জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নিয়ে বিএনপি আবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। কয়েক মাস ধরে দলটি নির্বাচনের একটি স্পষ্ট পথনির্দেশিকার দাবি জানিয়ে আসছিল এবং এ বিষয়ে একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ পেতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দলটির পক্ষ থেকে সংস্কার ইস্যু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণাও নিতে চাইবে দলটি। গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর এটি ছিল দলের নীতিনির্ধারকদের প্রথম বৈঠক।
সূত্রগুলো বলছে, বৈঠকে বেশ কয়েকটি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ও সংস্কারের ইস্যু ছিল অন্যতম। বিএনপি গত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার ওপর দলীয় মতামত জমা দিয়েছে। সেখানে সংস্কারের পক্ষেই দলটির মতামত রয়েছে। সংস্কার ইস্যুতে তারা যে সরকারকে সহযোগিতা করছে, সে বিষয়ে দলটি তাদের অবস্থান বারবার ব্যক্ত করছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকারের উচিত নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা এবং চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করা।
বিএনপি মনে করে, নির্বাচনকেন্দ্রিক যত সংস্কার রয়েছে, সেগুলো সরকার একটা অধ্যাদেশের মাধ্যমে করতে পারে। আর বাকি সংস্কারগুলো একটা রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ করবে। তবে সরকারের তরফ থেকে নির্বাচনের বিষয়ে যে সময়সীমার কথা বলা হয়েছে, সে ব্যাপারে এখনো আশ্বস্ত নয় বিএনপি। তাদের মধ্যে নির্বাচন প্রলম্বিত হওয়ার নানা শঙ্কা এখনো রয়ে গেছে। সরকারের তরফ থেকে সর্বশেষ বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে।
বিএনপি মনে করে, এটি নির্বাচনের কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না। কারণ, নির্বাচন নিয়ে সরকারের তরফ থেকে একেক সময় একেক কথা বলা হচ্ছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কী ভাবছে কিংবা তাদের অবস্থান কী, সেটা সুস্পষ্টভাবে জানতে শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলে এই সাক্ষাৎ হবে। সেখানে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির উদ্বেগ এবং সংশয় রয়েছে সেটা প্রধান উপদেষ্টাকে জানাবে দলটি। একই সঙ্গে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির যে মতামত, সেটাও তারা তুলে ধরবে। চিকিৎসার জন্য সস্ত্রীক মির্জা ফখরুল গত রবিবার সিঙ্গাপুর গেছেন। সপ্তাহখানেক পর তার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।
স্থায়ী কমিটিতে আরও আলোচনা হয়েছে, বিএনপি যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারকে নানাভাবে সহযোগিতা করছে এবং আগামীতেও করবে; সে কারণে নির্বাচনী রোডম্যাপ ইস্যুতে তারা বড় ধরনের কোনো কর্মসূচিতে যেতে চান না। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের প্রত্যাশা, সরকার দেশের বাস্তবতা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বৈশ্বিক চাওয়া এগুলো বিবেচনায় নিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। বিএনপি মনে করে, দ্রুত নির্বাচন রাষ্ট্র ও সমাজ-অর্থনীতির শক্তিগুলোকে সংকট উত্তরণে স্থিতির সন্ধান দেবে এবং অর্থনীতি গতিময় হবে, দেশ স্থিতিশীলতার পথ পাবে। এজন্যই সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বৈঠকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং দ্রুত এই হামলা বন্ধের দাবি জানিয়ে দলটি রাজধানীতে বড় ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচি আয়োজনের পরিকল্পনা করছে। এ ছাড়া, ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বর্ষবরণে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে বিএনপি নানা সাংস্কৃতিক কর্মসূচি গ্রহণ করবে। র্যালি, মেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, যা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় পালিত হবে।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলো ইতিমধ্যে নানা কর্মসূচি পালন করছে। এই ইস্যুতে এবার বিএনপিও কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি নেবে। এর অংশ হিসেবে চলতি সপ্তাহেই রাজধানীতে বিক্ষোভ হতে পারে। যেখানে ব্যাপক অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলি বর্বরতার প্রতিবাদ জানাবে দলটি। এ ছাড়া আগামী শনিবার রাজধানীতে অনুষ্ঠেয় ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে বিএনপি এবং দলটির নেতাকর্মীরা সেখানে অংশ নিতে পারেন।
ফিলিস্তিনের গাজায় সংঘটিত শতাব্দীর বর্বরোচিত গণহত্যার প্রতিবাদে ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’-এর পক্ষ থেকে রাজধানীতে ‘মার্চ ফর গাজা’ শিরোনামে এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণজমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ এপ্রিল শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে গিয়ে এই কর্মসূচি শেষ হবে।
Leave a Reply