ইরানি প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আজ সোমবার তিন দিনের সফরে পাকিস্তান যাচ্ছেন। বিশেষ ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার এই সফরটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইসরাইলের সাথে ইরানের উত্তেজনারর আবহে সফরটি হলেও কার্যত পরস্পরের অঞ্চলে নজিরবিহীন সন্ত্রাসবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে এ দু’টি প্রতিবেশী রাষ্ট্র।
ইরানের প্রেসিডেন্টের পাকিস্তান সফরের বিষয়টি প্রকাশ করে রাধানীতে সংবাদদাতাদের ওই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, ‘তিনি আসছেন। আমরা তাদের স্বাগত জানাই। এই সফর হবে ২২,২৩ ও ২৪ এপ্রিল। আমরা স্বভাবতই এর জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
দার এই ধারণা নাকচ করে দেন যে ইসরাইলের সাথে ইরানের সাম্প্রতিক সামরিক অচলাবস্থার কারণে ইসলামাবাদ ও তেহরান রাইসির সফর বাতিল করতে পারে। দার বলেন, ‘এই ঘটনার অনেক মাস, অনেক সপ্তাহ আগে এই সফরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।’
মঙ্গলবার দার ইসলামাবাদে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফায়সাল বিন ফারহান আল সৌদের সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। সেখানে তারা উভয়ই গাজায় অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানান তবে ইসরাইলে আক্রমণ করার জন্য ইরানকে কিছু বলা থেকে বিরত থাকেন।
পাকিস্তান ও ইরানের ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অভিন্ন সীমান্ত রয়েছে । নিজ নিজ দেশে উগ্রবাদীদের আশ্রয় দেয়া এবং সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালানো থেকে বিরত রাখতে তারা যথেষ্ট কিছু করছে না বলে দেশ দুটি পরস্পরকে দোষারোপ করে।
জানুয়ারি মাসে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় বালুচিস্তান প্রদেশে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী এই দাবি করে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ চালায় যে সেখানে ইরানবিরোধী উগ্রবাদীরা লুকিয়ে আছে। ইসলামাবাদ তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করার জন্য ইরানের নিন্দা করে এবং ইরানের এলাকা থেকে পাকিস্তান বিরোধী উগ্রবাদীদের ঘাঁটিতে পাল্টা আক্রমণ চালায় ।
এই সব আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের কারণে এই দুটি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে বড় রকমের সংঘাতের এবং ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালানোর পর ব্যাপক আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দেয়।
দ্বিপক্ষীয় উত্তেজেনা হ্রাসের জন্য তেহরান ও ইসলামাবাদ দ্রুত কুটনৈতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করে এবং পরস্পরের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখন্ডতার প্রতি সম্মান জানানোর সংকল্প ব্যক্ত করে।
পাকিস্তান ও ইরান দু দেশকে সংযোগকারী বহু কোটি ডলারের পাইপলাইন নির্মাণের বহু দিনের পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি সম্প্রতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। ওই পাইপ লাইনের মাধ্যমে ইরান থেকে পাকিস্তান প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে পারবে।
ইরান যদিও বলছে যে সীমান্তে তার দিকে ৯০০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ তারা সম্পন্ন করেছে, পাকিস্তানের দিকে নির্মাণ কাজ শুরুই হয়নি। কারণ ইসলামাবাদ ভয় পায় যে ইরান থেকে জ্বালানি শক্তি আমদানি করলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হবে।
Leave a Reply