1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৫৪ অপরাহ্ন

রাজশাহী ২ : মিনু-রিজভীর গলার কাঁটা জামায়াত

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

দেশের অন্যতম ভিআইপি সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে একটি রাজশাহী-২ (সদর) আসন। স্বাধীনতার পর গুরুত্বপূর্ণ এই আসন থেকে বরাবরই বিএনপির প্রার্থীরা জিতে সংসদে গেছেন। এ কারণে রাজশাহী মহানগরের এই আসনটিকে বলা হয়ে থাকে ‘বিএনপির দুর্গ’। এ আসনটিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন বিএনপির নেতারা। যাদের মধ্যে আলোচনার শীর্ষ রয়েছেন দলটির দুই কেন্দ্রীয় নেতা।

এছাড়াও এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক অবস্থানও শক্ত। তবে এখন থেকে কোনো প্রার্থী অতীতের কোনো নির্বাচনে জিততে পারেননি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা আগামী সংসদ নির্বাচন কেন্দ্রিক দলীয় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন।

তবে এ আসনে জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিবে বলে তাদের নেতারা জানালেও আওয়ামী লীগ ও তাদের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির নেতাকর্মীদের কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা রাজশাহী মহানগর এলাকায়।

রাজশাহী-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। স্বাধীনতার পর রাজশাহীর এই আসন থেকে নির্বাচনে তিনবার বিএনপি, দুবার জাতীয় পার্টি, তিনবার ওয়ার্কার্স পার্টি, একবার জাসদ ও একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতে সংসদে গেছেন।

রাজশাহী বিএনপির সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু গত ৫ আগস্টের পর থেকে নির্বাচনমুখী তৎপরতা জোরদার করেছেন। মিনু সর্বস্তরের বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলীয়, সাংগঠনিক ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন নিয়মিত।

দলীয় নেতাকর্মীরা রাজশাহী-২ আসনে মিনুকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরে গণসংযোগ শুরু করেছেন। মিনু তার স্বভাবসুলভ অভ্যাস মতো হেঁটে হেঁটে নগরীর সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মানুষের দোয়া চাইছেন।

বিএনপির দলীয় একাধিক সূত্রমতে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাজশাহী মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলে মিনুপন্থিরা সবাই বাদ পড়েন। এর বদলে রাজশাহী মহানগর বিএনপিতে মিনু বিরোধীদের কমিটিতে পদ-পদবি দেওয়া হয়। সেই থেকে মিনু ও তার ঘনিষ্ঠ অনুসারী নেতাকর্মীদের অনেকটাই কোণঠাসা রয়েছে।

এ কারণে সবসময় রাজশাহীতে বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে মিনু দলের প্রধান মুখ হিসাবে উপস্থিত থাকলেও গত এক বছরে মহানগর বিএনপির যে কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তিনি উপেক্ষিত থাকছেন। এ নিয়ে মহানগর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা অসন্তোষ রয়েছে।

তবে এখনো বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে মিনুর সঙ্গেই দেখা যায়, মহানগর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মীকে। বিশেষ করে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনকে মিনুর সঙ্গে দেখা যায়। গত ১০ নভেম্বর মিনু নগরীতে একটি শোডাউন করেন যাতে বুলবুল-মিলনসহ দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ দেখা গেছে।

মিজানুর রহমান মিনু একটানা তিন মেয়াদে ১৭ বছর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। ২০০১ সালে রাজশাহী-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন বিভিন্ন মেয়াদে। বর্তমানে তিনি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।

দলটির প্রবীন নেতা মিনু ছাড়াও এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আলোচনার তালিকায় রয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি ঘন ঘন রাজশাহী সফর করেছেন এবং বিভিন্ন দলীয় সাংগঠনিক কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছেন। তবে তার কোন কর্মসূচীতে মিনুপন্থীদের দেখা যায়নি। রিজভীর সঙ্গে থাকছেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধ এ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা ও সদস্য সচিব মামুন অর রশিদ।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুন অর রশিদ বলেন, ‘বিএনপি বড় দল। মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য অনেক নেতা বিএনপিতে রয়েছেন। মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার সবার রয়েছে। দল যাকে মনোনয়ন দিবে সবাই তার পক্ষে কাজ করবে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ যাবে না।’

প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘রাজশাহীর দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ মনে করেন স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশে আগামীতে যে নির্বাচন হবে সেখানে দেশপ্রেমিক ও ত্যাগী নেতারাই নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাবেন। আমি সবসময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে থেকেছি। সবসময় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। রাজশাহী তথা উত্তরাঞ্চলজুড়ে জাতীয়তাবাদি শক্তিকে শক্তিশালী করেছি। দল নিশ্চয় আমার এসব অবদানকে মূল্যায়ন করবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফার আলোকে একটি সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ গড়তে আমরা কাজ করছি।’

এদিকে, জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী-২ আসনে এখনো দলীয় প্রার্থী ঠিক না করলেও দলটির নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামায়াতের নেতাকর্মীরা নগরীর থানা, ওয়ার্ড ও মহল্লা পর্যায়ে নিবিড় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। দলবেঁধে করছেন গণসংযোগ। মসজিদ ও মাদ্রাসায় গিয়ে বিভিন্ন দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করছেন।

গত ১৮ জানুয়ারি রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে এক বিশাল সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী। ওইদিন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান রাজশাহীর চিকিৎসক কমিউনিটি, নারী সমাজ ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পৃথক পৃথক সমাবেশে বক্তব্য দেন। তিনি আগামীতে কুরআনের আলোকে রাষ্ট্র ও সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।

রাজশাহী মহানগর জামায়াতের একাধিক সূত্রমতে, দলটির প্রার্থী বাছাইয়ের জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই প্রার্থী চুড়ান্ত হবে। তবে প্রার্থী হওয়ার আলোচনায় মহানগরের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মণ্ডলসহ চারজন রয়েছেন। যাদের মধ্যে দুইজন সিনিয়র ও দুইজন জুনিয়র নেতা। আর মহানগরের সভাপতি ড. কেরামত আলী চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি এমাজ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, রাজশাহীতে এখন পর্যন্ত দুটি আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ঠিক হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী-২ আসনে হয়নি। এই আসনে প্রার্থী কে হবেন তা ঠিক করবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর সব আসনে দলীয়ভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি শুরু করেছেন আমাদের দলের নেতাকর্মীরা। রাজশাহীর ছয়টি আসন ছাড়াও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও আমরা দলীয়ভাবে অংশগ্রহণ করব। এখন পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্তই আছে।

অন্যদিকে রাজশাহী-২ আসনে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী দলটির ভাইস চেয়ারম্যান ও রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমি রাজশাহী-২ আসনসহ একাধিক আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে দলীয়ভাবে কার্যক্রম শুরু করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com