ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি হামলায় আরও ২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে এক পরিবারের ছয়জন সদস্য রয়েছেন। এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এ নিয়ে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫০ হাজার ৮১০ ছাড়িয়েছে।
এ ছাড়া পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ত্রাণ ও মানব উন্নয়নে সহায়তার সঙ্গে সম্পর্কিত ছয়টি স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা,বার্তাসংস্থা আনাদোলুসহ একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার গাজা উপত্যকাজুড়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নতুন করে বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে ওই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত লাহিয়ায় একটি বাড়িতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলায় এক পরিবারের ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া উত্তর-পশ্চিম গাজা শহরের একটি আশ্রয় কেন্দ্রের কাছে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বিমান হামলায় আরও চারজন নিহত হয়েছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পশ্চিম গাজা শহরের আরেকটি হামলায় সাবেক একজন ফুটবল খেলোয়াড়ও নিহত হয়েছেন।
এর বাইরে দক্ষিণ-পশ্চিম গাজা শহরের তাল আল-হাওয়া এলাকায় কাঠ সংগ্রহ করতে থাকা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে ড্রোন হামলায় আরও দুজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে একটি মেডিকেল সূত্র জানিয়েছে।
এ ছাড়া দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে আরও একজন ইসরায়েলি হামলায় নিহত এবং একই শহরে আগের ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিন ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।
পাশাপাশি খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত তাঁবু লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিন শিশুসহ ৬ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও ১২ জন।
একই সঙ্গে দক্ষিণ গাজার ইউনিভার্সিটি কলেজের কাছে বাড়িগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনীর গোলাবর্ষণে আরও একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এদিকে গাজা শহরের উপকূলীয় অঞ্চলের দিকেও ইসরায়েলি হামলা শুরু হয়েছে। তবে আহতদের সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
হামলার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজা এখন ‘একটি হত্যাকাণ্ডের ময়দান’ হয়ে উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত বোমা হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৮১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৮৮ জন আহত হয়েছেন।
গাজা সরকার পরিচালিত মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, এই সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা বহু মানুষ নিখোঁজ থাকায় নিহতের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের সঙ্গে মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রায় ১৪০০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৩ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
Leave a Reply