1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৪২ পূর্বাহ্ন

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মানছেন না প্রাণিসম্পদের প্রকল্প পরিচালক!

ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা এবং সচিবের নির্দেশনার পরও পিপিআর রোগ নির্মূল এবং ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের আওতায় এফএমডি টিকা ক্রয়ের দরপত্রে বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেয়ার শর্ত তোলেননি প্রকল্প পরিচালক (পিডি)। বরং পিপিআর রোগ নির্মূল ও ক্ষুরা রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের পিডি ডা: অমর জ্যোতি চাকমা স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সিন্ডিকেটকে প্রায় শত কোটি টাকার এই টেন্ডার পাইয়ে দিতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবরের জেরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বরাবর অভিযোগ জমা পড়ে। সেই অভিযোগের আলোকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকে বলা হয়। কিন্তু পিডি কোনো অবস্থাতেই দরপত্র সংশোধন করবেন না বলে ঘোষণা দেন। ভুক্তভোগীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট দরপত্র জমা দেয়ার সময় বাড়িয়ে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আবেদন অনুযায়ী তিনি অযাচিত শর্তসমূহ তুলে নেয়ার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি।

উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো অভিযোগের তথ্যানুযায়ী প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে এখনো সক্রিয় রয়েছে পতিত স্বৈরাচার সরকারের কৃষিবিদ নেতা আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের সিন্ডিকেট। সম্প্রতি এ সিন্ডিকেট প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের শত কোটি টাকার ভ্যাকসিন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগে বলা হয়, দেশের চারটি জেলার জন্য জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পিপিআর ও ক্ষুরা রোগ ভ্যাকসিন আমদানির দরপত্র নিয়ন্ত্রণে নিতে চাওয়া। ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে বাহাউদ্দিন নাসিমের নিজস্ব সিন্ডিকেটকে কাজ দিতে বারবার শর্ত সংযোজন-বিয়োজন করা। এই চক্র একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র পাইয়ে দেয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে জেলায় জেলার হাজার হাজার পশু ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এরই মধ্যে ভুক্তভোগীরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দিয়ে দরপত্রের ‘বিশেষ সুবিধা শর্ত’ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। ‘বিশেষ সুবিধা’ দেয়ার লক্ষ্যে দরপত্র সিডিউলে উল্লিখিত শর্তাবলি পরিবর্তন করে সংশোধনীর লক্ষ্যে নির্দেশনা দেয়ার আবদেন করেছেন ভুক্তভোগীরা। জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের অধীনে এফএমডি ভ্যাকসিন কেনার জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। পিপিআর রোগ প্রতিরোধ এবং ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এফএমডি ভ্যাকসিন কেনার লক্ষ্যে এই দরপত্র আহ্বান করেন। প্রথমে দরপত্র জমার শেষ দিন ছিল গত ২৩ জুন। কিন্তু বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে (সাবেক এমপি আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দিন নাসিমের) সুবিধা দিতে মোট চারবার দরপত্রে অপ্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়। যার মধ্যে দ্বিতীয়বার দরপত্র জমার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি প্রস্তুত করার সুবিধা দিতে এবং তৃতীয় ও চতুর্থ বার শর্তাবলি পরিবর্তনের মাধ্যমে সময় বৃদ্ধি করা হয়। যার শেষ তারিখ ছিল গত ২৩ জুন, ৩ জুলাই, ১৮ জুলাই ও ১২ আগস্ট। সর্বশেষ দরপত্র দাখিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২৭ আগস্ট।

মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও ভোলা জেলায় ছাগল, ভেড়া, গরু ও মহিষের ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধের জন্য এই ভ্যাকসিন অত্যন্ত জরুরি হলেও, বিশেষ ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে পুরো দরপত্র প্রক্রিয়াটি দফায় দফায় পিছিয়ে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, টেকনো ড্রাগ নামক প্রতিষ্ঠানটির যথাযথ অভিজ্ঞতা না থাকলেও তাদের সুবিধা দিতে ভেটেরিনারি বহির্ভূত ফার্মাসিউটিক্যাল (ড্রাগ) ও বায়োলজিস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। টেকনো ড্রাগের ভেটেরিনারি মেডিসিন অথবা ভ্যাকসিন সরবরাহের অভিজ্ঞতা না থাকলেও পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরে বায়োলজিস (কন্ডম/মায়াবড়ি ইত্যাদি জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী) সরবরাহের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ছাড়া ভ্যাকসিনের সেলফ লাইফ বিষয়ে ওআইই রেগুলেশন অনুযায়ী উৎপাদনের তারিখ থেকে ন্যূনতম ২৪ মাসের সেলফ লাইফ থাকতে হবে, কিন্তু বিশেষ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ভ্যাকসিনের সেলফ লাইফ মাত্র ১৮ মাস। তাই সংশোধনীর মাধ্যমে ২৪ মাসের পরিবর্তে ১৮ মাস করা হয়েছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও প্রাণী স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, এ বিষয়ে যারা ভেটেরিনারি ভ্যাকসিন সরবরাহে অভিজ্ঞতার শর্ত রাখাই যথেষ্ট। কিন্তু তা না করে বায়োলজিস অন্তর্ভুক্ত করা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।

