ঠাণ্ডা ও গরম উভয়ই আল্লাহ তায়ালার অপার নিয়ামত। মানুষের জন্য ঠাণ্ডা ও গরম দুটোই জরুরি। তবে অতি ঠাণ্ডা ও অতি গরম ক্ষতিকর, অসহনীয় ও দুর্বিষহ। তাই মানুষসহ সব প্রাণী অতি ঠাণ্ডা ও অতি গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়।
গরম ও ঠাণ্ডা কেন হয় : সাহাবায়ে কেরাম মহানবী সা:-কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল সা:! ঠাণ্ডা ও গরম কেন হয়? মহানবী সা: প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘ইন্না শিদ্দাতাল হাররি মিন ফাইহি জাহান্নাম’ অর্থাৎ-গরমের তীব্রতা দোজখের টগবগানির অংশ। দোজখ আল্লাহ তায়ালার কাছে অভিযোগ করে যে, তীব্র উষ্ণতায় আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলছে। তখন আল্লাহ তায়ালা দোজখকে দুনিয়ার দিকে দু’টি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি প্রদান করেন। একটি নিঃশ্বাস শীতকালে, আরেকটি গ্রীষ্মকালে। এ নিঃশ্বাসের করণেই তোমরা গরম ও ঠাণ্ডা অনুভব করো। (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত, পৃষ্ঠা-৬০)
সূর্য উষ্ণতার উৎস : উষ্ণতা ও উত্তাপের উৎস হলো সূর্য। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আমি (সূর্যকে) অতি উজ্জ্বল ও উত্তপ্ত প্রদীপ বানিয়েছি।’ (সূরা নাবা-১৩) সূর্যের ব্যাস পৃথিবীর ব্যাস থেকে ১০৯ গুণ এবং তার আয়তন পৃথিবীর আয়তনের তিন লাখ ৩৩ হাজার গুণ বড়। সূর্যের তাপমাত্রা এক কোটি ৪০ লাখ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। সূর্য পৃথিবী থেকে ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দূরে অবস্থিত। তা সত্ত্বেও তার রশ্মি এতই তেজস্বী যে, তার দিকে খালি চোখে তাকালে চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া ও দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা অবধারিত। সূর্যের তাপ এতই প্রচণ্ড যে, পৃথিবীর কোনো কোনো অংশে তার প্রভাবে তাপমাত্রা ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত পৌঁছে যায়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আর তিনি তোমাদের জন্য (চন্দ্রকে আলো ও সূর্যকে প্রদীপ করে) সৃষ্টি করেছেন পর্যায়ক্রমে।’ (সূরা নূহ-১৪) আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন- ‘সেই মহান আল্লাহই সূর্যকে উজ্জ্বল ভাস্বর বানিয়েছেন এবং চন্দ্রকে দিয়েছেন ঔজ্জ্বল্য।’ (সূরা ইউনুস-৫)
পৃথিবীর গরম : হাদিসের ভাষ্যমতে, সূর্যের সর্বাধিক উষ্ণতার দিকটি উপরের দিকে আর তুলনামূলক কম উষ্ণতার দিকটি নিচের দিকে রাখা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আর আল্লাহ তায়ালা মহাকাশে সংস্থাপন করেছেন একটি প্রদীপ ও আলো বিকিরণকারী চাঁদ। (সূরা ফুরকান-৬১) সূর্য একটি অত্যন্ত বাস্তব, দৃঢ় প্রত্যয়ের জিনিস। কেননা, তা বস্তুগত, চক্ষু ও মানবীয় অনুভূতির আওতার অন্তর্ভুক্ত। তাপ ও ঠাণ্ডার পার্থক্য সৃষ্টিকারী। আর তার ওপর নিদর্শন বা পথপ্রদর্শকরূপে প্রতিষ্ঠিত সূর্য চর্মচক্ষে দৃশ্যমান। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আর তার ওপর সূর্যকে নিদর্শন বা পথপ্রদর্শকরূপে দাঁড় করে দিয়েছি।’ (ফুরকান-৪৫) সূর্য দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা একটি বিরাটকায় নক্ষত্র। লেলিহান শিখা বিস্তারপূর্বক তীব্র আলো ও তাপ বিস্তার করে জ্বলতে থাকা একটি অগ্নিপিণ্ড। সূর্য পৃথিবীর তুলনায় ১২ লাখ গুণ বড়।
