মিয়ানমারের সঙ্ঘাতে সীমান্তের এপারে চলে আসে অবিস্ফোরিত রকেট লঞ্চার। তা উখিয়া সীমান্তের নয়াপাড়া থেকে উদ্ধার করে বিজিবি। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধুমধুম সীমান্তে নয়াপাড়া কৃষি জমিতে এটি নিস্ক্রিয় করা হয়। এ সময় বিকট শব্দ হয়। ধরে যায় আগুন। আর আকাশে উড়ে কালো ধোঁয়া। রকেট লঞ্চারটি সফলভাবে নিস্ক্রিয় হলেও এর পরপরই শুরু হয় চরম উত্তেজনা। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ছোড়া হয় মুহুর্মুহু গুলি।
এতে নিরাপদে সরে আসেন বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সৈনিক, সেনাবাহিনীর বোম ডিস্পোজাল ইউনিট ও পুলিশের সদস্যরা। একের পর এক গুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গ্রামবাসির মাঝে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ ৪০ মিনিট উত্তেজনা বিরাজ করে। থেমে থেমে গুলিতে জীবন বাঁচাতে ছুটাছুটি করেন গ্রামবাসী।
কক্সবাজার জেলার টেকনাফের ঝিমংখালী সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সঙ্ঘাতের উত্তেজনা গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৫টা পর্যন্ত সীমান্তের কাছাকাছি এলাকা গোলাগুলি আর মর্টার শেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছে।
টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্ষ্যং উনছিপ্রাং এলাকার সাথে মিয়ানমারের দূরত্ব মাত্র ২ কিলোমিটার। কাছাকাছি হওয়ায় মিয়ানমারে কী হচ্ছে তা অনেকটা খালি চোখেই দেখা যায়।
উনছিপ্রাং সীমান্তের স্থানীয়দের দাবি, ওপারে ঢেঁকিবুনিয়া এলাকায় মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ঘাঁটিগুলো দখল করে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মিও অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো। এই কারণে টেকনাফ অংশে মিয়ানমারের শহর শীলখালী, বলিবাজার ও কুইরখালী থেকে এসব বিস্ফোরণের শব্দ আসছে।
স্থানীয়রা জানান, বিজিবির ঝিমংখালী বিওপির বিপরীতে অন্তত দেড় থেকে দুই কিলোমিটার দূরে মিয়ানমারের জিবিং অং এবং হারিংগাচরের মারিক্কমপাড়া এলাকায় এসব বিস্ফোরণ হয়। সেখানে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সাথে আরাকান আর্মির সদস্যদের তুমুল সংঘর্ষ হচ্ছে বলে ধারণা করছেন তারা। এর প্রভাবে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর আরও সদস্য এ দেশে ঢুকতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
উনছিপ্রাং স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে আজ ভোর ৫টা পর্যন্ত সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছি। এই শব্দে এলাকা কেঁপে উঠছে। মনে হচ্ছে বজ্রপাত হচ্ছে। এরকম শব্দ জন্মের পরও শুনিনি।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের উনঝিপ্রাং ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রশিদ আহমদ বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকে আজ ভোর পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের কয়েকটি এলাকায় ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। এতে আমাদের এলাকা কেঁপে উঠছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), মিয়ানমার সেনাবাহিনী, পুলিশ, ইমিগ্রেশন সদস্য ও অন্যান্য সংস্থার তিন শতাধিক সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তাদের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে।
Leave a Reply