ইসরাইলের সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন, তাদের ভূখণ্ডের ভেতরে ইরান যে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে সেটির জবাব দেয়া হবে। মধ্যপ্রাচ্যে যাতে যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য ইসরাইলের মিত্র দেশগুলো ইরানে পাল্টা হামলা না করার পরামর্শ কিংবা আহবান জানিয়েছে।
ইরানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় ঠিক করতে প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু গত ২৪ ঘণ্টার কম সময়ে দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন।
কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কি না সে বিষয়ে ইসরাইলের সরকারের দিক থেকে কিছু জানানো হয়নি।
ইরান ইতোমধ্যে বলেছে যে তাদের হামলার জবাবে ইসরাইলের যদি আবারো হামলা চালায় তাহলে এর চেয়ে বেশি কঠিন জবাব দেয়া হবে।
ইরান বলছে, সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ইসরাইলের হামলায় রেভ্যুলশনারি গার্ডের একজন সিনিয়র কমান্ডারসহ সাতজন নিহত হওয়ার পাল্টা জবাব দেয়া হয়েছে ইসরাইলের ভেতরে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালানোর মাধ্যমে।
এদিকে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ হারজি হালেভি বলেছেন, ইরানের হামলার জবাব দেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
ইরানের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নেভাটিম বিমান ঘাঁটি পরিদর্শনের সময় সেনাবাহিনী প্রধান একথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স অ্যাজেন্সি বা সিআইএ’র সাবেক প্রধান ডেভিড পেট্রাউস বিবিসিকে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে কোনো ঝুঁকি তৈরি হোক সেটি ওয়াশিংটন চায় না।
জেনারেল পেট্রাউস ইরাক ও আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক বাহিনীর কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি মনে করেন, ইসরাইলের ভূখণ্ডের ভেতরে ইরানের হামলা একটি ‘বড় ঘটনা’। ইসরাইলের জন্য এর গুরুত্ব কতটা সেটি পশ্চিমা দেশগুলোকে অনুধাবন করতে হবে।
‘এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, পরবর্তী করণীয় নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। যদি কোনো কারণে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে যায় অথবা উপসাগরীয় অঞ্চলে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।’
পেট্রাউস বলেন, ইসরাইল সরকারের মধ্যে যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলছে, সেটি হচ্ছে বড় ধরনের উত্তেজনা না বাড়িয়ে এই হামলার জবাব কিভাবে দেয়া যায়।
ইসরাইলে বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে এই মুহূর্তে যে সরকার ক্ষমতায় আছে, তাকে অনেকেই সে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ‘কট্টরপন্থী’ বা হার্ডলাইন সরকার বলে বর্ণনা করে থাকেন।
গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলের হামাসের চালানো অতর্কিত হামলার জবাব দিতে ইসরাইল সময় নিয়েছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা।
তারপর ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে তারা একটানা গাজা ভূখণ্ডে তীব্র অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে গাজাকে যেন তারা প্রায় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে চাইছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের প্রতি পাল্টা জবাব দেবার জন্য ইসরাইলের হাতে বেশকিছু পন্থা আছে। তবে নেতানিয়াহু সরকার কোন ধরনের পন্থা ব্যবহার করবেন সেটি বোঝা মুশকিল।
এদিকে বিশ্বনেতারা ইসরাইলকে সংযত থাকার আহবান জানিয়েছেন। ইরানের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এটিও জানানো হয়েছে যে ইসরাইল যদি ইরানে পাল্টা হামলা চালায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাতে যোগ দেবে না।
রোববার সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়, প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন যে বাইডেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুকে ‘খুব সাবধানে এবং কৌশলীভাবে চিন্তা করতে’ বলেছেন।
সূত্র : বিবিসি
Leave a Reply