1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪২ অপরাহ্ন

যুক্তরাষ্ট্রে শিখ নেতা হত্যা করতে ‘ভারতীয় কর্মকর্তার’ পরিকল্পনা

ইউএস বাংলাদেশ ডেস্ক:
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল দফতর সে দেশের নাগরিক ও শিখ বিচ্ছিন্নতাকামী নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুকে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে। ওই ষড়যন্ত্রে এক ভারতীয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইসাথে বিস্তারিতভাবে জানানো হয়েছে কিভাবে ভারতের এক সরকারি কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন।

একজন সরকারি কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয়ে যাওয়ায় বুধবার উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত বলেছে এটা সরকারের ‘নীতির পরিপন্থী’।

যে মার্কিন নাগরিককে হত্যার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল বলে অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর জানাচ্ছে, সেই গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নু ২০২০ সাল থেকে ভারত সরকার দ্বারা ঘোষিত সন্ত্রাসী।

তিনি একটি শিখ বিচ্ছিন্নতাকামী সংগঠনের আইনি পরামর্শদাতা। ওই সংগঠনটির এক নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে জুন মাসে কানাডায় হত্যা করা হয়। মাস দু’য়েক আগে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ তুলে বলেছিলেন, ভারতীয় সরকারের ‘অ্যাজেন্টরা’ তার দেশের এক নাগরিকের হত্যায় জড়িত। এর যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ তাদের কাছে আছে।

কানাডার অভিযোগ ভারত উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্র একই ধরনের অভিযোগ তোলা হলেও ভারতের সরকারি প্রতিক্রিয়া একেবারেই ভিন্ন।

হত্যার পরিকল্পনা :
নিখিল গুপ্তার নাম সামনে এলেও মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর অভিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেনি।

অভিযোগপত্রে বিস্তারিত লেখা হয়েছে কবে, কিভাবে ওই সরকারি কর্মকর্তা এবং গ্রেফতারকৃত নিখিল গুপ্তার মধ্যে যোগাযোগ হয়েছিল।

অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় কর্মকর্তা একটি ‘অ্যানক্রিপ্টেড অ্যাপের’ মাধ্যমে নিখিল গুপ্তার সাথে যোগাযোগ করেন।

গুপ্তাকে একটি ফৌজদারি মামলায় সহায়তা করার বিনিময়ে তিনি শিখ নেতা পান্নুকে হত্যা করার ব্যবস্থা করে দিতে রাজি হন।

ইলেকট্রনিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিখিল গুপ্তা এবং ওই ভারতীয় কর্মকর্তার মধ্যে ক্রমাগত কথোপকথন চলছিল। এছাড়া দিল্লিতেও দু’জনের দেখা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গুপ্তা এবং ওই ভারতীয় কর্মকর্তা যখন ‘অ্যানক্রিপ্টেড অ্যাপের’ মাধ্যমে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখছিলেন, সে সময়ে গুপ্তা দিল্লি বা নিকটবর্তী এলাকায় ছিলেন।

গত ১২ মে গুপ্তাকে বলা হয় যে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা খতিয়ে দেখা হয়েছে। তাকে আরো বলা হয়েছিল, ‘গুজরাট পুলিশ থেকে আর কেউ ফোন করবে না।’

গুপ্তাকে ২৩ মে ভারতীয় কর্মকর্তা আবার আশ্বাস দিয়েছিলেন, ‘তিনি তার বসের সাথে কথা বলেছেন এবং গুজরাটের মামলাটি মিটে গেছে, কেউ আপনাকে আর ফোন করবে না।’

অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় কর্মকর্তা একজন উপ-নগরপালের সাথে গুপ্তার বৈঠকের ব্যবস্থাও করেছিলেন।

অফিসারের কাছ থেকে ভরসা পাওয়ার পরেই গুপ্তা নিউ ইয়র্কে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে শুরু করেন।

তিনি এই কাজের জন্য আমেরিকায় একজন ‘ভাড়াটে খুনির’ সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। সে ভাড়াটে খুনিকে বলা হয়েছিল, ‘যে ব্যক্তিকে হত্যা করা হবে তিনি নিউ ইয়র্ক এবং আমেরিকার অন্য একটি শহরের মধ্যে আসা যাওয়া করেন।’

