দেশে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর পেছনে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও ডলার সংকট, ব্যাংকঋণের সুদহার বৃদ্ধি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, নানা দাবিতে শ্রমিক অসন্তোষ, শিল্পকারখানা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রভাব, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া অন্যতম কারণ। এতে একদিকে উৎপাদন বাড়ছে না; অন্যদিকে উদ্যোক্তারাও নতুন বিনিয়োগে উৎসাহী হচ্ছেন না। এমনটাই মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
তবে শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, এমন সংকটকালে শিল্প খাতকে বাঁচানোর ঘোষণা থাকতে হবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো থেকে। অন্যথায় উদ্যোক্তাদের পক্ষে এ খাতকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। এখানে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এ ছাড়া স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে পলিসি নির্ধারণ করাও উচিত বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা সাময়িক হিসাবে ছিল ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে শিল্প খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সে তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির হার কমেছে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমেছে।
বিবিএসের মতে, রপ্তানি আয়ের সংশোধিত হিসাবে বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের উৎপাদনে নিম্নগতির কারণে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি (বিসিআই) ও ইভেন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) আমাদের সময়কে বলেন, শিল্পকারখানার জন্য নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গেল বছর শিল্পকারখানাগুলোতে নানা কারণে শ্রমিক অসন্তোষে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ হয়েছে। সবার আগে শিল্পকারখানায় নিরাপত্তা দরকার।
বিসিআই সভাপতি বলেন, এই শিল্প বাঁচাতে কেবল ব্যবসায়ীই নয়, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোরও অঙ্গীকার থাকতে হবে। অন্যথায় শিল্প বাঁচবে না। বর্তমানে যেসব সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তাতে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। উৎপাদন বাড়ছে না। এতে শিল্প বাঁচানো কঠিন হবে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান আমাদের সময়কে বলেন, এমনিতেই শিল্প-কারখানাগুলো নানা সংকটে ধুঁকছে। এর মধ্যে আবার বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়িয়ে দেয়। এনবিআর নতুন নতুন আইন করছে। এতে নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, শিল্পের অবস্থা ভালো না থাকায় নতুন বিনিয়োগ আসছে না। যারা আছেন, তাদের অবস্থাও খারাপ। তাই এখন শিল্পকে বাঁচাতে হলে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে পলিসি ঠিক করা দরকার।
শিল্পের মতো একই অবস্থা দেশের কৃষি ও সেবা খাতেরও। এই দুই খাতেও প্রবৃদ্ধি কমেছে। বিবিএসের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চূড়ান্ত হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ, যা সাময়িক হিসাবে ছিল ৩ দশমিক ২১ শতাংশ। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সে তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কমেছে।
আর সেবা খাতের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ০৯ শতাংশ, যা সাময়িক হিসাবে ছিল ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে সেবা খাতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। সে তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধির হার শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ কমেছে।
Leave a Reply