রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় রংপুর সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধান রায় হারাসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪ জনের নাম পাওয়া গেছে।সংঘর্ষে আহত হয়েছে আরও অর্ধশতাধিক। আহতদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন পরশুরাম থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারাধান রায় হারা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খসরু, খাইরুল ইসলাম ও মাসুম। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুছ আলী ৫ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ রবিবার সকাল ১১টার দিকে নগরীর বেতপট্টিস্থ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জড়ো হতে থাকেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা জাহাজ কোম্পানী মোড়ে অবস্থান নেয়। অপরদিকে জিএল রায় রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী অবস্থান নেয়। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পায়রা চত্বর কালীবাড়ী মন্দিরের সামনে কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা ও তার ভাগ্নে এবং সিটি বাজার এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা খসরু, খাইরুল ইসলাম ও মাসুমের মৃত্যু হয়। সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। পরে আন্দোলনকারীরা রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে ১৯ জুলাই রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এবং জেলা ছাত্রলীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে কোন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়নি। বর্তমানে রংপুর জিলা স্কুল মোড় থেকে রংপুর প্রেসক্লাব পর্যন্ত পুরো সড়ক জুড়ে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সর্বাত্মক আন্দোলনে রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষক, অভিভাবক, আইনজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ।
অপরদিকে অসহযোগ আন্দোলনের কারণে নগরীর দোকানপাট, শপিং মলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। সীমিত আকারে রিকশা, অটোরিকশা চলাচল করছে। আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সহিংসতার আতংক ছড়িয়ে পড়ায় খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না। এ রিপোর্ট পাঠানোর সময় পর্যন্ত রংপুর নগরী জুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এদিকে রংপুর মহানগর এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলায়আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশের খবর পাওয়া গেছে। বদরগঞ্জ উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বাসভবনে হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় আন্দোলনকারীরা রংপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আহসানুল হক চৌধুরী টুটুল, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফজলে রাব্বি সুইট ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া আন্দোলনকারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর ও অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল-গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন।
এদিকে পীরগঞ্জ আওয়ামী লীগের অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ সময় ১৫-২০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এছাড়া পীরগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাব ভাঙচুর করেন আন্দোলনকারীরা।
মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়, উপজেলা নির্বাচন অফিস ও মিঠাপুকুর পৌরসভা ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া বেগম রোকেয়া অডিটোরিয়াম, উপজেলা পরিষদের মিলনায়তন ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
এদিকে আন্দোলনকারীরা মিঠাপুকুর থানায় হামলা চালাতে গেলে পুলিশ আন্দোলনকারীদের সাথে একত্বতা প্রকাশ করায় তাদেরকে হামলা না করে থানার সামনে রাখা কয়েকটি গাড়ি ও ১৫-২০টি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
রংপুর গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিস ও গংগাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে ১৫-২০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
Leave a Reply