আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদা ও বিশ্বাস হলো, দুনিয়ায় আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়। এই আকিদা ও বিশ্বাস কোরআন দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ বলেন, ‘কোনো দৃষ্টি তাঁকে (দুনিয়ায়) বেষ্টন করতে পারে না, বরং তিনিই সব দৃষ্টিকে বেষ্টন করেন। তিনি অতি সূক্ষ্মদর্শী এবং ভেতর-বাইরে সব বিষয়ে বিজ্ঞ।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১০৩)
এর প্রমাণ পাওয়া যায় মুসা (আ.)-এর ঘটনায়। মুসা (আ.) যখন ‘হে আমার রব, আমাকে দেখা দাও’ বলে আল্লাহকে দেখতে চেয়েছেন, তখন জবাবে আল্লাহ বলেছিলেন : ‘তুমি কখনো আমাকে দেখতে পারবে না।’
পবিত্র কোরআনে এসেছে : ‘মুসা যখন নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হলো, তখন তার রব তার সঙ্গে কথা বললেন। সে তখন নিবেদন করল, হে আমার রব! আপনি আমাকে দর্শন দিন।
আল্লাহ বলেন, তুমি আমাকে কখনো দেখতে পারবে না, তবে তুমি ওই পাহাড়ের দিকে তাকাও। যদি ওই পাহাড় স্বস্থানে স্থির থাকে তাহলে তুমি আমাকে দেখতে পারবে। অতঃপর তার রব যখন পাহাড়ে জ্যোতিস্মান হলেন তখন তা পাহাড়কে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল, আর মুসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেল। যখন চেতনা ফিরে এলো তখন সে বলল, আপনি মহিমাময়, আপনার পবিত্র সত্তার কাছে আমি তাওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম ঈমান আনলাম।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৪৩)
মুসা (আ.) নবী হয়ে যখন এ জবাব পেয়েছিলেন, তখন বোঝা যায় যে অন্য কোনো জিন ও মানুষের পক্ষে আল্লাহকে দেখার সাধ্য নেই। তবে এসব কথা দুনিয়ার জীবনের জন্য প্রযোজ্য। কেননা পরকালে মুমিনরা আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করবেন। এ কথা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত। কোরআনে এসেছে, ‘কিয়ামতের দিন অনেক মুখমণ্ডল সজীব ও প্রফুল্ল হবে। তারা নিজ রবকে দেখতে থাকবে।’ (সুরা : কিয়ামা, আয়াত : ২২-২৩)
দুনিয়ায় আল্লাহকে দেখা অসম্ভব হওয়ার বিষয়টি হাদিস দ্বারাও প্রমাণিত। আবদুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ কখনো তার রবকে দেখতে পাবে না, যতক্ষণ না সে মৃত্যুবরণ করবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৬৯; তিরমিজি, হাদিস : ২২৩৫)
প্রশ্ন হলো, মিরাজজের রজনীতে মহানবী (সা.) কি সচক্ষে আল্লাহ তাআলাকে দেখেছেন? এ প্রশ্নের জবাব হলো, বিষয়টি নিয়ে সাহাবাদের যুগ থেকে মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি মহান আল্লাহকে দেখেছেন আর কেউ কেউ বলেছেন, বরং তিনি আল্লাহর নুর দেখেছেন। আবু জার গিফারি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি মিরাজে আপনার রবকে দেখেছিলেন? তিনি বলেন, নুর (দেখেছি)—কিভাবে তাঁকে আমি দেখব? (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৮২)
Leave a Reply