স্যাটেলাইট ট্যাগ লাগিয়ে সুন্দরবনসহ বিভিন্ন নদীতে ঘুরে বেড়াচ্ছে চারটি কুমির। এদের মধ্যে একটি কুমির সুন্দরবন ছেড়ে ঘুরতে এসেছিল পিরোজপুরের নদ-নদীর মিঠা পানিতে। মাত্র ১১ দিনে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে কুমিরটি।
গায়ে বসানো স্যাটেলাইটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কুমিরটি বুধবার সকালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালির একটি নদীতে রয়েছে। এমন তথ্য দিয়েছে দেশের একটি টিভি চ্যানেলের অনলাইন। স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, কুমিরটি পিরোজপুরের নদ-নদী ঘুরে আবারো ফিরে আসতে শুরু করেছে সুন্দরবনের দিকে। কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট বসিয়ে গতিবিধি লক্ষ্য করা গবেষকদের একজন আইইউসিএনের ম্যানেজার ও প্রকল্পের সমন্বয়কারী সারোয়ার আলম দীপু একথা জানিয়েছেন।
গত ১৬ মার্চ সুন্দরবনে কুমির ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে ও এর গতিবিধি জানতে চারটি কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট বসানো হয় । সুন্দরবনে ছেড়ে দেয়া হয় কুমিরগুলো। গত ১১ দিনে তিনটি কুমির সুন্দরবনে লবণ পানিতে থাকলেও একটি কুমির মিঠা পানির দিকে চলে যায়। গবেষকরা মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) তার অবস্থান পেয়েছিলেন পিরোজপুরের একটি নদীতে। এক দিন পরই কুমিরটির অবস্থান ফের সুন্দরবনের দিকে দেখা যাচ্ছে।
কুমিরটির এভাবে চলে যাওয়া বা ফিরে আসাকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন দুই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
কুমিরের গায়ে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে নদীতে অবমুক্ত করার কাজটি যৌথভাবে করছে বন বিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)। তাদের সহযোগিতা করছে জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকনোমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (জিআইজেড)।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) ম্যানেজার ও প্রকল্পের সহকারী সারোয়ার আলম দীপু বলেন, প্রতি এক ঘণ্টা পর পর কুমিরের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারি। যখনই কুমির পানির নিচ থেকে ভেসে ওঠে তখনই এটির অবস্থার জানা যায়। ওই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মোবাইলেই আমরা তাদের অবস্থান জানতে পারি। অনেকটা জিপিএস ট্রাকিংয়ের মতো। তবে জিপিএস ট্রাকিংয়ে নেটওয়ার্ক যুক্ত থাকতে হয়, স্যাটেলাইটে নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয় না।
চারটি কুমিরের মধ্যে একটি কুমির তিন দিন আগে সুন্দরবনের লবণ পানি ছেড়ে মিষ্টি পানির দিকে চলে যায়। এটিকে খুব স্বাভাবিক ঘটনা জানিয়ে সারোয়ার দিপু বলেন, গত তিন দিনে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পিরোজপুরের মিষ্টি পানিতে চলে গিয়েছিল। গত এক দিনে কুমিরটি আবারো ৫০ কিলোমিটার নিচের দিকে নেমে আসছে। কুমিরটি হয়তো তার জন্য উপযোগী একটা জায়গা খুঁজছিল। কুমিরের স্বাভাবিক আচরণে কোনো পরিবর্তন আসছে কি না এটা এখনই বলার সময় আসেনি জানিয়ে দিপু বলেন, গবেষণা মাত্র শুরু হলো। এই ১১ দিনে এটা বলা সম্ভব নয়। এজন্য দীর্ঘ গবেষণা প্রয়োজন। যেটি আমরা করছি। এক বছর মেয়াদের এই গবেষণা শেষে আমরা হয়তো কোনো একটা ফলাফল দিতে পারবো।
সুন্দরবন বন বিভাগের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনে অবমুক্ত করে এই প্রথম কুমির নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা কুমিরের প্রজনন, কুমিরের অবস্থান কুমিরের বাসস্থান, কুমিরের খাদ্য সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পাবো। এর মধ্যমে সুন্দবনের লবন পানিতে কিংবা অন্য স্থানে কুমিরের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সঠিক প্রয়োগ করতে পারবো।
উল্লেখ্য, দুটি পুরুষ কুমির এবং দুটি স্ত্রী কুমিরের শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে গত ১৩ মার্চ থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে এ সময়টাতে সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে দেয়া হয়ে ছিল।
Leave a Reply