1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৫ অপরাহ্ন

কিয়ামত দিবসের আট সাক্ষী

ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

কিয়ামত দিবসের বিভীষিকাময় অবস্থার কথা কে না জানে, সেদিন প্রত্যেকে এমন দিশেহারা হবে যে, সবাই তার আপনজনের কথা, অর্থসম্পদের কথা ভুলে যাবে। এমনকি পশুরাও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। সেদিন এসব ভীতিকর জিনিসের সাথে আরো একটি ভীতিকর বিষয় হলো- আমাদের পার্থিব জীবনের কাজের ব্যতিক্রমী সব সাক্ষী। সেদিন এমন আট সাক্ষী হবে, যা অস্বীকার করার কোনো উপায় ও সুযোগ থাকবে না। নিম্নে সে আট সাক্ষী নিয়ে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আলোচনা তুলে ধরা হলো-

১. স্থান বা জায়গা : শয়তানের ধোঁকায়, নফসের প্ররোচনায়, পরিবেশের তাড়নায়, কমবেশি সবাই গুনাহ করে থাকে, তো এই গুনাহ যে স্থান বা জায়গায় করা হয়, কাল কিয়ামতের বিভীষিকাময় দিনে জমিনের ওই অংশ আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘সেদিন পৃথিবীর তার যাবতীয় সংবাদ জানিয়ে দেবে।’ (সূরা যিলযাল-৪)

বোঝা গেল, ভূমিতে মানুষ যত ভালো বা মন্দ কাজ করে, সেদিন জমিন সে সম্পর্কে আল্লাহর দরবারে সাক্ষ্য দেবে।

২. সময় : সকাল দুপুর বিকেল তথা রাত-দিনের কোনো-না-কোনো সময়েই গুনাহের ওই কাজটি করা হয়ে থাকে। কাল কিয়ামতের দিন, সময়ের ওই অংশটুকু আল্লাহ তায়ালার দরবারে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। হজরত হাসান বসরি রহ: বলেছেন, ‘প্রতিটি দিন মানুষকে ডেকে বলে, আমি নতুন দিন, আমার ভেতর যে গুনাহ যে রকম কাজ করা হবে, কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সেই রকম সাক্ষী দেবো।’ (কুরতুবি-১৯/২৪৫)

৩. জিহ্বা : মহান আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি মানুষের এক ক্ষুদ্রাকায় অঙ্গ হলো জিহ্বা। জিহ্বা আকারে ছোট হলেও এর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া অনেক বড়। এই জিহ্বার মাধ্যমে মানুষ তার মনের ভাব, অভিব্যক্তি ও কামনা-বাসনা আদান-প্রদান করে থাকে। ভাব প্রকাশের এই মাধ্যমটিকে সত্য-সঠিক ও কল্যাণকর ক্ষেত্রে ব্যবহার করাই যুক্তিযুক্ত। এর বিপরীতে অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে জিহ্বা ব্যবহার করা মারাত্মক গুনাহ। রাসূলুল্লা সা: বলেছেন, ‘যেকোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক কথা ত্যাগ করা।’ (তিরমিজি-২৩১৭) এই জিহ্বার মাধ্যমে মানুষ যেসব গুনাহ করে থাকে, কাল কিয়ামতের ময়দানে জিহ্বা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘যেদিন তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা, হাত ও তাদের পা সাক্ষ্য দেবে।’ (সূরা নূর-২৪)

৪. শরীরের অন্যান্য অঙ্গ : শরীরের মধ্যে আরো যেসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে, নির্দিষ্ট ওই অঙ্গ দিয়ে যে গুনাহ করা হয়েছে, শরীরের ওই অঙ্গ কাল কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর দরবারে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেবো। ফলে তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা সাক্ষ্য দেবে তাদের কৃতকর্মের।’ (সূরা ইয়াসিন-৫৫)

উপরিউক্ত আয়াতে বোঝা যায়, মানুষ যখন তার কৃতকর্মের কথা অস্বীকার করবে, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের হাত-পাকে বাকশক্তি দান করবেন, তখন শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তাদের দ্বারা কৃতগুনাহের কথা সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে।

