৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মোট ১ হাজার ৮৯১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। সোমবার (১৫ এপ্রিল) ছিল ১৫০টি উপজেলায় মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, এবার সম্পূর্ণ অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হয়েছে। এতে চেয়ারম্যান পদে মোট ৬৯৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭২৪ জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৭১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
১২ পদে একক প্রার্থী
ইসির তথ্য অনুযায়ী দুটি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। উপজেলা দুটি হলো- বাগেরহাট সদর ও মুন্সীগঞ্জ সদর। এদিকে চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে কক্সবাজার সদর, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর হাতিয়ায় একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ ১৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলায়।
নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতটি উপজেলায় একক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। উপজেলাগুলো হলো- কুষ্টিয়া সদর, চাঁদপুরের মতলব উত্তর, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী, নোয়াখালীর হাতিয়া, বাগেরহাট সদর ও মৌলভীবাজারের বড়লেখা। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ ৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায়।
এর ফলে এসব উপজেলাবাসীর জন্য বিনা ভোটের জনপ্রতিনিধি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের পর জানা যায়, বেশিরভাগ উপজেলায় আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কেননা এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না। অন্যদিকে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে কিছু উপজেলায় বিএনপির কেউ কেউ স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী হয়েছেন। বিএনপির জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীও উপজেলা ভোটে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে কিছু উপজেলায় জামায়াতের মনোনয়নপত্র দাখিলকারীরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলাায় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন উপজেলা জামায়াতের আমির মোখলেছুর রহমান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ভোটের লড়াইটা মূলত আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই হচ্ছে। অন্যদিকে নিবন্ধিত অন্য দলগুলোর কজন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সেই হিসাব এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি ইসি।
এবারই প্রথমবারের মতো মনোনয়নপত্র অনলাইনে দাখিল করতে হয়েছে। জামানতের টাকাও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জমা দিতে পেরেছেন প্রার্থীরা।
এদিকে সার্ভার জটিলতায় অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও যুবদল নেতা ফরিদ আল রাজি কমল। তিনি বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
বাগেরহাট ও মুন্সীগঞ্জ সদরে যে ২ জন চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী
মুন্সীগঞ্জ প্রতিবেদক জানান, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একটি মাত্র মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আনিছুজ্জামান আনিস এই মনোনয়নপত্রটি জমা দিয়েছেন। আনিছুজ্জামান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার। এর আগে আনিস দুইবার উপজেলা ও দুইবার মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।
আনিছুজ্জামানের বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন, ভাতিজা মো. ফয়সাল আহমেদ বিপ্লব মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য, ভাতিজা বিপ্লবের সহধর্মিণী ফাহরিয়া আফরিন মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র।
সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, চেয়ারম্যান পদে একমাত্র আনিছুজ্জামান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন বাছাইয়ের পরে বৈধ হলে তাকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে।
এ ব্যাপারে মো. আনিছুজ্জামান বলেন, আমার পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক ও মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থন আছে। আমার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে এবং আমার জনপ্রিয়তার কথা ভেবেই আর কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি। আমি এবার আমার বাকি অসমাপ্ত কাজগুলো করতে পারব।
বাগেরহাট প্রতিবেদক জানান, বাগেরহাট সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১ জন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এরা হলেনÑ চেয়ারম্যান পদে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার নাসির উদ্দিন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে রিজিয়া পারভিন। যার ফলে এই দুই প্রার্থী এই উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।
আ.লীগই আ.লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী
কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অন্যান্য উপজেলায় এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিজেরাই নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন। লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় ১১ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ ছাড়া এই দুই উপজেলায় ১৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৬ জন নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কমলনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী হলেন- উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান উল্লাহ হিরন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বাবুল মিয়া, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রহমান দিদার, চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ ও ভিপি নুরনবী। এ ছাড়া এ উপজেলায় ৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন।
এদিকে রামগতি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন- উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শরাফ উদ্দিন আজাদ সোহেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ, জামশেদা জাং চৌধুরী, রোকেয়া বেগম ও মাহবুবুর রহমান টিপু। এ উপজেলায় ১০ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
গতকাল দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার মধ্যে হাকিমপুর, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাটের চেয়ারম্যান পদে ১১ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৭ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৪ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
প্রথম ধাপে অনুষ্ঠেয় পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন প্রার্থী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৪ জন প্রার্থী এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রার্থীসহ মোট ৩৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এর মধ্যে সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী। আটোয়ারীতে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী। এ ছাড়া তেঁতুলিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন প্রার্থী এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
প্রথম ধাপে বগুড়ার তিন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে মোট ৩৬ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১২ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ জন প্রার্থী রয়েছেন। বগুড়ার সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার মাহমুদ হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি উপজেলা নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাটে ৪৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে তারা সবাই অনলাইনে জমা দেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৬, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৫ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৭ এপ্রিল। রিটার্নিং অফিসারদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১৮ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি করা হবে ২১ এপ্রিলে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল, আর ভোটগ্রহণ হবে ৮ মে।
এই ধাপের নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল আবেদন নিষ্পত্তি করবেন আপিল কর্তৃপক্ষ হিসেবে জেলা প্রশাসক।
সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি ও কাজিপুর; পাবনার সাঁথিয়া, সুজানগর ও বেড়া; যশোরের মনিরামপুর ও কেশবপুর; পিরোজপুরের সদর, নাজিরপুর ও ইন্দুরকানী; মানিকগঞ্জের সিংগাইর ও হরিরামপুর; শরীয়তপুরের নাড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ; জামালপুরের সদর ও সরিষাবাড়ী; চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ এবং কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, সদর ও মহেশখালী- এই ২২টি উপজেলায় ইভেএমে ভোটগ্রহণ হবে।
Leave a Reply