নারী। এ নিয়ে চলতি বছর করোনায় তিনজনের মৃত্যু হলো। এর আগে ৫ জুন একজনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিন বলা হয়, এদিন সকাল থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৭৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৫টিতে করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়। শনাক্তের হার ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ বছর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২৫৫ জনে, যাদের ৯৭ জনই চলতি মাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সরকারি এই সংস্থা বুধবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে।

২০২০ সালে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর দেশে ১ কোটি ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। করোনা ভাইরাস পাওয়া যায় ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬০টি নমুনায়। মৃত্যু হয় প্রায় সাড়ে ২৯ হাজার মানুষের।

কোভিড মহামারী শুরুর পর প্রথম বছর ২০২০ সালে ৭ হাজার ৫৫৯ জনের প্রাণ কাড়ে করোনা ভাইরাস। সবচেয়ে বেশি ২০২১ সালে ২০ হাজার ৫১৩ জনের মৃত্যু হয়। এর পর ২০২২ সালে ১ হাজার ৩৬৮ জন, ২০২৩ সালে ৩৭ জন এবং ২০২৪ সালে ২২ জন মারা যান এ ভাইরাসে।

করোনা ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর এই পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে সামনে আরও ভয়ংকর পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবার ঢাকার চাইতে অন্যান্য জেলা শহরে বেশি। যেহেতু ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ঢাকাকেন্দ্রিক বেশি, তাই চাপটা রাজধানীর ওপর বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ঢিলেমিতে ডেঙ্গু ও করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন তারা। তবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের দাবি, ডেঙ্গু ও করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা বাড়তি নজর দিচ্ছে।

বাড়তি কীটনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি বিশেষ অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ বিষয়ে সংস্থাটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া আমাদের সময়কে বলেন, গত কয়েক দিন কোরবানির বর্জ্য নিয়ে আমরা একটু বেশি ব্যস্ত ছিলাম। তাই বুধবার জরুরি সভা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে বাড়তি সতর্কতা মেনে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে দ্বিগুণ কীটনাশক প্রয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, আক্রান্ত রোগীদের বেশির ভাগ ঢাকার বাইরের। তবে চিকিৎসা নিতে রোগীরা ঢাকায় আসছে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। এ জন্য তার দায় আমরা এড়াতে পারি না। এ জন্য বিশেষ অভিযানসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এবার ঢাকার চাইতে বরিশাল, বরগুনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়ানক হবে এমন তথ্য বহু আগে থেকেই দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে মাঠপর্যায়ে জনপ্রতিনিধি না থাকায় যথাসময়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনেকটাই পিছিয়ে সরকার। তাই এবার পরিস্থিতি ভয়ংকর হওয়ার আশঙ্কার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার আমাদের সময়কে বলেন, ঢাকার বাইরে পরিস্থিতি খারাপ হবে এই বার্তা আমরা আগেও দিয়েছি। কিন্তু সংস্থাগুলো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। সামনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এখনও ডেঙ্গুর ভরা মৌসুম শুরু হয়নি। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হবে জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। এ জন্য দ্রুত সার্ভে করে যেখানে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে তার ২০০ গজের মধ্যে লার্ভিসাইডিং করতে হবে। উড়ন্ত মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এখনই ব্যবস্থা না নিয়ে চাপ ঠেকানো কঠিন হয়ে যাবে বলেও মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।

অন্যদিকে, ডেঙ্গু ও করোনা দুই আপদ থেকে ঢাকাবাসীকে সুরক্ষা দিতে বিশেষ কর্মসূচি নিয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সংস্থাটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ আমাদের সময়কে বলেন, সর্বশেষ বুলেটিনের তথ্যানুযায়ী ডিএনসিসিতে কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। তার পরও আমরা বাড়তি সতর্কতা জারি করেছি। হট স্পট হিসেবে চিহ্নিত ডিএনসিসির ২৫টি ওয়ার্ডে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, উৎসে মশার বিস্তার রোধে যা যা করণীয়, তা করা হচ্ছে।

ডেঙ্গু, করোনার পাশাপাশি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জ্যৈষ্ঠের তাপপ্রবাহ ও বায়ুদূষণ। ঈদুল আজহার মধ্যে জ্যৈষ্ঠের তাপে ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ পুড়ছে। ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা জনজীবনে। যদিও গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় মাঝারি বৃষ্টি হওয়ায় সাময়িকভাবে তাপপ্রবাহ কিছুটা কম ছিল।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলার পাশাপাশি রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে এই তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি হয়ে যা কিছু জায়গায় কমে আসতে পারে। আবহাওয়াবিদরা আরও জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে, তবে তাপমাত্রা খুব একটা কমবে না।

এই তাপপ্রবাহের মধ্যে ঢাকার বায়ু গতকাল বৃহস্পতিবার দূষণের দিক দিয়ে বায়ুর মান মাঝারি মাত্রায় ছিল। ঈদের ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ থাকায় মানুষের আনাগোনাও কম ছিল। যে কারণে বায়ুদূষণ কিছুটা স্বস্তিকর ছিল বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। রবিবার থেকে অফিস, আদালত চালু হলে দূষণের মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com