কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে শীতের প্রকোপে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পথে-প্রান্তে কুয়াশার রাজত্ব আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে নামছে তাপমাত্রার পারদ। বছরের শুরুতেই জেলার সর্বত্র কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে চারপাশ। দিনের বেলাতেও সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে বাড়ছে জনজীবনের দুর্ভোগ। শীতের এই দাপটে শ্রমজীবী মানুষদের কষ্ট আরো বেড়েছে। খেটে খাওয়া মানুষজন খরকুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ জেলার মানুষগুলো বছরের এই সময়টায় প্রকৃতির নির্মমতায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়। শীতার্ত মানুষগুলোর তাই একটাই প্রার্থনা, শীত নিবারণের জন্য একটু উষ্ণতা।
অতিরিক্ত শীত ও কুয়াশার কারণে কৃষিকাজেও মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে আমন ধানের বীজতলা, আলু, সরিষা ও সবজি চাষ ক্ষতির মুখে পড়েছে।
কৃষিবিদরা জানান, ‘কুয়াশার কারণে ফসলের ফটোসিন্থেসিস বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা ফসলের বৃদ্ধি কমিয়ে দিচ্ছে। আর্দ্রতার কারণে ছত্রাকজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবও বাড়ছে। এতে ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’
কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে যান চলাচলে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। ঘন কুয়াশা আর প্রচণ্ড ঠান্ডায় মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দিনের বেলাতেও সূর্যের দেখা নেই বললেই চলে। রাস্তা এতটাই ঘন কুয়াশায় ঢেকে গেছে যে, হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলতে বাধ্য হচ্ছে।
শীতার্তদের জন্য প্রশাসন শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানা গেছে। তাই শীত নিবারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে আরো শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে কিছু এলাকায় কম্বল বিতরণ শুরু হয়েছে এবং দ্রুত বাকি এলাকাগুলোতেও এই কার্যক্রম চালু করা হবে।
উপজেলার নাগদাহ গ্রামের সাইফুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, ‘গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড শীত পড়ছে। কাজের জন্য বাইরে বের হতে কষ্ট হয়। আশা করি প্রশাসন থেকে আরো শীতবস্ত্র দেয়া হবে।’
এদিকে জেলার হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শীতজনিত রোগ যেমন ঠান্ডা, কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে।
কুড়িগ্রাম রাজারহাট আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার নয়া দিগন্তকে জানান, ‘আজ বৃহস্পতিবার সকালে কুড়িগ্রামের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’
শীতে বিপর্যস্ত কুড়িগ্রামকে সামাল দিতে প্রয়োজন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো তাই শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
Leave a Reply