দেশের বিচারাঙ্গনের ৫১ জন বিচারকসহ অন্তত ৬ শতাধিক ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এর মধ্যে আইনজীবী চার শতাধিক এবং বিভিন্ন আদালতের কর্মচারী ২১৭ জন। আক্রান্ত বিচারকদের মধ্যে ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৩৫ জন। মারা গেছেন ১ জন। আক্রান্ত আইনজীবীদের মধ্যে ৩৭ জন মারা গেছেন। কর্মচারীদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮৩ জন। মারা গেছেন ১ জন। আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার প্রতিদিনের রিপোর্ট রাত ১০টার মধ্যে আইনমন্ত্রীকে অবহিত করছেন এবং মন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সুপ্রিমকোর্ট, আইন মন্ত্রণালয় ও আইনজীবী সমিতি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আশা করছি আক্রান্ত সবাই ভাইরাসকে পরাজিত করে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন। ইতোমধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়েছেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, আক্রান্ত বিচারকদের মধ্যে করোনা জয় করে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন ৩৪ জন। এ ছাড়া মাগুরার জেলা জজের করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দ্বিতীয়বার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত তিনি হাসপাতালেই থাকবেন। সূত্র জানায়, আক্রান্ত কর্মচারীদের মধ্যে ১৩৩ জন হাসপাতাল ও বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। নওগাঁ জেলা জজ আদালতের একজন কর্মচারী করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও তার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
৮ জুলাই প্রধান বিচারপতি বরাবর সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির পাঠানো এক আবেদনে বলা হয়, ১২ মার্চ থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ সারা দেশের আদালতসমূহে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে সমিতির ৩৫ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের অনেকেরই করোনা উপসর্গ ছিল। করোনার উপসর্গ নিয়ে ৯ জুলাই ফেনীতে এক আইনজীবীর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বুধবার সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী আহসান সোহেল মারা গেছেন।
ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, গত ২৪ মে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য সাবেক এমপি হাজী মকবুল হোসেন, ২৬ মে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শওকত হোসেন অপু, ৩ জুন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাফর মো. মহিউদ্দিন, ১১ জুন অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ, ১৩ জুন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, ১৩ জুন রাতে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, ১৯ জুন অ্যাডভোকেট শেখ নাসির উদ্দিন আহমেদ এবং ২০ জুন সিলেট বারের অ্যাডভোকেট আবু সাঈদ আবদুল্লাহ চৌধুরী করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর করোনার উপসর্গ নিয়ে ২৮ মে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম চৌধুরী, ৩১ মে অ্যাডভোকেট ফজলুল করিম এবং ১৩ জুন অ্যাডভোকেট আবদুল হাই মারা যান।
সূত্র জানায়, ৮ মে করোনায় আক্রান্ত হন সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার। ১১ মে তার করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন।
সুপ্রিমকোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, সর্বপ্রথম ২২ মে নেত্রকোনা জেলা ও দায়রা জজ শাহাজাহান কবির করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এরপর মুন্সীগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট বেগম রোকেয়া রহমান আক্রান্ত হন। তারা সুস্থ হয়ে আবার কাজে যোগদান করেছেন। ২৪ জুন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লালমনিরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ফেরদৌস আহমেদ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮-এর বিচারক বেগম শামীম আহমেদ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন জয়পুরহাটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রুস্তম আলী।
ভোলার জেলা ও দায়রা জজ এবিএম মাহমুদুল হক কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে ভোলায় বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। ২১ জুন শ্বাসকষ্ট বাড়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্দেশে তাকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড সেন্টারে ভর্তি করা হয়। ১ জুলাই তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সূত্র জানায়, ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, হবিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, বরগুনা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, ফেনী বারের একাধিক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুর রেজাক খান সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হন। সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মানবাধিকারকর্মী ফৌজিয়া করিম ফিরোজ আক্রান্ত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি সুস্থ।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিনউদ্দিন বলেন, আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সমিতির পক্ষ থেকে তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। আমরা তাদের পাশে আছি।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, রাজধানীর তিনটি বিশেষ হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা করার সুযোগ পাচ্ছেন সমিতির সদস্য আইনজীবী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এগুলো হল : হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল ও উত্তরার জাপান ইস্ট-ওয়েস্ট হাসপাতাল।
Leave a Reply