বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তের ওপারে তুমুল লড়াইয়ের মুহুর্মুহু গোলাগুলি ও মর্টার শেল যুদ্ধে প্রকম্পিত হলো এপারের বেশ কয়েকটি গ্রাম। রাতভর যুদ্ধের পর মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের ফাঁড়ি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মির যোদ্ধারা।
রোববার (৪ জানুয়ারি) সকাল থেকে নাইকংছড়ি ও উখিয়ার পালংখালী সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ ভেসে এলো এপারে।
এ সময় মিয়ানমার পুলিবর্ডার গার্ডশের ১৪ জন সদস্য সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবির একটি ফাঁড়িতে। আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের দু’জন সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। ঘুনধুমের তুম্ব্রু এলাকার অনেকই ঘর বাড়ি ও দোকানপাট বন্ধ করে নিরাপদে সরে পড়েছে।
আরো জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুনধুম সীমান্ত এলাকা থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে শনিবার রাতে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের ৩৪ নম্বর রাইট ক্যাম্প দখলে নিতে আরাকান আর্মি হামলা চালায়। এরপর শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে তীব্র লড়াই। মুহুর্মুহু গোলাগুলি ও মর্টার শেলের যুদ্ধের একপর্যায়ে রাতের আঁধারে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের ১৪ জন সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসে বিজিবির তুমব্রু ফাঁড়িতে আশ্রয় নেয়। তবে বিজিবির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেনি।
এদিকে ওপারে দু’পক্ষের মুহুর্মুহু গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দে ঘুনধুম ইউনিয়নের সীমান্ত লাগোয়া কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। অনেকই এসময় নিরাপদে দুরের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। রাতে মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলের অংশ কোনারপাড়া গ্রামের ইলিয়াস হোসেনের বসতঘরের টিনের চালে এসে পড়ে। এটি টিনের চাল ভেদ করে ঘরের ভেতরে গিয়ে পড়ে। তবে এতে কোনো হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এর আগে শনিবার বিকেলে ওপারে হওয়া গোলাগুলির একপর্যায়ে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তে সড়কে সিএনজি গাড়িতে এসে পড়েছে মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া বুলেট। এতে ওই সিএনজির সামনের গ্লাস ফেটে যায়। তবে অক্ষত আছেন সিএনজি অটোরিকশার চালক।
ঘুনধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানান শনিবার বিকেলে এবং রাতে সীমান্তের ওপারে রাখাইনের তুমব্রু রাইট পিলার ক্যাম্প এলাকা থেকে এলোপাতাড়ি ফায়ারিংয়ের বিষয়টি স্বীকার করলেও বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেন।
তিনি জানান, সীমান্ত-সংলগ্ন গ্রামবাসীরা ওপারের দু’পক্ষের লড়াইয়ে আতঙ্কে রয়েছে।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন জানিয়েছেন শনিবার ও রোববার সকাল থেকে সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় তীব্র গোলাগুলির শব্দ শুনা যাচ্ছে।
গ্রামবাসীরা জানান, শনিবার বিকেল ও রাতে ওপারে কয়েক হাজার রাউন্ড গুলিবিনিময় এবং মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।
সীমান্তের বিভিন্ন সূত্র বলছে, মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনীর প্রায় সব ক্যাম্প দখল করে নিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরাকান আর্মি। শনিবার রাতে দখল করেছে তুমব্রু ৩৪ নম্বর রাইট ক্যাম্প।
সীমান্তের ওই এলাকায় মাত্র কয়েকটি ক্যাম্প দখলে আছে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর। এরমধ্যে ঢেকিবুনিয়া ক্যাম্প উল্লেখযোগ্য। এই ক্যাম্পগুলো দখলে নেয়ার চেষ্টা করেছে আরাকান আর্মি।
স্থানীয়রা বলছেন, এই ক্যাম্পগুলোর অবস্থান সীমান্ত ঘেঁষা। ক্যাম্পগুলোর এপারের সীমান্তে প্রচুর বাংলাদেশী জনবসতি রয়েছে। ক্যাম্পগুলো দখলের জন্য গোলাগুলি হলেই এপারের সীমান্তে চলে আসবে। হতাহতের ঘটনাও ঘটবে।
Leave a Reply