মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ সদাচারী। তার পুরো জীবনে রয়েছে মানবজাতির পাথেয়। যে যতটুকু অর্জন করবে তার জীবনের পথচলা ঠিক ততটাই সুন্দর হবে। সম্মান, মর্যাদা, সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরপুর হবে ইহকাল। আর পরকালে থাকবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার জান্নাত। রাসুল (সা.)-এর চরিত্র সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, তার চরিত্র ছিল আল-কোরআন। অর্থাৎ তিনি ছিলেন কোরআনের বাস্তব নমুনা। (সহিহ মুসলিম)
হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) নবী করিম (সা.)-এর কাছে দশ বছর থেকেছেন, তার সেবা করেছেন। তিনি বলেন, দশ বছর পর্যন্ত আমি নবী করিম (সা.)-এর সাহচর্যে ছিলাম। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে কারও সঙ্গে যখন তার সাক্ষাৎ হতো, তখন তিনি তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতেন এবং যে পর্যন্ত তিনি তার থেকে পৃথক না হতেন, তিনি নিজ থেকে পৃথক হতেন না। আর যখন কোনো সাহাবি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় তার হাত মোবারক তার হাতে নিতেন, তখন যে পর্যন্ত ওই সাহাবি তার হাত গুটিয়ে না নিতেন, তিনি তার হাত মোবারক গুটিয়ে নিতেন না। আর কোনো সাহাবি যখন তার সঙ্গে মিলিত হয়ে তার কানে কানে কোনো কথা বলতে চাইতেন, তখন তিনি তার কান তার দিকে পেতে দিতেন এবং সেই সময় পর্যন্ত তার কান সরিয়ে আনতেন না, যে পর্যন্ত ওই ব্যক্তি নিজে না সরিয়ে নিতেন।
নবীজি কখনো সামর্থ্যরে বাইরে কোনো কাজ কাউকে চাপিয়ে দেননি। অন্যের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রতিশোধ নেননি। বরং ক্ষমা করে দিয়েছেন। ছিলেন ন্যায়পরায়ণ ও দানশীল। নবী করিম (সা.)-এর জীবনের এসব গুণাবলির কিছুটাও যদি আমরা নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পারি তাহলে আমাদের জীবন হবে কল্যাণময়। পরকাল হবে নিরাপদ এবং সুখ-শান্তিতে ভরপুর।
নবী করিম (সা.) সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘এমন একজন রাসুল, যে তোমাদের কাছে আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াতগুলো তেলাওয়াত করে। যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে, যাতে তিনি তাদের অন্ধকার হতে আলোতে বের করে আনতে পারেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তিনি তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আল্লাহ তো তাকে অতি উত্তম রিজিক দেবেন।’ (সুরা তালাক ১১)
উদারতা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। একদা হজরত সাহল ইবনে হুনাইফ ও হজরত কায়েস ইবনে সাদ (রা.) বসা ছিলেন। একটি লাশ নিয়ে কিছু লোক তাদের অতিক্রম করল। তখন তারা দাঁড়িয়ে গেলেন। বলা হলো, লাশটি একজন অমুসলিমের। তারা বললেন, নবী করিম (সা.)-এর পাশ দিয়ে একবার একটি লাশ নেওয়া হয়েছিল। তিনিও তখন বসা থেকে দাঁড়িয়েছিলেন। (সহিহ বুখারি)
নবী করিম (সা.)-এর জীবনকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলে ইসলাম সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা তৈরি হবে। অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের কাছে সুন্দর বার্তা পৌঁছবে, ইসলামকে জানতে আগ্রহ তৈরি হবে। দাওয়াতি কাজের পথ সহজ হবে।
Leave a Reply