1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫১ পূর্বাহ্ন

টাকায় বিক্রি হতো জিপিএ ৫, ফেল থেকে হয়ে যেত পাস

শাহেদ মতিউর রহমান
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মেধা নয় বরং জিপিএ এর স্কোর দিয়েই নির্ধারিত হতো শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা। ফলে কোন প্রতিষ্ঠানের কতজন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেল তা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা ছিল প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মধ্যে। আর এই সুযোগে ২০১৮ সালে দিপু মনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর শুরু হয় জিপিএ ৫ কেনাবেচার চোরা গলি পথে অর্থের লেনদেন। শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি, বোর্ড চেয়ারম্যান, বোর্ড সচিব এবং বিভিন্ন স্কুল কলেজের প্রধানরা জড়িয়ে পড়েন জিপিএ ৫ কেনাবেচার প্রতিযোগিতায়। টাকা দিলেই পাওয়া যেত জিপিএ ৫। আবার অনেক অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর ভাগ্যেও মিলত বোর্ড পরীক্ষায় কৃতকার্যের অলিক ছোঁয়া। এসব লেনদেনে দেড় লাখ টাকা থেকে শুরু করে তিন-চার লাখ টাকাও বিনিময় হতো বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দিপু মনির পুরো দায়িত্বকালে অর্থাৎ ২০১৮ থেকে ২০২৩ এর শেষ পর্যন্ত জিপিএ ৫ বিক্রি করে শিক্ষা বোর্র্র্ডের একটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এক সময়ের প্রভাবশালী বোর্ড সচিব তার একচ্ছত্র ক্ষমতার বলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকেও পাশ কাটিয়ে গড়ে তোলেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সেখানে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিজেই দেন-দরবার করে টাকার অঙ্ক মীমাংসা করে দিতেন। অপর দিকে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে জিপিএ ৫ পাওয়া নিয়ে আর্থিক লেনদেন করতেন।

এ দিকে ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাজানো নির্বাচনের পর দিপু মনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব না পাওয়ায় আগের সেই সিন্ডিকেট দুর্বল হয়ে যায়। অবশ্য এর আগেই ২০১৮ ও ২০১৯ সালে জিপিএ ৫ কেনাবেচার তথ্য ফাঁস হতে শুরু করে। ওই সময়ে উত্তরার কয়েকটি স্কুল-কলেজের প্রধানদের বিরুদ্ধে জিপিএ ৫ কেনাবেচার তথ্য প্রকাশ হয়ে যায়। তখন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক জিয়াউল হক। জিপিএ ৫ কেনাবেচার মূল হোতা ছিলেন শিক্ষা বোর্ড সচিব শাহেদুল খবির চৌধুরী, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছিলেন অদ্বৈত কুমার রায়। মূলত এই দুইজন প্রকাশ্যে থেকেই জিপিএ ৫ কেনাবেচায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। অভিযোগ ছিল শাহেদুল খবির চৌধুরী ও অদ্বৈত কুমার রায় এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে, তারা শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনির নিজস্ব লোক হিসেবে সবার ওপর খরবদারি করতেন। পরবর্তীতে তারা দু’জনই তাদের চাহিদা ও পছন্দমতো পোস্টিং নিয়েছেন ।

অপর দিকে অভিযোগ রয়েছে, অভিভাবকদের সাথে তিন লাখ টাকায় জিপিএ ৫ পাইয়ে দেয়ার চুক্তি করত উত্তরার বিভিন্ন স্কুল ও কলেজ প্রধান। আর দুই লাখ টাকায় ফেল থেকে পাস করিয়ে দেয়ারও নিশ্চয়তা দিতেন তারা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান, করোনার আগের বছরে অর্থাৎ ২০১৯ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বোর্ডের ওই দুই কর্মকর্তা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শিক্ষা বোর্ড থেকে তদন্ত করা হয়। সেখানে জিপিএ ৫ বিক্রির সত্যতা পায় কমিটি। পরে জিপিএ ৫ বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় রাজধানীর উত্তরার ন্যাশনাল পাবলিক কলেজ ও দ্য ব্রিলিয়ান্ট কলেজের পাঠদান কার্যক্রম স্থগিতও ঘোষণা করেছিল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডের ওই সময়ের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. মো: হারুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয় টাকার বিনিময়ে জিপিএ ৫ বিক্রির বিষয়ে প্রতারণার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে উত্তরার ন্যাশনাল পাবলিক কলেজ ও দ্য ব্রিলিয়ান্ট কলেজের পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, জিপিএ ৫ বিক্রি চক্রের মূল হোতা উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অদ্বৈত কুমার রায়কে ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে বদলি করা হয়। কিন্তু সেখানে তিনি ক্লাস নিতে পারেননি। শিক্ষার্থীরা তার দুর্নীতির সংবাদ জানতে পেরে তাকে ও তার পাঠদান প্রত্যাখ্যান করে। পরে তিনি নায়েমে চার মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে বিদেশে চলে যান । জিপিএ ৫ বিক্রি নিয়ে এত বড় অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার পরেও অদ্বৈতর বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এ দিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব শাহেদুল খবিরের বিরুদ্ধেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বরং তিনি দিপু মনির নিজস্ব লোক পরিচয় দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে লোভনীয় পদেই আসন নিয়েছেন। তবে গত ৫ আগস্টের পর তাকে মাউশি থেকে তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজে এবং অতি সম্প্রতি তাকে আবার ফেনী সরকারি কলেজে বদলি করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com