দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সুস্থতার হার বেড়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৯০৪ জন। এখন করোনা থেকে মুক্তি মিলেছে ৭২ হাজার ৬২৫ জনের, যা মোট রোগীর ৪৪ দশমিক ৭২ শতাংশ।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, দেশে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা শুরু হয় চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি। পরীক্ষা শুরুর ৪৮ দিনের মাথায় গত ৮ মার্চ প্রথম তিনজন করোনা রোগী শনাক্তের কথা জানায় আইইডিসিআর। ওই দিন থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত ১২০ দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে এক লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৭২ হাজার ৬২৫ জন এবং মারা গেছেন দুই হাজার ৫০ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৪ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে সবচেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে জুন মাসে। গতকাল রবিবার দুপুর পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭২ হাজার ৬২৫ জন, এর মধ্যে জুন মাসে ৪৯ হাজার ৮৪৪ জন সুস্থ হয়েছেন, যা মোট সুস্থতার ৬৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তবে ঢাকা বিভাগে সুস্থতার হার ৭৫ দশমিক ৭১ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৮২ শতাংশ রোগীর লক্ষণ-উপসর্গ মৃদু থাকে। তাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। তারা বাসায় চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। আর বাকি ১৮ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে। যারা বাড়িতে চিকিৎসাসেবা নেবেন তাদের পুরো বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নজরদারি করা হবে। কিন্তু সুস্থ হওয়ার বিষয়টি খুব একটা নজরদারিতে নেই।
জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের প্রথম দুই মাসে মার্চ ও এপ্রিলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন, তাদের সব রোগীর তথ্য-উপাত্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে ছিল না। এ কারণে মার্চ ও এপ্রিল মাসে প্রতিদিন ১ থেকে সর্বোচ্চ ১১ জন পর্যন্ত রোগী সুস্থ হওয়ার তথ্য জানিয়ে আসছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় চলতি বছরের ৮ মার্চ। ওই দিন থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত শনাক্ত হয় ৫১ জন, মারা যায় ৫ জন এবং সুস্থ হয় ২৫ জন। গত ১ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩৫ সুস্থ হয়েছেন। অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন ১৬০ জন। এর পর মে মাসের ১ তারিখে ১৪ এবং ২ তারিখে ৩ জন সুস্থ হয়ে ওঠায় সুস্থতার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭৭ জনে। হঠাৎ করে ৩ মে সুস্থতার তালিকায় নাম যুক্ত হয় ৮৮৬ জন। এক লাফে সুস্থতার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৬৩ জনে। এর পর পর থেকে প্রতিদিন সুস্থতার তালিকায় যুক্ত হতে থাকে ১৫০ থেকে ৩০০ রোগীর নাম। জুন মাসের প্রথম থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত ৫০০ থেকে ৯০০ জনের নাম সুস্থতার তালিকায় যুক্ত হতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে ১৫ জুন একদিনে সুস্থতার তালিকায় যুক্ত হয় ১৫ হাজার ২৯৭ জনের নাম। ফলে সুস্থ রোগীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৭৩০ জন থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ হাজার ২৬৪ জনে। দিনে দিনে সুস্থতার তালিকায় যুক্ত হয় ৭২ হাজার ৬২৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুস্থতার পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রথম তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। গতকাল পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন এক লাখ ৬২ হাজার ৪১৭ জন। প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের চার দিন পর ১২ মার্চ দুজন রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। ওই দিন থেকে গতকাল রবিবার দুপুর পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭২ হাজার ৬২৫ জন, যা মোট শনাক্ত রোগীর ৪৪ দশমিক ৭২ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুস্থতার মাসভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, জুন মাসে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯৮ হাজার ৩৩০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৪৪ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার ৫০ দশমিক ৭৩ শতাশ, যা মোট সুস্থ রোগীর ৬৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
জুলাই : গতকাল রবিবার দুপুর পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৯৩৪ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৩ হাজার। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৭৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা মোট রোগীর ১৮ শতাংশ।
মে : ৩১ তারিখ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয় ৩৯ হাজার ৪৮৬ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৬২১ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা মোট সুস্থ রোগীর ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এপ্রিল : ৩০ তারিখ পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয় সাত হাজার ৬১৬ জন। এপ্রিল মাসে সুস্থ হয়েছেন ১৩৫ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা মোট সুস্থ রোগীর শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ।
মার্চ : দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের চার দিনের মাথায় ১২ মার্চ রোগী সুস্থতার কথা জানায় আইডিসিআর। ওই দিন থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে করোনায় মারা গেছেন ২৫ জন। রোগী শনাক্ত হয় ৫১ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৯ দশমিক ১০ শতাংশ, যা মোট সুস্থ রোগীর শূন্য দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুস্থতার অঞ্চলভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, করোনা আক্রান্তদের সুস্থতার হার বেশি ঢাকা বিভাগে। গতকাল রবিবার পর্যন্ত সুস্থ হয়েছে ৭২ হাজার ৬২৫ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৫৪ হাজার ৯৮৪ রয়েছেন, যা মোট সুস্থতার ৭৫ দশমিক ৭১ শতাংশ ঢাকা বিভাগে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে সাত হাজার ১৫৯ জন, যা মোট সুস্থতার ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ; ময়মনসিংহ বিভাগে দুই হাজার ১০৮ জন, যা মোট সুস্থতার ২ দশমিক ৯০ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে এক হাজার ৯৪২ জন, যা মোট সুস্থতার ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ; খুলনা বিভাগে এক হাজার ৬৫৫ জন, যা মোট সুস্থতার ২ দশমিক ২৮ শতাংশ; সিলেট বিভাগে এক হাজার ৬৭২ জন, যা মোট সুস্থতার ২ দশমিক ৩০ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে এক হাজার ১১১ জন, যা মোট সুস্থতার ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ; রংপুর বিভাগে এক হাজার ৯৯৫ জন, যা মোট সুস্থতার ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
Leave a Reply