মিশর থেকে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে শনিবার ২০টি ট্রাকের একটি যানবহর একদিকে যখন গাজা ভূখন্ডে প্রবেশ করল, অন্যদিকে, ঠিক তখন ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার ১৪ দিনব্যাপী এই সঙ্ঘাতের অস্ত্র বিরতি বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনার জন্য কায়রোতে আরব ও বিশ্ব-নেতারা মিলিত হয়েছেন।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি আয়োজিত এই শান্তি সম্মেলনে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বেসামরিক নাগরিকদের প্রয়োজন অনুযায়ী যথেষ্ট ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার অক্ষমতা সম্পর্কে তার হতাশা প্রকাশ করেন। এর আগে তিনি শুক্রবার গাজার সাথে মিশরের সীমান্ত পারাপার এলাকা পরিদর্শন করেন।
গুতেরেস বলেন, ‘আমরা এমন একটি অঞ্চলে মিলিত হয়েছি যে অঞ্চলটি কষ্টে রয়েছে, পতনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। এটি এমন একটি অঞ্চল যেখানে মানুষের কষ্টে হৃদয়ে মোচন দেয়া দৃশ্য রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘শনিবার আমি রাফাহ সীমান্ত পারাপার এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে দেখলাম বাস্তবে মানুষের
দুর্ভোগের চিত্র। অবাক করা এক বৈপরীত্য, একদিকে শত শত ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে, অন্যদিকে, দেখলাম মানুষের খালি পেট।’
জাতিসঙ্ঘের একজন ত্রাণ কর্মকর্তার হিসেব অনুযায়ী শনিবার যে ২০টি ট্রাক গাজা ভূখন্ডে প্রবেশ করে তাতে সেখানকার ২২ লাখ লোকের মাত্র তিন শতাংশ লোকের প্রয়োজন মেটানো যেতে পারে।
এদিকে শনিবার কায়রো সম্মেলনে জর্দানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ ফিলিস্তিনি অসামরিক নাগরিকদের প্রতি যে আচরণ ইসরাইল করেছে সেজন্য তিনি ইসরাইলের তীব্র সমালোচনা করেন এবং ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের ব্যাপারে তার কথায়, বিশ্ব-নেতাদের উপেক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন সম্পর্কে দু’ধরনের মানের কড়া সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ‘গাজায়, পশ্চিম তীরে এবং ইসরাইলে নিরীহ অসামরিক লোকজনের ওপর এই সহিংসতা দেখে আমি ক্ষুব্ধ এবং শোকার্ত বোধ করছি। আমরা যখন কথা বলছি তখনও গাজায় যে বিরতিহীন বোমা বর্ষণ চলছে তা সর্বস্তরেই নৃশংস এবং বিবেকহীন কাজ। এ হচ্ছে অবরুদ্ধ ও অসহায় মানুষের ওপর সম্মিলিত শাস্তি প্রদান। এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের নির্লজ্জ লঙ্ঘন।’
বহু ইউরোপীয় নেতা যাদের মধ্যে স্পেনের পেড্রো সানচেজ ইসরাইলে শনিবার (৭ অক্টোবর) হামাসের হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘হামলার বিরুদ্ধে নিজের সুরক্ষার অধিকার ইসরাইলের রয়েছে।’ হামাসের ওই হামলায় নারী ও শিশুসহ ইসরাইলের অসামরিক লোকজন নিহত হয় এবং অনেককে অপহরণ করা হয়।
সানচেজ বলেন, ‘ইসরাইলের বিরুদ্ধে সঙ্ঘটিত এই সন্ত্রাসী হামলার আমরা কড়া ভাষায় নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা এটাও স্বীকার করি যে আন্তর্জাতিক আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী ইসরাইলের নিজেকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে।’
মিশরের প্রেসিডেন্ট গাজার এই সঙ্ঘাতকে, ‘একটি নজিরবিহীন সঙ্কট’ বলে অভিহিত করেছেন যা কি না, ‘ওই অঞ্চলের এবং গোটা বিশ্বের শান্তির প্রতি হুমকি।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমেই আমাদের গাজাতে ত্রাণ পাঠাতে হবে এবং তারপর অবিলম্বে অস্ত্র বিরতির দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং পরিশেষে ইসরাইলে পাশাপাশি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।’
মিশরের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়েই বলেন, ‘গাজা থেকে মিশরের সাইনাইতে ফিলিস্তিদের ঠেলে দেয়ার বিষয়টি তিনি মনে নেবেন না। তিনি মনে করেন, ‘এটি ৭৫ বছর ধরে চলে আসা ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়টিকে বিলুপ্ত করবে। সেটা হতে পারে না, মিশরকে ব্যবহার করেতো নয়ই।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তার ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার দীর্ঘদিনের অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, তার কথায়, ‘একটি ন্যায্য সমাধানের অভাবের ফল হচ্ছে সহিংসতা।
তিনি বলেন, এই ন্যায্য সমাধান হচ্ছে ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পাশাপাশি অবস্থান।
মাহমুদ আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমি ত্যাগ করতে চাচ্ছে না এবং তারা চলে যাবে না।’
এদিকে শুক্রবার মুসলিম দেশগুলোর হাজার হাজার লোক গাজা ভূখন্ডে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। তারা হামাস উগ্রবাদীদের হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে গাজায় বিমান আক্রমণ বন্ধ করার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানায়।
বিক্ষোভকারীরা আরব রাষ্ট্রগুলো এবং তার বাইরে ও সমবেত হয় যার মধ্যে ছিল মিশর, লেবানন, তুরস্ক, ইরাক, জর্দান, ইয়েমেন, মরক্কো, মালায়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা
Leave a Reply