ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে নানাপদের বাহারি রান্নার আয়োজন। মুসলিম সম্প্রদায়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশে অত্যন্ত ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আড়ম্বরের মধ্য দিয়ে পালিত হয় ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ আসে খুশির আমেজ নিয়ে। আর এই খুশি দ্বিগুণ হয় নানা পদের রসনা বিলাসের মধ্যে।
আমাদের দেশের নানান অঞ্চলে নানান আইটেমের ঈদ-স্পেশাল-মেন্যু তৈরি হয়। উত্তরে যদি হয় সেমাই, তো দক্ষিণে রুটি-মাংস। তবে মিষ্টি বা মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারগুলোই আপ্যায়নের সিংহাসন দখল করে থাকে। দেশের এমন কয়েক অঞ্চলের ঈদের জনপ্রিয় খাবারগুলো সম্পর্কে আজকে জেনে নেওয়া যাক।
বগুড়া
ঈদ উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বগুড়ার চিকন সেমাইয়ের ঐতিহ্য। ঈদের দিন সকালে বগুড়ার প্রতিটি ঘরেই কমবেশি চিকন সেমাই বানানো হয়। কোনটায় দুধ ছাড়া শুধু ঘিয়ে ভেজে বাদাম কিশমিশ সহযোগে, আবার কোনোটায় দুধ দিয়ে ঘন ঘন করে। সেমাই ছাড়াও, পায়েস আর নানা পদের মিষ্টিও খেতে দেখা যায় বগুড়ার ভোজনপ্রিয় মানুষদের।
নরসিংদী
ঈদুল ফিতর কিংবা ঈদুল আজহা—যেকোনো উৎসবেই ঘরে ঘরে তৈরি হবে হাতের সেমাই। অতিথি আপ্যায়নেও খাতির মানে নরসিংদীর ঐতিহ্যবাহী হাতের তৈরি সেমাই। স্থানীয়ভাবে এটি সেয়ই নামেও পরিচিত। এটি তৈরি করে সঙ্গে সঙ্গে রান্না করে খাওয়া যায়। তবে কেউ চাইলে রোদে শুকিয়েও রাখতে পারেন।
সিলেট
কড়া ভাজির পিঠা। খেতেও কড়কড়ে। তাই নাম কড়ই। সিলেট অঞ্চলে গ্রাম থেকে শহরে এ পিঠার কদর বেশি। কড়ই পিঠা বা সমুচার আদলেও হয়। তখন কড়ই সমুচা বলে ডাকা হয়। প্রধান উপকরণ বিরুই চাল হওয়ায় ‘বিরুণ পিঠা’ বলে ডাকা হয়। নামের ভিন্নতা থাকলেও উপকরণ ও প্রস্তুত প্রণালি কিন্তু অভিন্ন।
চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঈদের দিনের জনপ্রিয় একটি খাবার চালের রুটি দিয়ে গরুর মাংস। ঈদের দিন চট্টগ্রামের প্রায় প্রতিটি বাসায়ই চালের রুটির সঙ্গে তবুরুকের মাংস বানানো হয়। অতিথি আপ্যায়নের ক্ষেত্রে ঈদের বিশেষ খাবার হলো সেমাই, পায়েস, জর্দা ও অন্যান্য মিষ্টি খাবার। ঝাল ও মচমচে খাবারের প্রচলনও দেখা যায়।
এসব অঞ্চলভেদে ঐতিহ্যবাহী খাবারের পাশাপাশি ঈদের খাবার হিসেবে পোলাও, মাংস, কাবাব, বিরিয়ানি ইত্যাদি খাবারের প্রচলনও সেই অনেক আগে থেকেই। তবে আজকাল শহরগুলোতে, বিশেষ করে ঢাকা শহরে ভিন্ন স্বাদের বিদেশি বিভিন্ন রান্না, ডেজার্ট আইটেম এবং জুস কিংবা কোমল পানীয় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ভোজনরসিক বাঙালিরা ঈদের সময় যেন তাদের ভোজনবিলাসিতা আরেকটু বাড়িয়ে দেয়। তাই অতিথি আপ্যায়ন আর হরেক রকম রান্নায় ঈদ আনন্দ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায় যেন!
Leave a Reply