যে ভাড়াটে খুনির সাথে নিখিল গুপ্তা যোগাযোগ করেছিলেন, তিনি আসলে একজন ছদ্মবেশী মার্কিন ফেডারেল অ্যাজেন্ট।

হত্যার চূড়ান্ত প্রস্তুতি :
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল দফতর প্রকাশিত অভিযোগপত্রে দাবি করা হয়েছে, গুপ্তা নিউ ইয়র্কে হত্যা হয়ে যাওয়ার পরে ওই ছদ্মবেশী অ্যাজেন্টকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় আরো কাজ পাইয়ে দেয়ার কথাও বলেছিলেন।

এদিকে, গত ১৮ই জুন কানাডায় হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের পর ১৯ জুন একটি নির্ভরযোগ্য মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রটিকে গুপ্তা বলেন যে ‘আমরা সবুজ সঙ্কেত পেয়েছি, আপনি আজ বা আগামীকাল যেকোনো সময় কাজটি সেরে ফেলতে পারেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই কাজটি শেষ করুন।’

গুপ্তা গত ৩০ জুন ভারত থেকে চেক প্রজাতন্ত্রে গিয়েছিলেন, সেদিনই যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে চেক পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে মাদক ও অস্ত্র পাচারের কারবারের সাথে যুক্ত ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এই বিষয়ে অবহিত করেছিল।

উদ্বেগ ভারতের :
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন আমেরিকা ওই ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ করেছে, তা খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যেই একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।

বাগচী বলেন, ‘একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে করা মামলায় যেখানে ভারতীয় কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের অভিযোগ করা হয়েছে সেটা উদ্বেগের বিষয়। আমরা আগেও বলেছি আবারো বলছি, এটা সরকারি নীতির পরিপন্থী।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংগঠিত অপরাধ, পাচার, অস্ত্রপাচার আর চরমপন্থীদের মধ্যে সম্পর্ক আইন-শৃঙ্খলারক্ষারী সংস্থাগুলোর বিবেচ্য বিষয় আর ঠিক এই কারণেই একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

কিন্তু বিষয়টির সাথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যুক্ত বলে এর বাইরে আর কোনো তথ্য তিনি দিতে চাননি।

যুক্তরাষ্ট্রের তোলা হত্যার পরিকল্পনা অভিযোগ নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত শুরুর ঘোষণা করলেও এর আগে যখন কানাডা তাদের এক নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে এবং সেখানে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার কথা বলেছিল, তখন এই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়াটি ছিল একেবারেই ভিন্ন।

কেন ভিন্ন সুর?
এই প্রশ্নের উত্তরে কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী বলছিলেন, ‘কানাডা আর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে যে ভিন্ন ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তার বেশ কয়েকটা কারণ আছে।

‘প্রথমত যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয়দের সংখ্যা প্রায় ৫০ লাখ আর কানাডায় ভারতীদের সংখ্যা ১৫ লাখের কাছাকাছি। তাই স্বাভাবিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেখানে বসবাসকারী ভারতীয়দের স্বার্থরক্ষায় ভারত সরকার অনেক বেশি আগ্রহী হবে।’

তার কথায়, ‘আবার যেমন ভারতের বিরাট বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচুর বিনিয়োগ আছে, ভারতের সরকারও কিন্তু সেই বিনিয়োগ ধরে রাখতে আগ্রহী। তুলনায় কানাডার সাথে ভারতের অর্থনৈতিক সম্পর্ক অনেকটাই কম।’

‘তৃতীয় কারণ হলো চীনের সাথে ভারতের যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে পাওয়া ভারতের পক্ষে জরুরী। এ ক্ষেত্রেও কানাডার ভূমিকা চীন-ভারত সম্পর্কে অতটা গুরুত্বপূর্ণও নয়।’

সব্যসাচী বসুরায় চৌধুরী বলছিলেন, ‘সেজন্যই কানাডার অভিযোগটাকে উড়িয়ে দিতে পেরেছে ভারত কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেটা করা ভারতের পক্ষে কঠিন।’

তিনি আরো বলছিলেন, কানাডার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছে ভারতের, সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com