কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে খাইয়ে সেই ছবি প্রকাশ করায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
এ নিয়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘ডিবি অফিসে যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর খাবার টেবিলে বসাবেন। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না।’
রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
তবে এবারই প্রথম নয়, ডিবি কার্যালয়ে ভাত খাওয়ানোর বিষয়টি এর আগেও বহুবার প্রকাশ্যে এসেছে। প্রতিবারই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
বিভিন্ন সময়ে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের সমস্যার কথা জানাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে আসেন। তাদের মধ্যে অনেককে আবার ডিবি কার্যালয়ে ভাত খাইয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
বিভিন্ন সময়ে এসব ছবি ভাইরালের পর ডিবি কার্যালয়কে ‘ডিবির ভাতের হোটেল’ বলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে মন্তব্য করেছেন। তবে এসব মন্তব্যকে ডিবি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। ডিবি বলছে, ডিবির ভাতের হোটেলের বিষয়টি মানুষ রসবোধ থেকে বলছে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বক্তব্য- ‘এটা রসবোধের প্রশ্ন। বাঙালি একটা রসবোধসম্পন্ন জাতি। সাহিত্যে রসবোধের প্রয়োগ আমাদের মনের খোরাক জোগায়। আমি মনে করি, এটা রসবোধপ্রবণ একটি বিষয় যে ডিবি ভাত খাওয়ায়। আমরা তো আসলে কাউকে ডেকে এনে খাওয়াই না। কেউ যদি কাজের জন্য আমাদের কাছে আসে, তার কাজটা করে দেওয়ার চেষ্টা করি। এর পাশাপাশি লাঞ্চ টাইম হলে লাঞ্চের অফার করি। সে যদি অফার গ্রহণ করেন তাহলে খেয়ে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর আমরা তো ব্রিটিশ পুলিশ না। আমরা এখন স্বাধীন দেশের পুলিশ। একটা সময় থানায় যেতে মানুষ ভয় পেতো। আর এখন আমি একজন ডিআইজি, আমার এখানেই শত শত লোক কোনও না কোনও কাজে আসছে। সাংবাদিকরাও বলেন ডিবি একটি আস্থার জায়গা। ডিবি যে মানবিক পুলিশিং করে, এটার উদাহরণ হচ্ছে যে আমরা মানুষকে আপ্যায়ন করি।’
ডিবির হারুন আরও বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে কিন্তু আছে কোনও মানুষ যদি কারও বাড়িতে আসে তাকে আপ্যায়ন করতে হয়। আমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ, আমরা যদি কাউকে আপ্যায়ন করি এইটা তো খারাপ কিছু না। আর যারা রসবোধ থেকে ভাতের হোটেল বলে তারাও কিন্তু ভালো অর্থে বলে, খারাপ অর্থে বলে না। এতে আমরা উৎসাহিত হই। মানুষ আসছে, কাজ করে যাচ্ছে এবং খেয়ে যেতে পেরে আমাদের প্রশংসাও করছে। লাঞ্চের টাইমে খেয়ে যেতে পারলে মানুষ খুশি হয়। অপরাধীদের গ্রেফতার করি, পাশাপাশি মানবিক পুলিশ হিসেবে মানুষকে আপ্যায়ন করি।’
সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়ে খাইয়ে সেই ছবি প্রকাশ করলে তা মুহুর্তেই ভাইরাল হয়। পরের দিন ডিবিতে ভাতা খান সমন্বয়কদের স্বজনরা।
এর আগে প্রথম খাবার খেয়ে আলোচনায় আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি ছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীকেও দুপুরের খাবার খাওয়ান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
ভাত খেয়েছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল ইসলাম ওরফে হিরো আলম।
ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস ও গানবাংলা (জিবি) টিভির প্রধান নির্বাহী (সিইও) কৌশিক হোসেন তাপস সমঝোতার পর ডিবিতে খাবার খান।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে মধ্যাহ্নভোজন করেন।
হারুন অর রশীদের সঙ্গে ভাত খায়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর।
ডিবি কার্যালয়ে ভাত খেয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল।
ডিবি কার্যালয়ে আপ্যায়ন করা হয় সুড়ঙ্গ চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিক সহ অনেকেই খেয়েছেন ডিবির ভাতের হোটেলে।
Leave a Reply