৫. দুই ফেরেশতা : মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ভালো-মন্দ, নেককাজ ও বদকাজ লেখার জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সম্মানিত লিপিকর দু’জন ফেরেশতা প্রতিটি মানুষের জন্য নিয়োজিত আছেন। তারা মানুষের কৃত সব কাজ পুঙ্খানুপুঙ্খানুভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। তারাই কাল কিয়ামতের দিনে গুনাহগার ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আল্লাহর সামনে সাক্ষ্য দেবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘অথচ তোমাদের জন্য কিছু তত্ত্বাবধায়ক (ফেরেশতা) নিযুক্ত আছে, সম্মানিত লিপিকরবৃন্দ, যারা জানে তোমরা যা করো।’ (সূরা ইনফিতার : ১১-১২)

৬. মানুষের আমলনামা : কাল কিয়ামতের ময়দানে মানুষের আমলনামা তার কৃতগুনাহের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘আর আমলনামা সামনে রেখে দেয়া হবে। তখন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে, তাতে যা (লেখা) আছে, তার কারণে তারা আতঙ্কিত এবং তারা বলেছে, হায়! আমাদের দুর্ভোগ! এটি কেমন কিতাব, ছোট-বড় যত কর্ম আছে সবই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব করে রেখেছে, তারা তাদের সব কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে, তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি কোনো জুলুম করবেন না।’ (সূরা কাহফ-৪৯)

৭. নবী মুহাম্মদ : নবী মুহাম্মাদ সা: কাল কিয়ামতের দিন উম্মতের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘প্রতি জুমার রাতে সব নবী ও আম্বিয়াদের কাছে তাদের জাতির এবং পিতা-মাতার কবরে তাদের সন্তানদের আমল দেখানো হয়।’ (কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল নং-৪৫৪৯৩) এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘সুতরাং (তারা ভেবে দেখুক) সেই দিন (তাদের অবস্থা) কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং (হে নবী), আমি তোমাকে ওই সব লোকের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব?’ (সূরা-৪১)

উপরিউক্ত আয়াতে বোঝা গেল, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক নবী-রাসূল নিজ নিজ উম্মতের ভালো-মন্দ কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবেন। সেই ধারায় মহানবী সা:-কে তাঁর নিজ উম্মত সম্পর্কে সাক্ষীরূপে পেশ করা হবে।

৮. আল্লাহ তায়ালা : স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বান্দার ভালো-মন্দ কর্ম সম্পর্কে কাল কিয়ামতের ময়দানে সাক্ষ্য দেবেন। আল্লাহ বলেন- ‘আমি রহমান, রহিম, গাফফার, সাত্তার, তথাপি কাল কিয়ামতের ময়দানে তোমাদের গুনাহ সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবো।’ আল্লাহ আরো বলেন- ‘তোমরা এটি ভয় করো যে, অমুক দেখছে, অমুক দেখছে, তবে এটি কেন ভয় করো না, খেয়াল করো না, স্বয়ং আমি আল্লাহ নিজেই তো দেখছি।’ এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘(হে মানুষ!) তোমরা যে কাজই করো, তোমরা যখন তাতে লিপ্ত থাকো, তখন আমি তোমাদের দেখতে থাকি। তোমার প্রতিপালকের কাছে অনু-পরিমাণ জিনিসও গোপন থাকে না- না পৃথিবীতে, না আকাশে এবং তার চেয়ে ছোট ও তার চেয়ে বড় এমন কিছু নেই।’ (সূরা ইউনুস-৬১)

তাই আসুন! অপ্রতিরোধ্য ও ব্যতিক্রমী ওই সব সাক্ষীর কথা সদা-সর্বদা দেহমনে, চিন্তাচেতনায় জাগ্রত রেখে ছোট-বড় যাবতীয় গুনাহ বর্জনে সচেতন ও সচেষ্ট হই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হোন।
লেখক :

  • মুফতি আইয়ুব নাদীম

মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর, টাঙ্গাইল

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com