বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সচিবদের নিয়মিত বৈঠক (এফওসি) আজ রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা নেয়ার পর এটাই ভারত সাথে উচ্চ পর্যায়ের প্রথম বৈঠক। এই বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কিছুটা প্রশমন হওয়ার পাশাপাশি সামনে এগিয়ে চলার পথ খোঁজা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন। আর ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকবেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।
এফওসিতে দুই দেশের সার্বিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার সুযোগ থাকে। এতে বাণিজ্য, সীমান্ত, কানেক্টিভিটি, অভিন্ন নদীর পানির মতো বিষয়গুলোর পাশাপাশি সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক বিষয়ের মধ্যে হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ভারত থেকে ক্রমাগত প্রোপাগান্ডা, আন্তর্জাতিক মহলে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা, আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, কলকাতা উপ-হাইকমিশনের সামনে বাংলাদেশের পতাকা পোড়ানো, দুই দেশে অবস্থিত পারস্পরিক মিশনগুলোর নিরাপত্তাসহ আস্থা বর্ধক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এফওসিতে অংশ নিতে আজ সোমবার সকালে ঢাকায় পৌঁছাবেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের পর রাতেই ঢাকা ত্যাগ করবেন। মূল বৈঠকের আগে দুই পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে একান্ত আলোচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
মিশ্রির সফর সম্পর্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে এফওসি একটি প্রথম পদক্ষেপ। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করতে দুই দেশ বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। আমরা মনে করি, ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্কটা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা ভারতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তাই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মেরামত করতে উভয় দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।
তিনি বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন এলে কয়েকটি দেশের সাথে সম্পর্ক কিছুটা হোঁচট খেতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থে আমরা এসব ইস্যু বা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ভালো সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারব বলে আশাবাদী।
শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলেছে কি না জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রতিবেশী দেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অবস্থান না করলে দু’দেশের সম্পর্ক উত্তরণ প্রক্রিয়া অনেকটা সহজ হয়ে যেত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছেন, এফওসি একটি ‘স্ট্রাকচার্ড’ বা কাঠামোগত বৈঠক। সেখানে দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিব পারস্পরিক স্বার্থসম্পর্কিত নানা বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। এফওসি ছাড়াও আরো অনেকের সাথে পররাষ্ট্র সচিবের আলোচনা হবে।
Leave a Reply