ইতোমধ্যে এই অনিয়মযুক্ত দরপত্র বাতিল করে দরপত্রটি সবার অংশগ্রহণের জন্য উন্মুক্ত করার দাবিতে বেশকিছু শর্ত পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠেছে। এসব দাবিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছেন কয়েকজন আমদানিকারক।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিপিআর প্রকল্পের অধীন এর আগে জিডি-৩ প্যাকেজে পিপিআর ল্যাবের ইকুইপমেন্ট ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেখানে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দলিল কিনে চারটি প্রতিষ্ঠান জমা দেয়। কিন্তু দরপত্রে বিশেষ শর্ত দেয়ায় মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান রেসপনসিভ হয় এবং তাকেই এক কোটি ছয় লাখ ৯২ হাজার ২৪ টাকার কার্যাদেশ দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে পিডি সব মালামাল বুঝে না নিয়েই ঠিকাদারের সাথে আঁতাত করে বিল পরিশোধ করে টাকা আত্মসাৎ করেন। যা সরেজমিনে তদন্ত করলে প্রমাণিত হবে। একইভাবে কুড়িগ্রাম জেলার জন্য ৮১ লাখ ৫১ হাজার টাকার হেলথ কার্ড ছাপানোর জন্য এবং ২০ লাখ ২৯ হাজার ৯৬১ টাকার পোস্টার ৬৪টি জেলায় সরবরাহ করার কার্যাদেশ দেয় রুপা প্রিন্টাসকে। কিন্তু কুড়িগ্রামের জন্য ৫০ শতাংশ হেলথ কার্ড এবং কোনো পোস্টার না ছাপিয়েই ঠিকাদারের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে বিল পরিশোধ করে এ টাকা আত্মসাৎ করেন পিডি অমর জ্যোতি চাকমা। সর্বশেষ মহাখালীস্থ এলআরআই ল্যাবে বিভিন্ন কনস্ট্রাকশন কাজ করার জন্য একটি সাপ্লাই প্রতিষ্ঠানকে গত ৩১ জুলাই ৮৬ লাখ ৫৯ হাজার টাকার কার্যাদেশ দিয়েছেন এই পিডি । ওই ঠিকাদারের পূর্বের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও ঠিকাদার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ হুমায়নের আত্মীয় হওয়ায় কাজ দেয়ার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। অথচ ওই কাজ করতে সর্বসাকুল্যে ৩০-৩৫ লাখ টাকার বেশি প্রয়োজন হবে না এবং ডিপিপিতেও ওই কাজের সংস্থান নেই বলে জানা যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিপিআর রোগ প্রতিরোধ এবং ক্ষুরা রোধ প্রতিরোধ প্রকল্পের আওতায় এর আগে ৯৬ কোটি টাকার এফএমডি কেনা হয়েছে। বাহাউদ্দিন নাছিম সিন্ডিকেটের ওয়ান ফার্মা এই ভ্যাকসিন আমদানি করে। একইভাবে প্রথমে ১২ কোটি ও পরে ১৩ কোটি মোট ২৫ কোটি টাকার ছাগলের ভ্যাকসিন পিপিআর টেন্ডার নিয়েও অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। দুদকে এ নিয়ে মামলা চলমান বলে জানা যায়।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র আরো জানায়, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সামনে ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। সেখানে ছাত্রদের সন্ত্রাসী, জামায়াত-শিবির ও বিএনপি জঙ্গি হিসেবে যারা স্লোগান তোলেন তাদের অন্যতম এই পিডি অমর জ্যোতি চাকমা। আওয়ামী রাজনীতি করার সুবাদে বিগত সরকারের আমলে অনিয়ম দুর্নীতি করে পার পেয়ে যান। তবে, আগের সরকারের ভুত এখনো মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরে বহাল থাকায় তাদের ছত্রছায়ায় এখনো বহাল তবিয়তে আছেন এই কর্মকর্তা।
এসব বিষয়ে কথা বলতে অধিদফতরের মহাপিরচালক ডা: রেয়াজুল হক জসিম ও পিডি অমর জ্যোতি চাকমাকে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com