1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন

মুখোশ খুলে গেছে ব্যাংক লুটেরাদের

‍ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক :
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো আমানতের টাকা নয়ছয় করে দুর্নীতির ঘটনাগুলো ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর তাদের ঢেকে রাখা দুর্নীতির মুখোশ খুলে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমূলক পদক্ষেপে বেরিয়ে এসেছে ব্যাংক খাতের বড় বড় দুর্নীতির চিত্র। ব্যাংক লুটেরা ও তাদের সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কার্যক্রম শুরু হয়। তাই ২০২৪ সালকে ব্যাংক লুটেরা ও তাদের সহায়তাকারীদের শায়েস্তার বছর হিসেবে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। নতুন বছরে (২০২৫) ব্যাংক লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের কঠোর শাস্তির মাধ্যমে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পরামর্শ দেন তারা।

ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে আলোচনা-সমালোচনা বিগত কয়েক বছর ধরেই ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলোর অবস্থা যে এত নাজুক, তা অনুমান করা যায়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে একাধিক ব্যাংক দখল করে ঋণের নামে বিপুল অর্থ লুট করা হয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে অর্থ বের করে নেওয়া হয়। এই লুটপাটে সবার শীর্ষে ছিল চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত এস আলম গ্রুপ। এ ছাড়া বেক্সিমকোসহ আরও কিছু গ্রুপ অর্থ লুটপাটে এগিয়ে ছিল। এসব লুটপাতে নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু তাই নয়, ব্যাংক লুটেরাদের সহায়তা করতে ব্যাংক খাতে তথ্য সংগ্রহের দরজাও বন্ধ করা হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কারে বড় উদ্যোগ নেয়। সেই সঙ্গে বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের দুর্নীতি ও লুটপাটে অর্থনীতির যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার ফিরিস্তি জনগণের সামনে তুলে ধরে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সুশাসন নিশ্চিতে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজম্যান্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর ব্যাংক খাতে অবারিত অনিয়ম বন্ধ হয়েছে। নতুন সরকারের পদক্ষেপে হয়তো খেলাপিঋণ বেড়ে যাবে। তবে এটাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। এতে সবাই ব্যাংক খাতের প্রকৃত অবস্থা জানতে পারবে। কারণ, প্রকৃত অবস্থা জানতে না পারলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাই বা কী ব্যবস্থা নেবে, আর সাধারণ ব্যবসায়ী ও ডিপোজিটরা কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। সরকার বদলের পর ১০-১১ ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। তবে ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট এখনও কাটেনি। তাই সবার আগে আস্থা ফেরানোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

ব্যাংক খাত সংস্কার প্রাধান্য : নতুন সরকার গঠনের পর ১১টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই সঙ্গে এ খাত সংস্কারে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনিয়মের শিকার ব্যাংকগুলোর সম্পদের প্রকৃত মান বের করবে এই টাস্কফোর্স। পাশাপাশি দেশের ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সমন্বিত নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় যোগ্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যাংক কোম্পানি ও ব্যাংকিং নীতিমালার উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করবে, যারা নির্দিষ্ট ব্যাংকগুলোর ওপর গভীর নিরীক্ষা চালাবে। এ ছাড়া নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়ে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি ক্রলিং পেগ পদ্ধতির আওতায় ডলারের দাম ১২০ টাকা নির্ধারণ করে আড়াই শতাংশ পর্যন্ত কমবেশি করার সিদ্ধান্ত হয়। এতে প্রবাসী আয়ে জোয়ার আসে। রপ্তানি আয়েও গতি ফিরে। আবার রিজার্ভ বাড়াতে আইএমএফসহ দাতা সংস্থার ঋণ পাওয়ার জোর চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়। এতে সরবরাহ বেড়ে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে ডলারের বাজার।

