ফিল্মি দুনিয়া বড় বিচিত্র জায়গা। আর সেটা যদি হয় বলিউড, তা হলে তো কথাই নেই। এ এমনই এক জায়গা, স্বপ্নের ভুবন ভেবে যেখানে পা রাখতে চেয়েছেন অগণিত স্বপ্নবিলাসীরা। তাদের কেউ কেউ স্বপ্নপূরণের পথে চলার সুযোগও পেয়েছেন। কারও মাথায় উঠেছে সাফল্যের মুকুট, কেউ বা আবার সাফল্যের ঝিলিক দেখিয়ে গেছেন হারিয়ে। বলিউডের এমন অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী রয়েছেন; যারা ক্যারিয়ারের শুরুতেই করেছেন বাজিমাত, তার পর নিজেরাই হয়েছেন কুপোকাত! সেই রকম কিছু তারকার ইতিবৃত্ত নিয়ে এই আয়োজন। লিখেছেন- জাহিদ ভূঁইয়া
স্নেহা উল্লাল
২০০৫ সাল। বলিউডে আগমন ঘটল নতুন এক মুখের। যাকে দেখে চমকে উঠলেন অনেকে। ভাবলেন, ঐশ্বরিয়ার ক্লোন এলো নাকি! অবাক করার মতো হলেও সত্যি; স্নেহা উল্লালকে দেখে অনেকেই খোঁজখবর নিয়েছেন, সে বলিউডের বিশ্বসুন্দরী অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়ার জ্ঞাতি-গোষ্ঠীর কেউ কিনা। কোনো সম্পর্কের যোগসূত্র না থাকলেও তাকে নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠলেন অনেকেই।
‘লাকি : নো টাইম ফর লাভ’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিষেক হলো স্নেহার। প্রথম ছবিতেই সহশিল্পী হিসেবে পেলেন সুপারস্টার সালমান খানকে। সালমান-স্নেহার রসায়নে ভর করে সাফল্যের স্বপ্ন দেখলেন দুই পরিচালক বিনয় সাপ্রু ও রাধিকা রাও। কিন্তু আশায় গুড়েবালি। পরবর্তীকালে সালমানের কনিষ্ঠ সোহেল খানের সঙ্গে ‘আরিয়ান’ ছবিতে অভিনয় করেও সাফল্যের দেখা পাননি স্নেহা। তাই তার হারিয়ে যাওয়া ছিল অবধারিত।
গ্রেসি সিং
যার প্রথম ছবি আশুতোষ গোয়ারিকরের ‘লগন’, দ্বিতীয় ছবি রাজকুমার হিরানির ‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’- তিনি বেকার হয়ে পড়বেন, তাও কি ভাবা যায়? ভাবা যেত, যদি তিনি সম্ভাবনাময়ী অভিনেত্রী হিসেবে একাধিক পুরস্কারে ভূষিত না হতেন; তৃতীয় ছবি ‘গঙ্গাজল’ যদি ব্যবসায়িক সাফল্য না পেত, তা হলে না হয় ধরে নেওয়া যেত, গ্রেসি সিংয়ের ক্যারিয়ার হোঁচট খেতে পারে।
কিন্তু সাফল্য আর সম্ভাবনার পরও তার অভিনয় ক্যারিয়ার থমকে গেছে। এর চেয়ে অবাক করার বিষয় হলো- একসময়ের ছোট পর্দার জনপ্রিয় এ অভিনেত্রী পুরনো জায়গাতেও স্থান পেলেন না। টিভি ধারাবাহিক ‘আমানত’-এ অনবদ্য অভিনয় করে যিনি বলিউডে ডাক পেয়েছিলেন, নাট্যনির্মাতাদের কাছেও তিনি উপেক্ষিতই থেকে গেলেন।
ভাগ্যশ্রী
অনেকে যখন সাফল্যের জন্য মরিয়া, তখন বিজয় মুকুটকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন অভিনেত্রী ভাগ্যশ্রী। যিনি সাফল্যের রেকর্ড গড়ে বলিউডের ইতিহাসে নাম লেখানো ছবি ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’ ছবির নায়িকা। অভিনয়ের চূড়ান্ত সাফল্যের পরও তিনি অভিনয় থেকে সরে দাঁড়াবেন, এ ছিল অনেকের ভাবনার অতীত। কিন্তু সবার অনুমানকে মিথ্যা প্রমাণ করে অভিনয় ছেড়ে ঘর-সংসারী হয়ে পড়েন তিনি। তবে একসময় অনুভব করেন, লাখো মানুষের ভালোবাসা ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তাদের প্রত্যাশা পূরণের পরিবর্তে নিজেকে আড়াল করে রাখবেন কীভাবে? এমন প্রশ্ন হয়তো ভাগ্যশ্রী নিজেই নিজেকে অনেকবার করেছেন। সে কারণেই হয়তো ফিরতে চেয়েছিলেন অভিনয়ে।
কিন্তু শর্ত ছিল একটাই- ছবির নায়ক বানাতে হবে তার স্বামী হিমালয়কে। প্রযোজকরা সে শর্তও মেনে নিয়েছিলেন। ভাগ্যশ্রী-হিমালয় জুটিকে নিয়ে নির্মাণ করেছিলেন ‘ত্যাগী’ ও ‘পায়েল’ নামের দুটি ছবি। কিন্তু এ ছবি দুটিই যেন তার ক্যারিয়ারে কাল হয়ে দাঁড়ায়। বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় ভাগ্যশ্রীর ভাগ্যের লিখন।
