আড়াই বছরের নিরলস পরিকল্পনা, রকেট হানায় পারদর্শী এবং পুরোপুরি অনুগত দুই সহকারী এবং লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত যোদ্ধাবাহিনী। ৭ অক্টোবরের ভোরে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সফল রকেট-হামলার নেপথ্যে এই তিন কারণকেই চিহ্নিত করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞেরা।
শুধু ইসরাইলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদকে বোকা বানানোই নয়, শনিবারের রকেটহানা (যা ইতিমধ্যেই পরিচিতি পেয়েছে টেন-সেভেন নামে) প্রশ্ন তুলে দিয়েছে তেল আবিবের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’-এর কার্যকারিতা নিয়েও। হামাসের সামরিক শাখা আল কাসসাম ব্রিগেডের প্রধান মোহাম্মদ দেইফের নিখুঁত পরিকল্পনাতেই ইহুদিদের পবিত্র দিবস সিমহাত টোরায় গাজা ভূখণ্ড থেকে নজিরবিহীন হামলার শিকার হতে হয়েছে ইসরাইলকে। যার অভিঘাত, কার্যত আমেরিকার উপর আসা ৯/১১-র অভিঘাতের সমান।
একটি সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স প্রকাশিত খবরে দাবি, ২০২১ সালের মে মাসে ১৫ দিনের যুদ্ধে প্রায় ৩০০ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর পরেই প্রত্যাঘাতের পরিকল্পনা করতে শুরু করেছিলেন দেইফ। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, পবিত্র রমজানের সময় জেরুসালেমের আল-আকসা মসজিদে ইসরাইলি হামলার প্রতিশোধ নেবেন। ফল বলছে ‘লক্ষ্যপূরণে’ সফল হয়েছেন তিনি। ২০ মিনিটের মধ্যে সফল ভাবে ৫,০০০ রকেট ছুড়ে ইসরাইলের একাধিক জনপদ বিধ্বস্ত করে দিয়েছে তার আল কাসসাম ব্রিগেড। হামলা হয়েছে স্থলপথে সীমান্ত পেরিয়েও। যার পরিণামে হতাহত হাজারেরও বেশি ইহুদি সামরিক এবং অসামরিক নাগরিক।
প্রকাশিত খবরে দাবি, ৭ অক্টোবরের হামলার ছক কষায় দেইফের সঙ্গী ছিলেন গাজায় হামাসের প্রধান নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার। পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন আল কাসসাম ব্রিগেডের হাতে গোনা আরো কয়েকজন। কিন্তু হামাসের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বেশির ভাগের কাছে পরিকল্পনা গোপন রাখা হয়েছিল। ওই নিশ্ছিদ্র গোপনীয়তার কারণেই ইসরাইলি গোয়েন্দারা ইহুদিদের পবিত্র দিবস সিমহাত টোরায় গাজা ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের প্রত্যাঘাতের কোনো আঁচই পাননি। তবে হামাসের পররাষ্ট্র-সংক্রান্ত শাখার ভারপ্রাপ্ত নেতা আলি বারাকার কাছে পুরো পরিকল্পনার খবর ছিল। বুধবার রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা এর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।’
২০ বছর আগে বিমান হামলায় মরতে মরতে কোনোক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন দেইফ। সেই হামলায় এক চোখ, এক হাত এবং এক পা হারিয়েছিলেন। হারিয়েছিলেন, নিজের ভাই এবং পরিবারের আরো দুই সদস্যকে। তার পর থেকে হুইলচেয়ারই তার সম্বল। গত দু’দশকেও একাধিকবার ইসরাইলি হামলা হয়েছে তার উপর। কিন্তু প্রতিবারই প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন তিনি। ১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর ইহুদিদের সবচেয়ে পবিত্র দিন ইয়ম কিপুর দিনে অতর্কিত হানায় ইসরাইলকে বিপাকে ফেলেছিল আরব দেশগুলোর জোট। অর্ধশতক পরে সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন দেইফ।
Leave a Reply