লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র গ্রুপ হিজবুল্লাহ সদস্যদের ব্যবহৃত পেজার বিস্ফোরিত হয়ে কমপক্ষে নয়জন নিহত এবং ২,৮০০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছেন। লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ তথ্য জানিয়েছেন। এই তৎপরতার জন্য ইসরাইলকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স ছুটতে থাকে এবং লেবাননের রেডক্রস, চিকিৎসক ও নার্সদের দ্রুত হাসপাতালে আসতে আর অসামরিক লোকজনকে রক্ত দান করতে বলে। লেবাননের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব মৃত্যু ও বিপুলসংখ্যক লোক হতাহত হওয়ার কারণ হচ্ছে পেজারগুলোর বিস্ফোরণ। তারা জনসাধারণকে তাদের কাছে রাখা কোনো পেজার ব্যবহার করতে নিষেধ করছেন।
ইরানের সরকারি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে যে বিস্ফোরিত পেজারে যারা আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে লেবাননে নিযুক্ত তাদের রাষ্ট্রদূত মুজতবা আমানিও রয়েছেন।
মঙ্গলবার লেবাননের হিজবুল্লাহ এই বিস্ফোরণের জন্য ইসরাইলকে দোষারোপ করেছে। তবে ইসরাইল সরকারিভাবে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি।
অন্তত দুজন হিজবুল্লাহ সদস্য নিহত হয়েছেন বলে খবরে বলা হয়েছে। লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিরাজ আবিয়াদ বলেন, একটি বালিকাও নিহত হয়।
ইসরাইলি বিশ্লেষকরা বলেছেন, প্রায় এক বছর আগে ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ হওয়ার পর হিজবুল্লাহ এবার সবচেয়ে বড় নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়ল, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরাইলের গোয়েন্দা সক্ষমতাকে প্রমাণ করলো।
লেবাননের সংবাদপত্র বলেছে, পেজারগুলো তূলনামূলকভাবে নতুন ছিল এবং কয়েক মাস আগে সেগুলো হিজবুল্লাহকে দেয়া হয়েছিল। ইসরাইল যেহেতু সেলফোন ট্র্যাক ও রেকর্ড করতে সক্ষম। তাই তারা পেজার ব্যবহার করছিল।
ইসরাইলের বিরুদ্ধে আক্রমণের এই অভিযোগ ইসরাইল ও লেবাননের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে তুলেছে। ইসরাইলি সীমান্তের কাছে স্থানীয় কর্মকর্তারা সেখানকার অধিবাসীদের বোমা-আশ্রয়স্থলে থাকার কথা বলেছেন এই আশঙ্কায় যে হিজবুল্লাহপাল্টা আক্রমণ চালাতে পারে।
মঙ্গলবার দিনে আরো আগের দিকে ইসরাইল গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরো সম্প্রসারিত করার ঘোষণা করে যাতে করে ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা তাদের ঘর বাড়িতে ফিরে যেতে পারে। ইসরাইল লেবানন সীমান্তবর্তী এলাকায় হিজবুল্লাহর সাথে সংঘাতের জন্য তারা তাদের আবাসস্থল ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এক লাখেরও বেশি লোক সীমান্তে লেবাননের দিক পালিয়ে গেছে।
এখন পর্যন্ত লড়াইটি গাজাকে কেন্দ্র করেই হচ্ছে, যেখানে হামাসের সাথে সম্পৃক্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে যে সেখানে ৪১ হাজারেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের এই সংখ্যার মধ্যে ১৭ হাজার উগ্রবাদীও রয়েছে বলে ইসরাইল বলছে।
তবে এখন লেবাননের দিকেই মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো ইসরাইলি কর্মকর্তা স্থল অভিযান চালিয়ে হিজবুল্লাহকে সীমান্ত থেকে সরিয়ে দেয়ার এবং ইসরাইলি নাগরিকদের তাদের বাড়িতে ফিরে আসার কথা বলছেন ।
হিজবুল্লাহ বলেছে, তাদের হামলাগুলো বন্ধ করবে যদি গাজায় ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র অভিহিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। কয়েক সপ্তাহ আগে এ ধরণের চুক্তি হবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার উভয় পক্ষই কঠোর অবস্থানে চলে গেছে।
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজেদ আনসারি বলেছেন, আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখনই যেকোনো সময়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সময় আসে, আমরা নিশ্চিতভাবেই আশান্বিত বোধ করি এবং বর্তমান সময়ে আমাদের সাধ্যমতো আমরা সব রকমের যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। কাজেই ঠিক এখনই কোনো চুক্তির সম্ভাবনা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাই না, কিন্তু আমি আপনাদের বলতে পারি যে আমরা আশাবাদী এবং আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো।’
সূত্র : ভিওএ
Leave a Reply