সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ম্যানেজমেন্ট স্টাডিস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিম। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লেখা এক পদত্যাগপত্রে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে জমা দেওয়া পদত্যাগপত্রে জাহিদুল করিম উল্লেখ করেন, ‘আমি বিগত প্রায় ১৪ বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিস বিভাগে শিক্ষকতা করছি। দেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদাসীনতা ও শিক্ষকদের দলীয় মনোভাব আমাকে ব্যথিত করেছে। আমি সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেছি এবং শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সর্বদা পাশে থেকেছি।’
তিনি লেখেন, ‘কোটা সংস্কারের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর মূল্যবান জীবন দিতে হয়েছে। সরকার চাইলে দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে পারত, তাহলে এত প্রাণহানি হতো না।’
পদত্যাগপত্রে এ শিক্ষক লেখেন, ‘যে সব শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, তাদেরকে নিয়ে তাদের পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। সন্তান হারানোর বেদনায় তারা আজ দিশেহারা। তাদের সাথে সাথে সমগ্র জাতি আজ শোকাহত। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবি যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তা এই জাতির জন্য একটি কালো অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং কিছু সংখ্যক প্রতিবাদী শিক্ষকদের রক্তাক্ত করার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।’
সবশেষে জাহিদুল করিম লেখেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড দেখেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শিক্ষকদের আমি নির্লিপ্ত থাকতে দেখেছি। শিক্ষকদের ভূমিকা আজ জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। রাজনৈতিক দলীয়করণের কারণে শিক্ষক সমাজের বিবেক লোপ পেয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। শহীদ সকল শিক্ষার্থী এবং আহত সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা প্রকাশ করছি এবং তাদের জন্য দোয়া করছি। সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতাবোধকে জাগ্রত করতে আমি সহযোগী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিস বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চাকরি হতে স্বেচ্ছায় অব্যহতি ঘোষণা করছি।’
সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিম বর্তমানে শিক্ষাছুটিতে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। নিজের ফেসবুক ওয়ালে পদত্যাগপত্রটি পোস্ট করেছেন তিনি। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাড়া দেননি।
শিক্ষকের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, ‘পদত্যাগপত্রটি আমি হাতে পেয়েছি। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে পারব। তবে তার বিরুদ্ধে অনেক আগে একটি অভিযোগ ছিল। সে অভিযোগের তদন্তও চলমান ছিল। অভিযোগ প্রমাণের আগে-ভাগেই তিনি হয়তো পদত্যাগ করার চেষ্টা করছেন।’ তবে কবে নাগাদ তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বা সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগটি কি সেটা উল্লেখ করেননি উপাচার্য।
Leave a Reply