আজ মঙ্গলবার মাঠে নামছে বাংলাদেশ। আরব সাগর তীর ঘেঁষা ওয়াংখেড়েতে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে সাকিব আল হাসানের দল। ভারতীয় ক্রিকেটের এক আবেগের নাম ওয়াংখেড়ে। সুনীল গাভাস্কারের ছয় বলে ছয় ছক্কা, ভারতের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ আর শচিন টেন্ডুলকারের বিদায়; মনে রাখতেই হচ্ছে ওয়াংখেড়েকে।
আরব সাগর তীর ঘেঁষা ভারতের ইতিহাস ও ঐতিহ্য-সংবলিত নগরী মুম্বাইয়ে ওয়াংখেড়ের অবস্থান। প্রায় অর্ধশত বছর আগে শহরের আরেক স্টেডিয়াম ব্রাবোনের সাথে মনোমালিন্যতার জেরে মাত্র ১১ মাসে তৈরী করা হয় এই স্টেডিয়াম।
প্রথম খেলা গড়ায় ১৯৭৫ সালে, স্বাগতিক ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঝে। সর্বশেষ ম্যাচ হয় গত শনিবার। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাঝে। যেখানে পুরোদস্তুর উড়ে যায় থ্রি লায়ন্সরা। ৪০০ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে ১৭০ রানেই গুটিয়ে দেয় ইংলিশদের।
এটিই বাংলাদেশের জন্য বড় ভয়ের কারণ। কেননা আজ মঙ্গলবার এই মাঠেই প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। সাকিবদের সেমিফাইনালে উঠার শেষ সুযোগ এটাই, অন্যথায় স্বপ্নের সলিল সমাধি এখানেই; ওয়াংখেড়েতেই।
বাংলাদেশের জন্য আরো বড় চ্যালেঞ্জ মাঠের সীমানা। কাটছাঁট করে ৬২ থেকে ৬৫ মিটার পরিধি হতে পারে যার। ফলে স্পিনাররা চাপে থাকবেন স্বাভাবিকভাবেই, আর সাকিবদের শক্তি তো স্পিনেই! পেসারদের জন্যও অবশ্য খুব একটা সহজ হবে না।
এখানে আগে ব্যাট করা কিংবা পরে ব্যাট করা কোনো প্রভাব ফেলবে না। আয়োজিত ২৪ ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে ১৩ বার ও পরে ব্যাট করা দল জয় পেয়েছে ১১ বার।
ওয়াংখেড়েকে বলা হয় শচিনের মাঠ। আদতে তাইই। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৪৫৫ রান তারই। সর্বোচ্চ উইকেট ভেঙ্কাটেশ প্রাসাদে; ১৫টি। বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডেরও একটি উইকেট আছে এখানে।
এই মাঠে সর্বোচ্চ সংগ্রহ দক্ষিণ আফ্রিকারই, তবে ৩৯৯ নয়; ২০১৫ সালে ভারতের বিপক্ষে করেছিল ৪৩৮ রান। আবার একদম উল্টা, সর্বনিম্ন সংগ্রহটা বাংলাদেশের। ১৯৯৮ সালে ওয়াংখেড়েতে খেলা নিজেদের একমাত্র ম্যাচে ১১৫ রানেই বাংলাদেশ গুটিয়ে যায়।
২৫ বছর আগে খেলা সেই ম্যাচের কেউ নেই এখন দলে। দলের সাথেই আছেন দু’জন। একজন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, অন্যজন টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। থাকবেন অবশ্য আরো একজন, ধারাভাষ্যকার আতহার আলি খান।
আতাহার ২২ বল খেলেও পারেননি রানের খাতা খুলতে। মিনহাজুল আবেদিনও ফেরে ডাক মেরে। সব মিলিয়ে ইনিংসে ০ রানে ফেরেন ৪ জন। একাদশের ৮ জনই পারেননি দুই অংকের ঘরে যেতে। সর্বোচ্চ ২১ রান হাসিবুল হাসানের৷ ৪৪ বলে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন খালেদ মাসুদ।
বল হাতে অবশ্য ভারতীয়দের খানিকটা চেপে ধরেন খালেদ মাহমুদ ও মোহাম্মদ রফিক৷ ১০ ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন রফিক৷ ৭.২ ওভারে ১২ রানে ২ উইকেট পান খালেদ। ১২৪ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেটে জয় পায় ভারত।
সেই ম্যাচ থেকে অনুপ্রেরণা নেয়ার তেমন সুযোগ নেই। এদিকে বিশ্বকাপে নিজেদের অবস্থান তলানিতে, মাঠের বাইরের পরিস্থিতিও বেশ তালগোল পাকানো। তবু একটা জয় সব কিছুই বদলে দিতে পারে। সেই অপেক্ষাতেই আজ বাংলাদেশ মাঠে নামবে।
যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার ছন্দ, সাকিবদের জন্য বড় আতঙ্ক। তবে শেষ দেখায় বিজয়ী দলের নাম বাংলাদেশ। শুধু ম্যাচ নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেই তাদের হারিয়ে সিরিজও জিতেছিল টাইগাররা! জয় পেয়েছিল শেষ বিশ্বকাপেও৷
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ২১ রানে হারিয়েছিল প্রোটিয়াদের। আর শেষ ১০ দেখায় পাঁচ জয় আছে বাংলাদেশের। যেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিতেই পারে সাকিবরা।
Leave a Reply