আলোচনায় শে^তপত্র কমিটির প্রতিবেদন : শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে দেশের ব্যাংক খাতকে কৃষ্ণগহ্বরের (ব্ল্যাকহোল) সঙ্গে তুলনা করা হয়। এতে বলা হয়, গত দেড় দশকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ব্যাংক খাতে। রাজনৈতিক প্রভাবে ব্যাংক ঋণ এ খাতের সংকট তীব্র করেছে। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতের সমস্যাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু এবং ১৪টি মেট্রোরেল নির্মাণ করা যেত। ব্যাংক ঋণে ‘হাই প্রোফাইল’ কেলেঙ্কারি আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছে এবং উৎপাদনশীল খাত থেকে পুঁজি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। এ খাতের দুর্নীতিবাজরা সবাই ছিলেন প্রভাবশালী। গত ১৫ বছরে রাষ্ট্রীয় সংস্থার সহায়তায় ব্যাংক দখল করা হয়েছে। শুধু একটি গোষ্ঠীর হাতেই সাতটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হয়েছিল। এরপর বড় অঙ্কের অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়।

১০ শিল্প গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু : বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো এবং ঘুষকাণ্ড ও দুর্নীতিসহ অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জনের কারণে দেশের শীর্ষস্থানীয় ১০ শিল্পগোষ্ঠীর অবৈধ অর্থ অর্জন, কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার খতিয়ে দেখতে যৌথ তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এগুলো হলোÑ এস আলম, বেক্সিমকো, নাবিল, সামিট, ওরিয়ন, জেমকন, নাসা, বসুন্ধরা, সিকদার ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর আরামিট গ্রুপ। তদন্ত শেষে এসব প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবে সংস্থা দুটি।

লাগামহীন ছিল খেলাপি ঋণ : আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে যে অর্থ বের করে নেওয়া হয়েছে, তা এখন খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা, যা ওই সময় বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ ছিল। আর গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বা ৯ শতাংশ। অর্থাৎ ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। গত নভেম্বরে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আগামী দিনে মোট ঋণের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশে পৌঁছে যাবে। এসব ঋণের বড় অংশই ২০১৭ সালের পর দেওয়া হয়েছে, যার একটি বড় অংশই পাচার হয়ে গেছে।

তারল্য সংকট তীব্র হয় : শেখ হাসিনার আমলে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল আটটি ব্যাংক। এর বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআরআর ও এসএলআর রাখতে ব্যর্থ হয়। তবুও ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে এসব ব্যাংক আরও বেশি তারল্য সংকটে পড়লে চলতি হিসাব ঘাটতি রেখেও লেনদেনের সুযোগ করে দেওয়া হয়। তবে নতুন গভর্নর আগে যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, তা বন্ধ করে দেন। এতে ব্যাংকগুলোর সঠিক আর্থিক চিত্র বেরিয়ে আসতে শুরু করে। তবে তারল্য সংকট আরও তীব্র হয়। এমন অবস্থায় বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যাংকগুলোকে তারল্য-সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে আমানকারীদের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোকে সহায়তা করে। তারপরও কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদামতো টাকা দিতে পারছে না।

ডলার ও রিজার্ভে স্বস্তি : দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলমান ডলার সংকট অনেকটাই কেটেছে ২০২৪ সালে। সেই সঙ্গে পতনের বৃত্ত থেকে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে রিজার্ভ। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি ডলারের সরবরাহ বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সীমা ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়। ফলে বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় ডলারের মধ্যবর্তী দাম হয় ১১৭ থেকে ১২০ টাকা। এতে বাড়তে শুরু করে প্রবাসী আয়। রপ্তানি আয়েও গতি ফিরেছে। বৈদেশিক উৎস থেকেও মিলেছে বাড়তি ঋণের প্রতিশ্রুতি। এতে ডলার সরবরাহে উন্নতি হতে শুরু করেছে। অন্যদিকে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম তিন মাসে (আগস্ট-অক্টোবর) রিজার্ভের তেমন পতন লক্ষ্য করা যায়নি। নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com