ওয়েবের জগতে কনটেন্টই হিরো আর তার ছায়ায় চরিত্ররাও হয়ে ওঠে রক্ত-মাংসের মানুষ। সব চরিত্র হয়তো সফল হয় না। হারিয়ে যায় ব্যর্থতার অন্ধকারে। কিন্তু সেই আলো-আঁধারি ঘেরা বাস্তবের অলিগলিতেই তো আমজনতার জীবনযাপন। তাই বাড়িতে ফ্যানের হাওয়ার নিচে বিছানায় হেলান দিয়ে একাত্ম হয়ে যাওয়া যায় এসব গল্পে। আর সেখানেই সফল ওটিটি কনটেন্ট ও চরিত্ররা। ওয়েবে স্টার পাওয়ারের চেয়ে বেশি জোরালো চরিত্রাভিনেতার অভিব্যক্তি। সেখানেই সফল এমন কিছু অভিনয়শিল্পী, যারা মূলত পার্শ্বচরিত্র বা স্ট্রাগলার। কিন্তু আমাদের দেশের অতিপরিচিত কয়েকজন অভিনয়শিল্পীও ওয়েব সিরিজে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছেন বেশি। ওয়েবের রাজা এখন তারাই…
ওয়েবের জগতে বাংলাদেশ
সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকটি ওয়েব সিরিজ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীলতার অভিযোগ উঠেছে। উদ্ভট গল্প, অশালীন দৃশ্য, নোংরা সংলাপ ব্যবহার-নির্মাতা আর অভিনয়শিল্পীদের এমন কা-ে বিব্রত ও বিস্মিত বেশিরভাগ দর্শক। গত ২৭ মে মুক্তি পেয়েছে শিহাব শাহীনের ক্রাইম থ্রিলার ‘আগস্ট ১৪’। যেটি তুশি নামে বখে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ের গল্প। ওয়েব সিরিজে বন্ধুদের সঙ্গে তুশির শারীরিক সম্পর্ক, বাসায় একা নীল সিনেমা দেখার উত্তেজনাসহ নানা কুরুচিপূর্ণ দৃশ্য রয়েছে। এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন তাসনুভা তিশা। রগরগে দৃশ্যে অভিনয় করে দর্শক সাড়ায় তিনি মুগ্ধ। গল্পের প্রয়োজনে যে কোনো চ্যালেঞ্জিং দৃশ্যে অনীহা নেই বলেও জানিয়েছেন এ অভিনেত্রী।
আদনান ফারুক হিল্লোল ও নাজিয়া হক অর্ষা অভিনীত ওয়েব সিরিজ ‘বুমেরাং’ মুক্তি পেয়েছে গত ঈদে। এ সিরিজে তাদের পাশাপাশি টেলিভিশন ও মঞ্চ নাটকের শক্তিমান অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম পাভেলের উপস্থিতি দর্শকদের বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। সেখানে একটি বেডসিনের দৃশ্যকে ঘিরে ধিক্কার বেড়েই চলছে। যদিও এ নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই অর্ষার। তিনি বলেন, ‘কাজ করলে আলোচনা-সমালোচনা দুটিই হবে, এ বিষয়টা জেনেই ওয়েব সিরিজটিতে অভিনয় করেছি।’ সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করেছেন দাবি করে অর্ষা বলেন, ‘এ ধরনের কাজ আরও বেশি হওয়া উচিত। ভীতু মানুষদের জন্য আর্টকালচার নয়।’ এদিকে বেডসিনের দৃশ্যটা নিয়ে বিব্রত নন আজাদ আবুল কালামও। তিনি বলেন, ‘ওই সিনটার ডিউরেশন বেশি হওয়ায় খারাপ মনে হচ্ছে। নির্মাতাদের বলেছিলাম, একটু কম রাখলে ভালো হতো। তার পরও যতটুকু করা হয়েছে, সেটা গল্পের প্রয়োজনেই-এখানে সমস্যা দেখছি না।’
সুমন আনোয়ার পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘সদরঘাটের টাইগার’। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন ছোট পর্দার অভিনেতা শ্যামল মাওলা। তার বিপরীতে লাইলী চরিত্রে ছিলেন ফারহানা হামিদ। ওয়েব সিরিজের অধিকাংশ সংলাপে একাধিকবার অশালীন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ বছরই মুক্তি পায় ওয়াহিদ তারেক পরিচালিত ‘ঝড়ো হাওয়া লাগে তার শিখা নিভে যাবে’ নামের একটি রগরগে ওয়েব সিরিজ। যেখানে শ্যামল মাওলা, মৌটুসী বিশ^াস, আবু হুরায়রা তানভীর ও ইমিÑ প্রত্যেকের চরিত্রের মধ্যে যৌনাচারে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।
ভারতে ওয়েবেই যাদের পরিচিতি
শুরুতে বিজ্ঞাপন বা ছোট পর্দায় কাজ করলেও সেভাবে পরিচিতি পাননি তারা। ওয়েব সিরিজই তাদের ‘সেলেব’নামা দিয়েছে। যেমনÑ সবিতা ধুলিপালা, মিথিলা পালকর, বিজয় বর্মা প্রমুখ। এদের প্রত্যেকেই আগে ছবিতে অভিনয় করলেও খ্যাতি পাননি। বরং ওয়েবের বদৌলতে, ‘লিটল থিংস’-এর কাব্যা কুলকার্নি, ‘মেড ইন হেভন’-এর তারা খান্না, ‘শি’-এর সস্যাই যথাক্রমে মিথিলা, সবিতা ও বিজয়কে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। ‘মির্জাপুর’ ওয়েব সিরিজে আলি ফজলও চোখ টেনেছেন অভিব্যক্তি ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে।
ছিলেন আছেন থাকবেনও
রসিকা দুগ্গল, শেফালি শাহ, অর্জুন মাথুরের মতো অভিনেতারা তো থাকছেনই। আগেও ছবি ও সিরিজে বিভিন্ন চরিত্রে নজর কেড়েছেন। মূল চরিত্র নয়, বরং তাদের নিজস্ব ঘরানা বলা যেতে পারে ‘চেরি অন দ্য কেক’। ছোট কোনো চরিত্র, কিন্তু সেটাই শেষ পর্যন্ত দাগ কেটে যায়। ‘মির্জাপুর’-এর রসিকার আবেদনও যেন এক বাটি চেরি ফলের মতোই। আবার ‘দিল্লি ক্রাইম’ ও ‘আউট অব লাভ’-এ শেফালি, রসিকারা ভয়ঙ্কর। ‘মেড ইন হেভেন’-এ সমকামী চরিত্রে দাগ কাটলেও অর্জুন এর আগেও বহু ছবির বদৌলতে সুখ্যাতি পেয়েছেন।
Leave a Reply