1. tasermahmud@gmail.com : admi2017 :
  2. akazadjm@gmail.com : Taser Khan : Taser Khan
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৭ পূর্বাহ্ন

আসাদ চৌধুরী : চিরদিনের দিকে যাত্রা

জাকির আবু জাফর
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৩

আসাদ চৌধুরী। একজন খ্যাতিমান কবি। বরেণ্য ও জনপ্রিয় কবি। ছিলেন একাধারে শিশুসাহিত্যিক, অনুবাদক, আবৃত্তিশিল্পী এবং দর্শকনন্দিত একজন টিভি উপস্থাপক। সজ্জন হিসেবে গ্রহণযোগ্য। সবার কাছে উদার মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি।
কবিরা কবিতা লেখেন। পাঠ করেন। শোনেন শ্রোতাবৃন্দ। কিন্তু সবার পাঠ কি মধুর?

সব কবির কবিতা পাঠ মধুর হয় না। সবার কথাও শুদ্ধ নয়। সুন্দরও নয়। গুছিয়ে বলতেও পারেন না সবাই।

আসাদ চৌধুরী এ ক্ষেত্রে একদম আলাদা। তার কবিতাপাঠ ছিল অসাধারণ। পাঠ করতেন দরাজ কণ্ঠে। উচ্চারণ ছিল চমৎকার। শুধু ভালো পাঠ নয়, আবৃত্তিও করতেন। আবৃত্তিকার হিসেবে ছিলেন প্রথম শ্রেণীর।

কথা বলার একটি আলাদা ভঙ্গি ছিল তার। শুদ্ধ ভাষায় বলতেন। একদম শুদ্ধতায় বলতেন। উচ্চারণ ছিল যথার্থ। প্রতিটি শব্দ স্বচ্ছ এবং পরিষ্কার করে উচ্চারণ করতেন।
শ্রোতা বেশ মনোযোগ রাখতেন তার কথায়। বক্তৃতাও ছিল আকর্ষণীয়। বৈঠকী আলোচনায় ছিলেন সরব। বিশেষ কোনো বই কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো লেখা নিয়ে কথা বলতেন। উপস্থিত কেউ কথা বলতে চাইলে তার কথা শুনতেন মনোযোগসহকারে।

সবার সাথে মিলেমিশে চলার এক অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তার। ডানের সাথে মিশতেন। বামের সাথেও। ধর্ম বর্ণ বলে কথা নয়। সবাই মানুষ, এটিই ছিল তার জীবনবোধ। কালো ধলো বলে কথা নেই। হিন্দু বৌদ্ধ বলেও নেই। খ্রিষ্টান মুসলমানও ভেদাভেদ করতেন না। প্রথমত সবাই মানুষ এটিই বিশ্বাস করতেন তিনি। কিন্তু দুষ্টু লোকদের অপছন্দ করতেন। এড়িয়ে চলতেন তাদের। খারাপ লোকের সঙ্গ না নিতে বলতেন কাছের লোকদের। নিজেও খারাপদের থেকে দূরত্ব রাখতেন।

বড়দের সাথে তো মিশতেনই। অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরাও তার আড্ডায় জমা হতো। আরো মজার বিষয় হলো- একেবারে তরুণ-তরুণীও তার সঙ্গে বেশ আন্তরিক হতো। তিনি একদম তরুণ বয়সীদেরও বন্ধুর মতো গ্রহণ করতেন। তাদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন।
না কারো সমালোচনায় খুব একটা যোগ দিতেন না। তার আড্ডার বিষয় ছিল কবি লেখকদের জীবনের গল্প। কে কেমন লিখেছেন তার ফিরিস্তি। কোন তরুণ কেমন রচনা করেছেন জানতেন তিনি। খোঁজ রাখতেন নবীন লেখকদেরও। উঠতি কবিদের কবিতার বেশ খবর ছিল তার কাছে। পড়তেন খুব। হাতের কাছে যা পেতেন, পড়তেন। ভালো লাগলে প্রশংসা করতেন। মন খুলে বলতেন মনের কথা। উৎসাহ জোগাতেন তারুণ্যকে।