রাহুল রায়
‘আশিকী’ ছবির মধ্য দিয়ে বলিউডে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকের এ রোমান্টিক ছবিতে অভিনয় করে লাখো তরুণের আইকনে পরিণত হয়েছিলেন অভিনেতা রাহুল রায়। কথা বলার ধরন থেকে শুরু করে তার চুলের কাট- অনুকরণ করেছেন সে সময়ের তরুণরা। প্রথম ছবির পরই শীর্ষ তারকাদের খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন রাহুল। রোমান্টিক ইমেজ ছাড়াও ‘জুনুন’ ছবিতে বাঘের চরিত্রে অভিনয় করে চমকে দিয়েছিলেন দর্শকদের।
‘স্বাপনে সাজান কে’, ‘পেয়ার কা ছায়া’, ‘ফির তেরি কাহানি ইয়াদ আয়ি’, ‘হাসতে খেলতে’সহ আরও বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করে বলিউডে নিজের অবস্থান পোক্ত করে নিয়েছিলেন। সবকিছুই তার পক্ষে ছিল, সম্ভাবনা ছিল মেগাস্টার হওয়ার- অথচ তিনি নিজেই যেন সেসব কিছু চাননি। অজ্ঞাত কারণেই চলে গিয়েছিলেন ফিল্মি দুনিয়ার আড়ালে।
অনু আগারওয়াল
রাহুলের মতোই ‘আশিকী’ ছবি দিয়ে অভিষেক অনু আগারওয়ালের। যাকে হাওয়াই জাহাজে আবিষ্কার করেছিলেন চিত্রপরিচালক মহেশ ভাট। এয়ার হোস্টেজ অনুকে বিমান থেকে নামিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন ক্যামেরার সামনে। বংশপরম্পরায় যারা চলচ্চিত্র নির্মাতা, তাদের আবিষ্কার সব সময়ই আলোচনায় এসেছে।
অনুর ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ‘আশিকী’র মতো রোমান্টিক ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করে দর্শকদের নজর কেড়েছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে সমালোচকদেরও মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছিলেন ‘খলনায়িকা’ ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে। আলোচনায় এসেছিলেন আবেদনময়ী হিসেবেও। তবে এতকিছুর পরও তার প্রতি দর্শকের আগ্রহ ক্রমেই ফিকে হয়ে যায়। তাই বলিউডকে বাই বাই জানানো ছাড়া কিছুই করার ছিল না তার।
গায়ত্রী জোশী
তিনি সুন্দরী, এক কথায় স্বীকার করবেন সবাই। চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের মতে, অভিনয়েও তিনি দক্ষ। চরিত্রকে প্রাণবন্ত করে ফুটিয়ে তোলার কারিশমা আছে তার মধ্যে। সেই হিসেবে ‘লগন’খ্যাত পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকরের নজরে পড়বেন গায়ত্রী জোশী, এটাই ছিল স্বাভাবিক। তার প্রথম ছবি ‘স্বদেশ’-এর গল্পও ছিল ব্যতিক্রম। সহশিল্পী ছিলেন বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। এর পরও ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েনি গায়ত্রীর। তাই প্রথম ছবির পরই এই অভিনেত্রীর কাজের তালিকায় যুক্ত হয়নি নতুন ছবির নাম।
শমিতা শেঠি
ধারালো সুন্দরী, বলিউডের সেরা আবেদনময়ীদের একজন, সেই সঙ্গে অভিনয়েও তুখোড় ছিলেন শমিতা শেঠি। অভিষেকটা হয়েছিল যশরাজ ফিল্মসের ‘মোহাব্বতে’ ছবির মাধ্যমে। প্রথম ছবিতে অভিনয় করেই পুরস্কৃত হয়েছিলেন শমিতা। এতকিছুর পরও শিল্পা শেঠির ছোট বোনের অভিনয়ের ক্যারিয়ার খুব একটা দীর্ঘ নয়। ‘মেরে ইয়ার কি শাদি হ্যায়’, ‘জেহের’, ‘ফারেব’, ‘ক্যাশ’-এর মতো ভিন্ন ধাঁচের ছবিতে কাজ করেও পরবর্তী সময়ে আর সাফল্যের দেখা পাননি তিনি। তাই মাঝে মাঝে তার দেখা মিলেছে আইটেম গানে। কেবল আইটেম গান কদর ছাড়া ফ্লপ নায়িকা হিসেবেই গড়ে উঠেছে তার পরিচিতি।
Leave a Reply