ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে চরমপন্থিরা।নিহত তিনজনই চরমপন্থি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল বলে জানা গেছে। আজ শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শৈলকুপা উপজেলার ত্রিবেনী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে।
নিহতদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের আবু হানিফ ওরফে হানিফ আলী (৫৬) ও তার শ্যালক শ্রীরামপুর গ্রামের লিটন (৩৫)। এর মধ্যে হানিফ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) আঞ্চলিক নেতা।
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ রানা জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে তিন থেকে চার গুলির শব্দ শুনতে পান এলাকাবাসী। এরপর ভয়ে আর কেউ ঘর থেকে বের হননি। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কয়েক ঘণ্টা পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি মরদেহ ও দুইটি মোটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তারা পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) ও জাসদ গণবাহিনী নামে দুইটি চরমপন্থি দলের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। আজ শুক্রবার রাতে রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাট এলাকায় পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের গোপন বৈঠকের খবর পেয়ে যায় প্রতিপক্ষরা। জাসদ গণবাহিনীর শীর্ষ নেতা কালুর নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন পুলিশ ও স্থানীয়রা। কালুর বাড়ি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামে। নিহত হানিফের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৩টি হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। ২০০৩ সালের ৫ ডিসেম্বর একই স্থানে পাঁচজনকে হত্যা করা হয়।
নিহত হানিফ মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি ছিলেন। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রহমান হত্যা মামলায় তার ফাঁসির আদেশ হয়। উচ্চ আদালতেও ফাঁসির রায় বহাল থাকলে হাসিনা সরকারের সময় রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের বিশেষ ক্ষমা নিয়ে এলাকায় ফিরে আসেন হানিফ।
এদিকে, এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জাসদ গণবাহিনীর কালু পরিচয় দিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে মেসেজ পাঠানো হয়। হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় দাবি করা হয়, ‘এতদ্বারা ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ,কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনাবাসীর উদ্দেশ্যে জানানো যাইতেছে যে, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা অসংখ্য খুন, গুম, দখলদারি, ডাকাতি, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হরিণাকুণ্ডু নিবাসী মো. হানিফ তার দুই সহযোগীসহ জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন। তাদের মরদেহ রামচন্দ্রপুর ও পিয়ারপুর ক্যানালের পাশে রাখা আছে। অত্র অঞ্চলের হানিফের সহযোগীদের শুধরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। অন্যথায় আপনাদের একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে। কালু জাসদ গণবাহিনী।’
শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের মতিয়ার রহমান বলেন, ‘রাতে স্থানীয়রা গোলাগুলির শব্দ পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তিনজনকেই মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান বলেন, ‘আমাদের সোর্সের মাধ্যমে খবর পাই যে ওই এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এরপর নিশ্চিত হওয়া যায় ঘটনাস্থলে তিনজনের মরদেহ পড়ে আছে। মরদেহের পাশে দুইটি মোটরসাইকেল রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে ১ জনের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। কি কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা তদন্তের আগে বলা যাচ্ছে না।’
Leave a Reply