রাত জাগার অভ্যাস ছিল তার। গভীর রাত অবধি পড়তেন। লিখতেনও কোনো কোনো দিন। একজন বিচরণশীল কবি ছিলেন তিনি। রাজধানীর আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতেন। যোগ দিতেন নানা অনুষ্ঠানে। কবিতার আসর তো ছিলই। সাহিত্য সভায়ও ছিলেন সরব। সামাজিক অনুষ্ঠানেও যোগ দিতেন উৎসাহের সাথে। শিল্প প্রদর্শনী কিংবা সাংস্কৃতিক আয়োজনে ছিল তার অদম্য উপস্থিতি। আবৃত্তির শিক্ষক ছিলেন তিনি। টিএসসি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন আবৃত্তি কর্মশালায় শিক্ষা দিয়েছেন তিনি। কবিতার কর্মশালায় শিক্ষা দিতেন নবীন কবিদের।

পান খেতে পছন্দ করতেন খুব। যেই সেই পান নয়। মসলাদার পান। সুগন্ধীযুক্ত পান। যেখানে ছুটতেন সঙ্গে থাকত একটি ঝোলানো ব্যাগ। কিছু বইপত্র, দু-একটি ম্যাগাজিন থাকত ব্যাগে। থাকত একটি ডায়েরি। ডায়েরিতে কবিতা লিখতেন। লিখতেন কিছু প্রয়োজনীয় বিষয়। নোট নিতেন কখনো কখনো। আর থাকত পানের আয়োজন। একটি বাক্সে অনেক ঘর থাকতো। একটিতে পান। একটিতে সুপারি। আরো ক’টিতে বিভিন্ন স্বাদের মসলা। যেমন লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি, আদাসহ পানের বিভিন্ন মসলা। সারাটি দিন একটির পর একটি পান বানিয়ে পুরে দিতেন মুখে। চিবানো শুরু তো ঘ্রাণও শুরু। মসলার সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ত। মাঝে মাঝে উপস্থিত কেউ কেউ লোভ করত পানের। খাওয়ার ইচ্ছে করতেন। চাইলে না করতেন না। বানিয়ে দিতেন মসলাদার পান।

পানের এ আয়োজন তার কবিতাকেও পেয়ে বসেছিল। কবিতার প্রথম বইয়ের নাম- ‘তবক দেওয়া পান।’ অদ্ভুত মনে হয়! হলেও সত্যি তো এটিই- তবক দেওয়া পানের কবি হিসেবে তিনি পরিচিত। কবি হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি তার। সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন। কিন্তু প্রধান পরিচয় তিনি কবি। তার কবিতা লিরিক্যাল। ছোট ছোট কবিতা। ছোট ছোট বাক্য। ছন্দের আনন্দে সাজানো বাক্যগুলো আসাদ চৌধুরীর নিজস্ব ঢঙে রূপ পেয়েছে। গদ্য কবিতা নেহায়াত কম লিখেছেন। ছন্দে লিখেছেন বেশি।

তিনি সমাজসচেতন কবি তো বটেই। ভীষণভাবে রাজনৈতিক সচেতনও। সমাজের অসঙ্গতির কথা তার কবিতার ছত্রে ছত্রে বিবৃত হয়েছে। রাজনীতির অন্ধকার দিক নিয়ে তার কবিতা সোচ্চার। সমাজের অসুন্দর নিয়ে উচ্চকণ্ঠ তার কবিতা! অমানুষের তীব্র সমালোচনা আছে তার কবিতায়। স্যাটায়ার আছে তীব্রভাবে।