সূর্য ও চন্দ্রের কাজ : আল্লাহ তায়ালা সূর্য ও চন্দ্রকে আকাশমণ্ডলে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিরাট ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়ে। সূর্যের রয়েছে তাপ, যা সৃষ্টিকুল তথা বিশ্ববাসীর জন্য একান্ত অপরিহার্য। সেই সাথে রয়েছে শক্তি ও আলো। আর চাঁদ সূর্য থেকেই আলো গ্রহণ করে। সূর্যের গতির অবস্থা উদয়, অস্ত, মধ্যাহ্ন, পশ্চিমে ঢলে পড়া থেকে যেন মানুষ সালাতের সময় কিবলার দিক নির্ধারণ করতে এবং পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ এই দিকগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়। সূর্য একটি দাউদাউ করা গ্যাসপুঞ্জ।
তার পরিধির পরিমাণ পৃথিবীর পরিধির তুলনায় মিলয়ন গুণ বেশি। সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসে প্রতি সেকেন্ডে ৩০ লাখ কিলোমিটার গতিতে। ৫০০ সেকেন্ডে সে আলো পৃথিবীতে সম্পূর্ণরূপে এসে যায়। সূর্যের অভ্যন্তরভাগে সূর্যের তাপ শুধু ১০ মিলিয়ন ডিগ্রি। পৃথিবীর বুকে যা কিছু বেঁচে আছে, তা সবই এই উত্তাপ পেয়েই বেঁচে আছে, বেঁচে থাকে। এই উত্তাপই মহাশূন্যে মেঘের ঘনঘটা গড়ে তোলার কাজ করে। পৃথিবীর সাগর-মহাসাগর থেকে পানিকে বাষ্পে পরিণত করে উচ্চতর স্তরে নিয়ে যায় এবং সেখানেই তা জমে গিয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। এই মেঘ নিংড়ানো পানি ভূ-পৃষ্ঠে বৃষ্টির আকারে পতিত হয়।
আখিরাতের গরম : মহানবী সা: বলেছেন, ‘বিচার দিবসে সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে, তা হবে তাদের থেকে এক ফরসাখ (তিন মাইল) দূরে। ব্যক্তির আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে অবস্থান করবে। কারো ঘাম হবে টাখনু সমান, কারো হাঁটু সমান, কারো কোমর সমান, কারো মুখ সমান।’ (মুসলিম, মিশকাত, পৃষ্ঠা-৪৮৩) মহানবী সা: আরো বলেছেন, ‘হাশরের ময়দানে আল্লাহ তায়ালার আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না। এ ছায়ায় মাত্র সাত শ্রেণীর মানুষ আশ্রয় পাবে।’
১. ন্যায়পরায়ণ বাদশা; ২. ওই যুবক যে নিজের যৌবনকে আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে অতিবাহিত করেছে; ৩. ওই ব্যক্তি যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে যুক্ত থাকে, যখন মসজিদ থেকে বের হয়, আর যতক্ষণ না আবার মসজিদে ফিরে আসে; ৪. আর ওই দু’ব্যক্তি যারা পরস্পরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসে, উভয়ে তাঁরই সন্তুষ্টির জন্য একত্রিত হয় এবং তারই সন্তুষ্টির জন্য পৃথক হয়; ৫. আর যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ৬. ওই ব্যক্তি যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত ও সুন্দরী নারী কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য আহ্বান করে, আর তখন সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং ৭. ওই ব্যক্তি যে দান করে সঙ্গোপনে, এমনকি তার বাম হাত জানে না, তার দক্ষিণ হাত কী দান করে।’ (বুখারি) মহানবী সা: আরো বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মানবমণ্ডলীকে লাল-শ্বেত মিশ্রিত এমন এক সমতল ভূমিতে একত্রিত করা হবে যেন তা সাফাই করা আটার রুটির মতো। সেই জমিনে কারো (বাড়িঘর ও অন্য কিছুর) চিহ্ন থাকবে না।’ (বুখারি, মুসলিম) আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তিনি জমিনকে এমন সমতল রুক্ষ ধূসর ময়দানে পরিণত করবেন যে, তুমি তাতে কোনো উঁচু-নিচু এবং সঙ্কোচন দেখতে পাবে না।’ (সূরা ত্বহা : ১০৬-১০৭) মানুষ পানির জন্য তখন হাহাকার করবে; কিন্তু কোথাও পানি পাবে না। হাউজে কাউসারের পানি ছাড়া কোনো পানির ব্যবস্থা থাকবে না। একমাত্র নেককাররাই সেই পানি পান করতে পারবে।
লেখক :
প্রধান ফকিহ, আল-জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।
Leave a Reply