বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণ করতে না পারায় রিজার্ভ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল। তারা প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে রিজার্ভ নিয়ে তাদের মতামত বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করেছে। সংস্থাটির সফররত দলের সদস্যরা জানান, আইএমএফ যে রিজার্ভের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে তা চেষ্টা করেও বাংলাদেশ পূরণ করতে পারেনি। এজন্য তারা রিজার্ভে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। তবে গভর্নর না থাকায় ভারপ্রাপ্ত গভর্নর এ বিষয়ে একমত বা দ্বিমত কিছুই জানাননি। একপর্যায়ে আইএমএফ প্রতিনিধিদল বর্তমান লক্ষ্যমাত্রা ২৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ডিসেম্বর ও মার্চের জন্য যথাক্রমে ২৪ ও ২৩ বিলিয়ন করার ইঙ্গিত দিয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ’র রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এসব বিষয় উঠে আসে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত গর্ভনর ও এক নম্বর ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, ডেপুটি গর্ভনর আবু ফরাহ মো. নাছের, সাজেদুর রহমান খানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, আইএমএফ ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে পূর্ব শর্ত অনুযায়ী সংস্থাটির সদস্যরা বৈঠক করছেন। তারা রিজার্ভ, বাজার ভিত্তিক ডলার রেট, ঋণখেলাপি, রাজস্ব সংস্কার, তারল্য ব্যবস্থাপনাসহ ৪৭টি শর্তে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিতে রাজি হন। বাংলাদেশ অধিকাংশ শর্ত পূরণ করতে পেরেছে। কিন্তু রিজার্ভের উন্নতি, কর-জিডিপি অনুপাত এবং বাজারভিত্তিক ডলার রেট করতে ব্যর্থ হয়। এসব বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও বাস্তবতার আলোকে শর্ত পূরণে আরও সময় বাড়াতে পারে।
আইএমএফ’র শর্তানুযায়ী, সেপ্টেম্বরে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভের (এনআইআর) পরিমাণ ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার রাখার কথা ছিল বাংলাদেশের। যা জুলাইয়ের জন্য ছিল ২৪ দশমিক ৪৬ বিলয়ন ডলার। তবে বুধবার ছিল ২১ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। আর সেখান থেকে অন্যান্য দায় বাদ দিলে রিজার্ভ ১৮ বিলিয়নের নিচে নেমে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আইএমএফ মনে করে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেবে সংস্থাটি।
এদিকে বুধবারের বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের। কিন্তু বিশেষ কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি। এজন্য তার বিষয়গুলো নিয়ে আইএমএফ কোনো প্রশ্ন করেনি। তবে তার কাছ থেকে কী ধরনের তথ্য জানতে চাওয়া হতে পারে-এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বিএফআইইউ’র কার্যক্রম ও দেশের অর্থ পাচার রোধে সংস্থাটির পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হতে পারে। অপর এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব ব্যাংক বা শাখার মাধ্যমে অর্থ পাচার বেশি হয়, সেগুলো কঠোর সুপারভিশনের আওতায় আনা হচ্ছে। এজন্য আইএমএফ’র সুপারিশে একটি নীতিমালাও প্রস্তুত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফ’র সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত গভর্নরের নেতৃত্বে বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক দল অংশগ্রহণ করে। আলোচনা সফল হয়। বৈঠকে পূর্বের উপস্থাপিত পরামর্শ, অর্জন ও অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বিশদ আলোচনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই আয়োজন।
জানা গেছে, ব্যাংক, রাজস্ব ও পুঁজিবাজারসহ ৪৭টি সংস্কার প্রস্তাব দেয় দাতা সংস্থাটি। সংস্কার প্রস্তাবগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়। যার প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড় করে ফেব্রুয়ারিতে। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ নভেম্বরে মিলবে-এমন আভাস সংশ্লিষ্টদের।
Leave a Reply