তিনি সুস্থতা চেয়েছেন রাজনীতির। শান্তি চেয়েছেন সমাজের। পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ির অসুন্দর অপছন্দ করতেন। একজন লেখককে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিচার করার সমালোচনা করতেন তিনি। কবিতায় রাজনীতি কিংবা রাজনীতির কবিতা দুটোকে অসুন্দর বলতেন।
তিনি একজন বিশ্বাসী কবি। তার পারিবারিক পরিবেশ ছিল বিশ্বাসের অনুকূল। কিশোরকালে প্রথমে মক্তব এবং মাদরাসায় পড়েছেন। পরে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা সাহিত্যে অনার্স মাস্টার্স করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

হতে চেয়েছেন আদর্শ শিক্ষক। যোগও দিয়েছিলেন শিক্ষকতায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি কলেজে। শিক্ষক হিসেবে সুনামও কুড়িয়েছিলেন বেশ। এখানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের সঙ্গে তার দেখা। আল মাহমুদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। আল মাহমুদ পঞ্চাশের কবি। আসাদ চৌধুরী ষাটের। পিঠাপিঠি দশকের কবি বলে বয়সের ব্যবধানও খুব বেশি নয়। ১৯৩৬-এ আল মাহমুদের জন্ম। আসাদ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৩ এ। আট-নয় বছরের বড় ছোট দু’জন। ফলে অন্তরঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় দু’জনের সম্পর্ক। গড়ে ওঠে কাব্যিক বন্ধুত্ব। দিনে দিনে দৃঢ় হতে থাকে বন্ধুত্বের বন্ধন। সময় গড়াতে থাকে। আল মাহমুদ দৈনিক ইত্তেফাকে যোগ দেন। আসাদ চৌধুরী যোগ দেন বাংলা একাডেমিতে। দু’জনের সম্পর্ক আরো গাঢ় হতে থাকে। আল মাহমুদের পক্ষে কণ্ঠ দৃঢ় তার। সুযোগ পেলে প্রশংসায় মধুমুখ হতেন।

না তিনি রাজনৈতিক বিভাজনের খেলায় যোগ দেননি। দেননি বলে অপছন্দের হয়ে গেলেন অনেকের। তিনিও অপছন্দ করতেন এসব। এসব অপছন্দের জায়গা থেকে হয়তো দেশ ছেড়েছেন তিনি। চলে গেলেন কানাডায়। সেখানে মেয়ের সঙ্গে থাকতেন। অবশ্য তার পরিবারও সেখানে ছিলেন। আছেন। সেখানে তিনি ত্যাগ করেছেন শেষ নিঃশ্বাস। কানাডার টরন্টোর একটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। ইন্না লিলাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
কবি আসাদ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশাল, তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার মেহেন্দিগঞ্জে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী ওরফে ধনু মিয়া। মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম।

টরন্টোর আসোয়া লেকরিচ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৩টায় তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বাংলাদেশ সময় ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বেলা ১টা। কবি আসাদ চৌধুরীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তারা সবাই এখন টরন্টোয় আছেন। তার স্ত্রীও সেখানে।

কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, জীবনী, অনুবাদগ্রন্থ, শিশু-কিশোর গল্প, রূপকথা সব মিলিয়ে শতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে পান একুশে পদক। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে পেয়েছেন অনেক পুরস্কার।
আসাদ চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান কবিদের একজন। তার আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গি তাকে নিজস্বতায় উঁচু করে তুলেছে। টেলিভিশনে জনপ্রিয় সব অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও উপস্থাপনার জন্যও অনেকের চেয়ে আলাদা তিনি। তার ভরাট কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি মানুষের মনে দাগ কেটেছে। জয় করেছেন শিল্পপ্রেমী মানুষের মন।

আসাদ চৌধুরীর প্রিয় কবিদের একজন মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমি। বাংলাদেশ রুমি সোসাইটির সাথে ছিলেন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। উর্দু কবিতার প্রতিও ছিল তার গভীর ভালোবাসা। উর্দু সোসাইটির সাথেও তিনি জড়িত ছিলেন আন্তরিকভাবে।

