জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেছেন, ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা সঙ্কট আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে। এরই মাঝে রাখাইন রাজ্যে পুনরায় শুরু হওয়া সশস্ত্র সঙ্ঘাত ওই এলাকার রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নতুন করে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি এবং বেসামরিক নাগরিকদের ওপর, বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আয়োজিত এক উন্মুক্ত বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত করেন জাতিসঙ্ঘের রাজনৈতিক এবং শান্তি বিনির্মাণ-বিষয়ক সহকারী মহাসচিব খালেদ খিয়ারি এবং মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিসের পরিচালক লিসা ডাউটন।
নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো ছাড়াও সভায় মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, ‘রাখাইনে সাম্প্রতিককালে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছে।’
পরিস্থিতির উন্নতি হলেই আবার এ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি প্রত্যাবাসন ইস্যুতে প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন এবং ২০১৭ ও ২০১৮ সালে সই করা দ্বিপক্ষীয় প্রত্যাবর্তন চুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সাথে কাজ করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান।
এছাড়াও রাখাইনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করা এবং ভবিষ্যতে প্রত্যাবর্তনকারীদের রাখাইনে সফলভাবে পুনর্বাসনে সহায়তা করার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে আঞ্চলিক সংস্থাসমূহ এবং আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী দেশগুলোকে অর্থপূর্ণ এবং কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার অনুরোধ জানান।
জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৬৬৯ এর কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, রাখাইনে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার লক্ষ্যে রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো মোকাবিলা করা জরুরি। যা মূলত মিয়ানমারের বিদ্যমান বৈষম্যমূলক আইনি ও রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে অন্তর্নিহিত।
তিনি আরো বলেন, ‘এই অন্তর্নিহিত সমস্যাগুলোর সমাধান করা না গেলে দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক প্রচেষ্টাগুলোর সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’
রাষ্ট্রদূত মুহিত মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘের উপস্থিতি জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা এবং নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৬৬৯ বাস্তবায়নের বিষয়ে নিয়মিত রিপোর্টিং, রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সঙ্ঘটিত অপরাধের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং রাখাইনে সঙ্কট সমাধানে বিভিন্ন সময়ে গৃহিত চুক্তি ও সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়ে জোর দেন।
পাশাপাশি তিনি মিয়ানমারের অন্য সব জাতিগোষ্ঠির মতো রোহিঙ্গারাও যেন সমাজে সমান মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে লক্ষ্যে উপযুক্ত এবং টেকসই পরিবেশ তৈরিতে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের যথাযথ ভূমিকার ওপর জোর দেন।
রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির কারণে বাংলাদেশ যে নেতিবাচক সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত এবং নিরাপত্তা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তার কথা উল্লেখ করে মুহিত রাখাইন পরিস্থিতির প্রতি নিয়মিত দৃষ্টি রাখা এবং রোহিঙ্গা সঙ্কটের একটি পূর্নাঙ্গ ও টেকসই সমাধানে দ্রুত ও অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানান।
সভায় বক্তব্য প্রদানকারী অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা মিয়ানমারে সম্প্রতি সঙ্ঘাত ও সহিংসতা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে রাখাইন সঙ্ঘাতের মূল কারণগুলো মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য; সব বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ও অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।
বক্তারা নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৬৬৯ অনুযায়ী মিয়ানমারে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য জাতিসঙ্ঘ ও আসিয়ানের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানান।
১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলদেশ যে মানবিক নেতৃত্বের নিদর্শন রেখে যাচ্ছে বক্তারা তার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা নিরাপদে নিজ গৃহে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।
সূত্র : ইউএনবি
Leave a Reply