গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করতে ওঠেপড়ে লেগেছে ইসরাইল। কিন্তু চার সপ্তাহ ধরে অব্যাহত ভয়াবহ হামলার মধ্যেও তিনি অক্ষত রয়েছেন।
শনিবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গাজায় তার দেশের ৯ সৈন্য নিহত হওয়ার খবর স্বীকার করার পর সিনওয়ারের বিষয়টি আবার সামনে আনেন।
ইসরাইল মনে করে, এই সিনওয়ারই ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ হামলার নায়ক। তার কারণেই ইতিহাসের সবচেয়ে পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে তারা।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘চলমান যুদ্ধের পর গাজায় হামাস আর থাকবে না। গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলে আর কোনো নিরাপত্তা হুমকি থাকবে না।’
ইসরাইল অবশ্য কেবল সিনওয়ার নয়, হামাসের অন্যান্য নেতার বাড়িতেও হামলা চালাচ্ছে। শনিবার তারা হামাসের ইসমাইল হানিয়ার গাজাস্থ বাড়িতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এ সময় হানিয়ার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে ছিলেন কিনা জানা যায়নি। তিনি অবশ্য, ২০১৯ সাল থেকে তুরস্ক ও কাতারে বসবাস করে আসছেন।
ইসরাইলের হামলায় ৬০ জনের বেশি যুদ্ধবন্দি নিখোঁজ
ইসরাইলি হামলায় গাজা উপত্যকার পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। আকাশপথে ইসরাইলি বাহিনী নির্বিচারে বোমা ফেলেই যাচ্ছে। এমনকি হাসপাতাল, স্কুল, উদ্বাস্তু কেন্দ্র, অ্যাম্বুলেন্স কিছুই বাদ যাচ্ছে না ইসরাইলি হামলা থেকে। শনিবার হামাসের সশস্ত্র সংগঠন থেকে জানানো হয়েছে, ইসরাইলি বিমান হামলায় ৬০ জনেরও বেশি যুদ্ধবন্দি নিখোঁজ এবং ২৩ জনের প্রাণ গেছে।
হামাসের সশস্ত্র শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবর ওবাইদা তার টেলিগ্রামে জানান, এই হামলায় ২৩ জনের লাশ ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত তাদের লাশগুলো ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করা যায়নি। তিনি বলেন, ‘গাজায় ইসরাইলের হামলা ক্রমাগত নৃশংস হয়ে উঠেছে।’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট জানান, তিনি গত দু’দিনে উত্তর এবং দক্ষিণ সীমান্তে সফর করেছেন। সেখানে তাকে সেনা সদস্যরা বলেছেন যে তারা সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকবে।
এর আগে, গাজায় অ্যাম্বুল্যান্সের উপরে হামলা চালিয়েছিল ইসরাইল। আকাশপথে অ্যাম্বুল্যান্স লক্ষ্য করে ইসরাইলি ফৌজ বোমা ফেলেছিল। ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০-এর কাছাকাছি।
গাজায় ক্রমেই ভয়াবহ যুদ্ধে জড়াচ্ছে হামাস এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনী। ইতিমধ্যে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলায় গাজায় মারা গিয়েছেন অন্তত ৯ হাজার জন। যার মধ্যে অনেকেই শিশু। মঙ্গলবার গাজার সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির জাবালিয়ায় ইসরাইল যে রকেট হামলা চালিয়েছিল, তাতে ১৯৫ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে হামাস। এই প্রসঙ্গে অবশ্য ইসরাইলের দাবি, প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র সংগঠনটির ঘাঁটি লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে। ইসরাইল এ-ও দাবি করেছে যে, তাদের হামলায় হামাসের দুই কম্যান্ডার নিহত হয়েছেন। যদিও হামাসের তরফে এই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের ‘হামলা’ এবং গাজায় ইসরাইলি ‘প্রত্যাঘাতে’র পর যে সংঘাতের সূচনা হয়েছিল, তাতে দু’পক্ষেরই হতাহতের সংখ্যা অনেক। জানা গেছে, ইসরাইল তো বটেই বিভিন্ন দেশের মোট ২৩০ জন নাগরিককে আটকে রেখেছে হামাস। মূলত দর কষাকষির জায়গায় সুবিধা পেতেই ওই বন্দিদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। এই আবহেই একটি টেলিভশন-বক্তৃতায় হামাসের অন্যতম মুখপাত্র আবু ওবেইদা বলেন, ‘আমরা অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই কয়েকজন বিদেশীকে ছেড়ে দিতে চাই। আমরা এই বিষয়ে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছি।’
এর আগে মোট পাঁচজন পণবন্দিকে ছেড়েছিল হামাস। এদের মধ্যে চারজনকে কূটনৈতিক মাধ্যমে আলাপ আলোচনার পর ছাড়া হয়। আর একজনকে উদ্ধার করে ইসরাইলি সেনা। তেল আবিবের তরফে আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল যে, বন্দিদের মুক্ত করার বিষয়ে তারা হামাসের উপর সামরিক এবং কূটনৈতিক চাপ বাড়িয়ে যেতে থাকবে।
সূত্র : আল জাজিরা এবং অন্যান্য
Leave a Reply