রেডিও, বর্তমানে বাংলাদেশ বেতার। এক সময় রেডিওতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান প্রচারিত হতো। কী অদ্ভুত ছিল সেই আজানের সুর। সেই সুরের কারিগর ছিলেন কারি ওবায়দুলাহ্। আজান শেষে আজানের দোয়া পাঠ হতো। তারপর প্রচার হতো সেই দোয়ার বাংলা অর্থ। উচ্চারিত সেই বাংলা অর্থের দরাজ কণ্ঠটি ছিল কবি আসাদ চৌধুরীর।

যদ্দুর মনে পড়ে তার সাথে আমার প্রথম দেখা হওয়ার কথা, বছর পঁচিশেক তো হবে। স্থানটি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। কোনো একটি অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানের কোনো একটি মুহূর্তে পরিচয়। পরিচয়ের সেই যে মুহূর্ত মন থেকে মোছেনি আমার। নাম বলতে বললেন- আরে তুমি জাকির আবু জাফর! গেল সপ্তাহে জনকণ্ঠে তোমার কবিতা পড়েছি। ও হ্যাঁ, বাংলার বাণীতেও কবিতা ছিল। খানিকটা অবাক হলাম। তরুণদের কবিতা পড়েন তো পড়েন। নামও মুখস্থ রাখেন। পরে বুঝতে পেরেছি তিনি তারুণ্যের লেখার খোঁজখবর ঠিকই রাখেন।

সেই থেকে অবিরাম চলা। তার পর বিভিন্ন কবিতার জলসায় আসরে উৎসবে কাটিয়েছি অন্তরঙ্গ সময়। ঢাকায় তো বটেই, ঢাকার বাইরেও অনেক আয়োজনে একসাথে ভ্রমণ হয়েছে আমাদের। কত কথা কত স্বপ্নের উড়ানি ছিল আমাদের। কত মতবিনিময়। কত কত পরামর্শ।
কিছু কথা ছিল সাহিত্যের। কিছু কবিতার। কিছু কবিতাঙ্গনের। কিছু কথা ছিল তার একান্ত নিজের। আমারও ছিল তেমন কিছু কথা। আর কিছু ছিল তার ও আমার। এভাবে নানা সময় বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় ভাষা পেত আমাদের। অকপটে কথা হতো। এসব ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন আন্তরিক। তার কল্যাণপুরের বাসায় কেটেছে অনেক সন্ধ্যা। অনেক বিকেল। অনেক বিষয়ে পরামর্শ এবং সিদ্ধান্ত।

২০০৪-এ আত্মপ্রকাশ হয় আমাদের নয়া দিগন্তের। ভীষণ রমরমা আয়োজনে পাঠকের সামনে উপস্থিত হলো নয়া দিগন্ত। অল্প সময়ে এত পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে এমন পত্রিকা বাংলাদেশে কমই আছে। পত্রিকার যাত্রা শুরুর কিছু দিনের মাথায় গঠিত হলো নয়া দিগন্ত পাঠক ফোরাম। নাম দেয়া হলো- ‘প্রিয়জন’। প্রিয়জনের একজন সভাপতি দরকার। এমন একজন দরকার যিনি খ্যাতিমান এবং সম্মানিত। সেই সঙ্গে সর্ব মহলে গ্রহণযোগ্য। কে আছেন এমন? খুঁজতে খুঁজতে যে নামটি উঠে এলো তিনি আসাদ চৌধুরী। একবাক্যে গ্রহণ করলেন নয়া দিগন্ত পরিবার। আসাদ চৌধুরীকে প্রস্তাবও দেয়া হলো। কিন্তু তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করতে রাজি নন।

আমাদের সম্মানীয় সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন। তিনি আমাকে বললেন- দেখুন তো কবি কী করা যায়! কবি আসাদকে রাজি করানো যায় কি না। সম্পাদক কবি আসাদ বলে ডাকতেন তাকে। আসাদ ভাইয়ের সাথে সম্পর্কের গভীরতায় বেশ আত্মবিশ্বাস ছিল আমার। কিন্তু সম্পাদকের কথায় রাজি হননি! আমার কথায় কী আর হবেন!

