বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ আটজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তাদের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।আজ শনিবার শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুনে দগ্ধ আটজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তাদের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। একজনের শরীরের ৯ শতাংশ পুড়ে গেছে। সবাই মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আসিফ মোহাম্মদ খান নামে একজন রোগীর শরীরে ৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। নাফিজ আলম নামে আরেকজনের ৫ শতাংশ পুড়েছে। এ দুজনসহ বাকিদের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। সবাইকেই আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’
তবে এখন পর্যন্ত কতজনের মৃত্যু হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাতে পারেননি এই চিকিৎসক। এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেলে খোঁজ নিতে বলেন সামন্ত লাল। তিনি জানান, লাশ এখানে আসে না। এখান থেকে চিকিৎসাধীন কেউ মারা গেলে তার হিসাব তারা দিতে পারবেন।
এদিকে নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে গতকাল শুক্রবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত অনেক হাসপাতালে আসছেন। আবার মৃতদের লাশও ছাড়ছে না কর্তৃপক্ষ। লাশের অপেক্ষায় অনেকে বসে রয়েছেন।
রাজবাড়ী থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বেনাপোল এক্সপ্রেসে উঠেন চন্দ্রিমা চৌধুরী ও এলিনা। তারা দুজনেই নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ওয়ারীর নাতাশা জেসমিনও। শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে তাদের খুঁজতে আসেন স্বজনরা।
নাতাশা জেসমিনের ভাই খুরশিদ বলেন, ‘আমার বোন একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করে। বন্ধুদের সঙ্গে ফরিদপুর গিয়েছিল। ঢাকায় আসার জন্য ভাঙ্গা থেকে ট্রেনে উঠে। তার সঙ্গে আরও দুজন ছিল। আগুন লাগার পর তারা বের হতে পেরেছে, আমার বোন বের হতে পারেনি। তাকে খুঁজেও পাচ্ছি না। মর্গে খুঁজেছি সেখানেও নেই।’
নিখোঁজ চন্দ্রিমার ভাই অনিন্দ্য প্রামাণিক বলেন, ‘ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকার উদ্দেশে বেনাপোল এক্সপ্রেসে উঠেন চন্দ্রিমা। এরপর বেশ কয়েকবার পরিবারের সঙ্গে কথা হয় তার। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে তার ফোন নম্বরে কয়েকবার কল করা হলেও ব্যস্ত পাওয়া যায়। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ আছে, খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এর আগে গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগে গোপীবাগ কাঁচাবাজারের সামনে এলে হঠাৎ বগির মধ্যে আগুন দেখতে পান ট্রেনের যাত্রীরা। ট্রেনটি বেনাপোল থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকা আসছিল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুই শিশু ও এক নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার থেকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের আগের রাতে এ ঘটনা ঘটে
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় মা ও শিশুসহ চারজন পুড়ে মারা যান। আহত হন আরও অন্তত একজন। তবে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
Leave a Reply