বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কানাডা সরকার কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠায়নি। পর্যবেক্ষক হিসেবে চিহ্নিত কানাডিয়ান দুই নাগরিক স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছেন।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটারে) এই তথ্য জানিয়েছে ঢাকার কানাডিয়ান হাইকমিশন।
এতে বলা হয়, নির্বাচন বিষয়ে তাদের (দুই পর্যবেক্ষকের) প্রদত্ত মতামতের সাথে কানাডা সরকারের সংশ্লিষ্টতা নেই।
এদিকে, সফররত আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশে সদ্য অনুষ্ঠিত ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরাপদ’ আখ্যায়িত করেছেন।
সোমবার (৮ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন পর্যবেক্ষকরা।
তারা বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখানে উপস্থিত সকল পর্যবেক্ষক একমত যে- বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পর্যবেক্ষক টেরি এল ইসলে বলেন, ‘এটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অত্যন্ত নিরাপদ ছিল।’
মার্কিন পর্যবেক্ষক বলেছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী বা দলগুলোর দ্বারা ভোটারদের কোনো ভয় ভীতি দেখানো হয়নি। এটা গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের জন্য শুভ লক্ষণ।
তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা শুনেছি। যেমন সরকারের প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও অন্যান্য দলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ যা অপ্রত্যাশিত। কিন্তু আমরা যদি সামগ্রিক নির্বাচনী পরিস্থিতি পর্যালোচনা করি, তবে এসব ঘটনা খুবই নগণ্য।
এর আগে রোববার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কংগ্রেসম্যান ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক জিম বেটস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘আমি খুবই শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে পেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, এটি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
জিম বেটস বলেন,‘তারা যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে তা হলো কম ভোটদান : এটি একটি ভুল ধারণা। কিছু দেশে বিকাল ৫টা থেকে ৬টা বা এমনকি কয়েক মাস পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলে।’
তিনি বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশে সবচেয়ে কম সময়ে ভোট গ্রহণ করা হয়।
বেটস বলেন, ‘সুতরাং যখন তারা বলে ‘কম ভোটদান’, তখন এটি সংবাদমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করার মতো কিছু ‘
জিম বেটস একজন আমেরিকান সাবেক রাজনীতিবিদ যিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগো থেকে ডেমোক্র্যাটিক নির্বাচিত কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তিনি ১৯৮৩ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে চার বার দায়িত্ব পালন করেছেন।
কানাডার সংসদ সদস্য চন্দ্রা আর্য এবং কানাডার সিনেটর ভিক্টর ওহ পৃথকভাবে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন।
কানাডার স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলেন, ‘আজকের দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ বাংলাদেশের নাগরিকরা তাদের মৌলিক ও মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে এবং তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছে। আজ গণতন্ত্রের সত্যিকারের চেতনায় বাংলাদেশের জনগণ নির্ধারণ করে দিয়েছে আগামী ৫ বছরের জন্য দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কারা তাদের রায় পাবে।’
চন্দ্র আর্য বলেন, তারা সবাই এখন জনগণের নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদের দেখার জন্য অপেক্ষা করবেন, যারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবেন এবং নির্বাচনী প্রচারের সময় দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে- ২৮টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক নারী প্রার্থী ও একজন ট্রান্সজেন্ডার প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ১ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
তারা ভোটারদের কাছে এবং বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করেন।
চন্দ্রা আর্য বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে- ভোটার, রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীদের যেকোনো অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একটি প্রক্রিয়া রয়েছে।’
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সফলভাবে সম্পন্ন করায় আমরা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানাতে চাই।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে একজন কানাডার পার্লামেন্টের নির্বাচিত সদস্য হওয়ায় এবং পরপর তিনবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হওয়ায় আমরা ব্যক্তিগতভাবে একটি নির্বাচন পরিচালনার জটিলতা সম্পর্কে অবগত।’
কানাডার পর্যবেক্ষকরা রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগিয়ে এবং একটি ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও সফল’ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের চমৎকার কাজের প্রশংসা করেন।’
পৃথক এক ব্রিফিংয়ে রাশিয়ার নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের প্রধান আন্দ্রে ওয়াই শুভত বলেন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে তারা সন্তুষ্ট।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই নির্বাচন বৈধ।’
স্কটিশ এমপি মার্টিন ডে তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, নির্বাচন মোটামুটিভাবে হলেও ভোটারদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম ছিল।
ফিলিস্তিনের প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা হিশাম কুহালি বলেছেন, বাংলাদেশীদের নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিত এবং নির্বিঘ্নে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা শান্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন লক্ষ্য করেছি। ঢাকার একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সহিংসতার কোনো চিহ্ন লক্ষ্য করিনি।’
কুহালি বলেন, ভোট দেয়ার পদ্ধতি খুব সহজ এবং সরল ছিল।’
ভোট দিতে সময় লাগে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এটি খুবই ভালো।’
আন্তর্জাতিক এই পর্যবেক্ষক বলেন, জনগণ ভালোভাবে অবগত এবং প্রশিক্ষিত, যারা ভোটারদের ভোট দিতে সহায়তা করছে।
ভোটার উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে ভোটদান পদ্ধতি বিচার করতে এসেছি। আপনার প্রক্রিয়া নিয়ে গর্বিত হওয়া উচিত।’
আরব পার্লামেন্টের সদস্য আব্দিহাকিম মোয়ালিয়াম নির্বাচনকে ‘সুন্দর’ এবং অত্যন্ত কার্যকরভাবে পরিচালিত বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চার প্রশংসা করে বলেন, এটি শান্তি ও ঐক্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
বিদেশী পর্যবেক্ষকরা বেশ কিছু ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বর্তমানে ১২৭ জন বিদেশী পর্যবেক্ষক ঢাকায় অবস্থান করছেন।
সূত্র : ইউএনবি
Leave a Reply