যাই হোক বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলানী তুলে দেখা করলাম প্রিয় কবি আসাদ চৌধুরীর সাথে। অনুরোধ করলাম বিষয়টি। বললেন- জাকির, তুমি বিপদে ফেললে আমাকে। ভালোবাসার কাছে আমি বড়ই দুর্বল। তোমার কথা ফেলতে পারি না আমি। কী আর করা, ঠিক আছে তোমরা যা চাও তাই হবে। তিনি প্রিয়জনের সাথে এমন করে মিশলেন, সারা দেশের তরুণ-তরুণীদের বিশাল গোষ্ঠী তাকে ভালোবাসল। যেখানে যখন যে অনুষ্ঠান নেয়া হয়েছে প্রিয়জনের, উপচে পড়া উপস্থিতি ছিল সব জায়গায়। এসব আসরের মধ্যমণি ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। তিনি তার বক্তব্যে তরুণ-তরুণীদের সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। ভালো মানুষ হতে বলেছেন। বলেছেন সুনাগরিক হতে।

সত্যি তিনি আমার কথা ফেলেননি কখনো। যখন যা বলেছি তা-ই গ্রহণ করেছেন। যা লিখতে বলেছি তা-ই লিখেছেন। কত ধরনের লেখা লিখেছেন আমার আহ্বানে। লিখেছেন নয়া দিগন্তের সাহিত্য পাতায়। বিশেষ সংখ্যায়, বর্ষপূর্তি এবং ঈদ ম্যাগাজিনে। অসংখ্য লেখা লিখেছেন। মজার বিষয় ছিল এতসংখ্যক লেখা লিখে পাঠিয়ে দিতেন তিনি। কিন্তু পাঠাতেন শিরোনামহীন। কোনো লেখার শিরোনাম দিতেন না তিনি। বলতেন- শিরোনাম তুমি দিয়ে দিও।
নয়া দিগন্ত প্রকাশ পেয়েছে উনিশ বছর। এ উনিশ বছর ধরে লিখেছেন তিনি। তার এত লেখার শিরোনাম বেশির ভাগ আমি দিয়েছি। ভাবতে ভালো লাগছে বেশ। অবাকও লাগছে। কী বিশ্বাস রাখতেন আমার ওপর। কী অদ্ভুত আস্থায় রেখেছেন আমাকে।

আজ তিনি নেই। চলে গেছেন পৃথিবীর আলো বাতাস থেকে। চলে গেছেন চিরদিনের দিকে। যেখানে যায় পৃথিবীর সব মানুষ এবং সব মানুষ যাবে সেখানে।

তিনি চলে গেছেন। পৃথিবীতে থেকে গেছে তার সৃষ্টি। তার সাহিত্য। তার কবিতা। তার সৃষ্টি এখন কথা বলবে তার হয়ে। তিনি যা রচনা করেছেন তা-ই তার সম্পদ। আজ এবং আগামীর মানুষদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেলে উচ্চারিত হবে তার নাম। সময়ের কাছে থেকে যাবে তার নামের স্বাক্ষর।
মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন সহজ সরল। ছিলেন জটিলতামুক্ত। খুব সহজ ছিল তার কাছে পৌঁছানো। মনের কথা সহজে বলার উপায় ছিল। ছোট বড় ভেদাভেদ করতেন না। গুরুত্বপূর্ণ হলে গ্রহণ করতেন অকপটে।

তিনি একজন ভালো মানুষ ছিলেন এ উচ্চারণ ফুটতে থাকবে মানুষের মুখে। একজন চরিত্রবান মানুষ, এ উচ্চারণও ভাসতে থাকবে পৃথিবীর বাতাসে বাতাসে।

লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019-2023 usbangladesh24.com