দেশজুড়ে ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন। সেই সাথে শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আন্দোলনও আরো জোরদার হচ্ছে। ফলে দুই ইস্যুতে শিক্ষাঙ্গনে বিরাজ করছে অচলাবস্থা। শিক্ষাঙ্গনের এই আন্দোলন এখন রূপ নিচ্ছে রাজপথের আন্দোলনে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিক্ষুব্ধ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন স্থিমিত করতে না পারলে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সৃষ্টি করবে দীর্ঘমেয়াদের অচলাবস্থা।
দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহম্মদ আলমগীর মনে করেন, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বন্ধে এখনি উদ্যোগ নেয়া জরুরি। অন্যথায় উচ্চশিক্ষায় যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে তা দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামানো বা সমাধান করা কোনোটিই ইউজিসির এখতিয়ারের মধ্যে নেই। শিক্ষকদের বিষয়টি সরাসরি একটি আর্থিক সংক্রান্ত। এটি কেবল সরকারের সিদ্ধান্ত বা পলিসির ব্যাপার। অন্যটি আদালতের ব্যাপার। তাই ইউজিসি চাইলেও এ বিষয়ে সমাধানের কোনো উদ্যোগ নিতে পারে না। তবে শিক্ষাঙ্গনে কোনো অবস্থায় অচলাবস্থা তৈরি হোক সেটা কোনো মতেই কাম্য নয়।
এ দিকে হাইকোর্ট কর্তৃক প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের আদেশের বিরুদ্ধে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও। গতকাল শনিবার পঞ্চম দিনের মতো রাজপথে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, আজ রোববার থেকে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সর্বাত্মক ব্লকেড (অবরোধ) পালন করা হবে। এ কর্মসূচির ফলে সব ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক অবরোধ করবেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ট্রেন অবরোধেরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ফাহিম গতকাল বিকেলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আজ রোববার থেকে শুধু রাজধানী ঢাকা নয় এর পাশাপাশি বাইরের জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করবে। তিনি আরো বলেন দাবি আদায়ে প্রয়োজনে আমরা হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করব। মনে রাখতে হবে এটা শুধু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়, শিক্ষক-অভিভাবকদেরও আন্দোলনে নেমে আসতে হবে।
অপর দিকে শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জানিয়েছেন, শিক্ষকদের দাবি আদায় হওয়া, না হওয়ার ইস্যুতে আমার কিছু করার নেই। এটা সরকারের নির্বাহী আদেশে হয়েছে। এটার কোনো পরিবর্তন, পরিমার্জন করতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তবে, তাদের আন্দোলনের দিকে নজর রাখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন শিক্ষকদের আন্দোলন প্রশমিত করার দায়িত্ব নিয়েছে সরকারের শীর্ষ মহল। এটা সরকারের পলিসির বিষয়। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে যুক্ত আন্দোলন এর আগে কখনও হয়নি। তাই এ আন্দোলনকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সারা দেশে উচ্চ শিক্ষাঙ্গনে একসঙ্গে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এর আগে এভাবে কখনও হয়নি। তাই এটাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তার মতে, আন্দোলন যদি এখনি থামানো না হয় তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে অচলাবস্থা তৈরি করবে। আর এই গ্যাপ পূরণে করোনার সময়কার চেয়েও আরো বেশি হয়তো শিক্ষার্থীদের ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে সরাসরি সক্রিয় কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, কোটা পুনর্বহালের আদেশ আপিল বিভাগ সরাসরি রায় দেয়নি। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া রায় আপাতত বহাল রেখেছেন। একই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (নিয়মিত আপিল) করতে বলেছেন আদালত। তাই বিষয়টি এখনও বাতিল হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই আমরা আন্দোলন থেকে সরে যাব না।
Leave a Reply