1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বুধবার, ০৫ মার্চ ২০২৫, ০৮:০৯ অপরাহ্ন

মামলার মহাজটে আদালত

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৫ মার্চ, ২০২৫

দেশে ধারাবাহিকভাবে বেড়েই চলছে মামলাজট। সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের নানা ধরনের উদ্যোগের পরও যেন লাগাম টানা যাচ্ছে না। ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর ১৫ লাখ ৭০ হাজার মামলা নিয়ে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হওয়া বিচার বিভাগে বর্তমানে বিচারাধীন মামলা ৪৫ লাখ ছাড়িয়েছে। শুধু গত বছর শেষে জটের খাতায় যোগ হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার মামলা। এর মধ্যে শেষ ছয় মাসে বেড়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি। সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আইনজ্ঞরা বলেন, মামলাজট নিয়ে এখন আর বসে থাকার সুযোগ নেই। এর লাগাম টানতেই হবে। মামলা নিষ্পত্তির তুলনায় দায়েরের সংখ্যা বেশি হওয়ায় জট বেড়েই চলছে। তাই এখনই মহাপরিকল্পনা করে পাহাড়সম এ মামলার জট নিরসন করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বিচারাধীন মামলার তুলনায় বিচারকের সংখ্যা অনেক কম। এর ফলে মামলা নিষ্পত্তি কম হয়। তথ্য অনুযায়ী, উচ্চ আদালতে বর্তমানে ৯৯ জন বিচারপতি রয়েছেন। এর মধ্যে আপিল বিভাগে পাঁচজন এবং হাই কোর্ট বিভাগে ৯৪ জন। এ ছাড়া অধস্তন আদালতে কর্মরত আছেন ২ হাজার ১৪৯ জন বিচারক। সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর শেষে দেশে মোট বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪৫ লাখ ১৬ হাজার ৬০৩টি। এর মধ্যে অধস্তন আদালতের জেলা ও দায়রা জজসহ সব ধরনের ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার ৮৩২টি। এখানে ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৭ দেওয়ানি ও ফৌজদারি ২২ লাখ ৫৯ হাজার ৫৮৫টি মামলা। অন্যদিকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ১২০টি। যার মধ্যে দেওয়ানি ১৯ হাজার ২৯১টি, ফৌজদারি ১১ হাজার ৬১৯টি ও অন্য ২১০টি বিচারাধীন। একই সময় পর্যন্ত হাই কোর্ট বিভাগে বিচারাধীন মামলা ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫১টি। এর মধ্যে দেওয়ানি ৯৮ হাজার ৬১৯ ও ফৌজদারি ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৯৮১টি, রিট ১ লাখ ১৫ হাজার ২১২ এবং আদিম মামলা (অন্যান্য) ২০ হাজার ৮৩৯টি।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কারে প্রধান বিচারপতি ইতোমধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। রোডম্যাপ বাস্তবায়ন হলে মামলাজট নিরসনেও ভূমিকা রাখবে।

জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন সরকার ও বিচার বিভাগের উদ্যোগের ফলে মামলা নিষ্পত্তির হার বেড়েছিল। তবে সে সময়ও নিষ্পত্তির হার দায়েরের তুলনায় কম ছিল। ২০১৬ সাল থেকে মামলাজট অপেক্ষাকৃত কমতে শুরু করে। ২০২২ সালে প্রথম ও সর্বশেষ মামলা দায়ের অপেক্ষা নিষ্পত্তি বেশি হয়। এরপর মামলাজট বাড়ার লাগাম অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু বিদায়ি বছরের শেষ ছয় মাসে বিচার বিভাগে কার্যত অচলাবস্থা দেখা দেয়। গত বছর প্রথম ছয় মাসে ৮১ হাজার ৩৬৩টি মামলা জটের খাতায় যুক্ত হলেও শেষ ছয় মাসে বেড়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি। গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সারা দেশে সরকারি আইন কর্মকর্তা পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অধস্তন আদালতে ব্যাপকহারে রদবদল করা হয়েছে। হাই কোর্টে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২৩ জন অতিরিক্ত বিচারপতি। বিচার বিভাগের সংস্কারে গঠন করা হয়েছিল কমিশনও। গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের দেওয়া ৩৫২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে মামলাজট কমানোসহ ৩২ বিষয়ে সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানের নেতৃত্বে গঠন করা বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে মামলাজট নিরসনের বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়াসহ বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। অধস্তন আদালতের বিচারক সংখ্যা অন্তত ৬ হাজারে উন্নীত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে সুপারিশে।

অন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- সুপ্রিম কোর্টের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ও বিচারক নিয়োগে কমিশন গঠন; অধস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, শৃঙ্খলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা; স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ, বিচার বিভাগকে যথাসম্ভব নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখা, বিচার বিভাগের যথাযথ বিকেন্দ্রীকরণ এবং মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।

মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও জট কমিয়ে আনতে ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট একটি প্রতিবেদন দেয় আইন কমিশন। প্রতিবেদনে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে জটের মূল পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে- পর্যাপ্ত বিচারক না থাকা, বিশেষায়িত আদালতে পর্যাপ্ত বিচারক নিয়োগ না হওয়া, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা, জনবলের অভাব এবং দুর্বল অবকাঠামো। আইন কমিশনের এ প্রতিবেদনেও মামলাজট নিরসরে অধস্তন আদালতের বিচারক সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ৫ হাজারে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মামলাজট বিচার বিভাগের জন্য একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে বার এবং বেঞ্চকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে আরও বেশি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

এ বিষয়ে জনস্বার্থ মামলার আইনজীবী খ্যাত সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শুধু পরিকল্পনা নয়, মহাপরিকল্পনা করে মামলাজট বৃদ্ধির প্রধান দুই কারণ নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের মামলাজট বাড়ার প্রধান দুই কারণ। একটি হচ্ছে আমরা মামলা দায়েরও ঠেকাতে পারছি না, অন্যটি দ্রুত নিষ্পত্তিও করতে পারছি না।

সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, মূল কাজটা না করে মুখে যদি বলতে থাকি মামলাজট কমাতে হবে, তাহলে এটা কোনো সমাধান নয়।

মামলাজটের লাগাম টানতে হলে বিচারকের সংখ্যা অন্তত তিন গুণ বৃদ্ধি করতে হবে, লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে মামলার উৎপাদন কমানোর বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com