আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে দায়ের করা রাজনৈতিক তথা গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে নির্বাচনের আগে-পরে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এসব মামলার তালিকা চেয়ে জেলা ও মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর বরাবর চিঠি দিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মামলার পূর্ণাঙ্গ তথ্য ও বর্তমান অবস্থা জানতে চাওয়া হয়েছে। চিঠিতে বাদীর বিষয়ে তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
গত ২ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ করে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও অন্যদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা করা হয়; যা গায়েবি মামলা নামে পরিচিত। এসব মামলার সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য না থাকায় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ছক আকারে মামলার তালিকা পাঠাতে হবে। তাতে মামলার বাদীর নাম-পরিচিতির পাশাপাশি বর্তমান অবস্থা এবং মামলা তদন্তাধীন না বিচারাধীন, সে বিষয়ে তথ্য থাকতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগের (জিপি-পিপি শাখা) উপ-সলিসিটর সানা মো. মাহরুফ হোসাইন গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, সব জায়গা থেকে মেইলের মাধ্যমে মামলার তালিকা পাঠাচ্ছে। মেইলগুলো চেক করে দ্রুত পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হবে।
জানা গেছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নিয়ে রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এ লক্ষ্যে গত সেপ্টেম্বর মাসে দুটি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এর মধ্যে একটি জেলা পর্যায়ের কমিটি, অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পর্যায়ের কমিটির সভাপতি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে বলা হয়। জেলা কমিটির কাছ থেকে সুপারিশপ্রাপ্তির পর সেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা এবং প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করে তালিকা প্রস্তুত করা ও মামলা প্রত্যাহারের কার্যক্রম গ্রহণ করবে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি।
রাজনৈতিক মামলার বিষয়ে আইনজ্ঞরা বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়েরে আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং, সরকারের এ উদ্যোগ সম্ভাব্য অন্যায় সংশোধনের একটি উপায়। এটি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং রাজনীতি ও আইনের শাসনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করবে। তবে প্রক্রিয়াগুলোর স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে রাজনৈতিক হয়রানির আড়ালে প্রকৃত মামলাগুলো খারিজ হয়ে যেতে
পারে, যার ফলে সত্যিকারের অপরাধীরা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে পারে। তাই সরকারকে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে পাবলিক প্রসিকিউটরদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মামলাগুলো শক্তিশালী বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রত্যাহার করলে ক্ষমতার সম্ভাব্য অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে।
Leave a Reply