আবির্ভাব থেকে নবুওয়াত (১-৪০ বছর)
শুভ জন্ম : মক্কার প্রসিদ্ধ ও সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের বনু হাশেম শাখায়। ‘আমুল ফিল’ তথা আবরাহার হস্তিবাহিনীর কাবাঘর আক্রমণের বছর ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে রবিউল আউয়াল মাসে সোমবার দিন সুবহে সাদিকের সময়।
জন্মের ১-৫ বছর : আরবের সংস্কৃতি অনুযায়ী দুধমাতা বনু সাদ গোত্রীয় হালিমার বিনতে আবি জুআইবের ঘরে অবস্থান।
জন্মের ষষ্ঠ বছর : দুধমাতা হালিমার কোল থেকে মা আমিনার কোলে আসেন, কিছু দিন পর মায়ের আকস্মিক মৃত্যু।
জন্মের ৭-৮ বছর : মায়ের মৃত্যুর পর দাদা আবদুল মুত্তালিবের তত্ত্বাবধানে যান। আট বছর বয়সের সময় দাদাজানের মৃত্যু।
জন্মের ৯-২৫ বছর : দাদার মৃত্যুর পর চাচা আবু তালিবের দায়িত্বভুক্ত হন। চাচার সাংসারিক কাজকর্ম, মেষ চরানো ও ব্যবসায় বাণিজ্যে সহায়তা। সততা-বিশ্বস্ততা ও চারিত্রিক শুচিশুভ্রতার জন্য ‘আল-আমিন’ খেতাব প্রাপ্তি। ফিজার যুদ্ধের পরিণতিতে ব্যথিত হয়ে সমাজের কল্যাণে ‘হিলফুল ফুজুল’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২৫ বছর বয়সে হজরত খাদিজা রা:-এর সাথে শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ।
জন্মের ২৫-৪০ বছর : মহীয়সী খাদিজার সাথে সংসার জীবন। দুই পুত্র ও চার কন্যাসন্তানের জন্ম। ৩৫ বছর বয়সের সময় কাবা পুনর্নির্মাণে অভূতপূর্ব নেতৃত্ব প্রদান। সমাজ চিন্তা ও জীবন জিজ্ঞাসা নিয়ে হেরাগুহায় ইবাদত ও ধ্যানে মগ্ন বা মোরাকাবা। ৪০ বছর বয়সে হেরারগুহায় নবুওয়াত লাভ, প্রথম ওহি নাজিল এবং মানবমুক্তির উদ্বোধন।
নবুওয়াতের পর মক্কায় নবী জীবন (৪১-৫৩ বছর)
প্রথম তিন বছর (৬১০-৬১২) : ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ১ ফেব্রুয়ারি (১৭ রমজান) নবুওয়াত লাভ করেন ও প্রথম ওহি নাজিল হয়। প্রিয়তমা স্ত্রী হজরত খাদিজা সর্বপ্রথম ইসলাম কবুল করেন। পরে হজরত আবু বকর, হজরত আলী ও পালক পুত্র জায়েদ ইবনে হারেসার ইসলাম গ্রহণ। গোপনে চলে ঘনিষ্ঠ মহলে ইসলামের দাওয়াত। হজরত আবু বকর রা:-এর প্রচেষ্টায় উসমান বিন আফফান, আবদুর রহমান বিন আউফ, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস, তালহা বিন উবায়দুল্লাহ, জুবায়ের বিন আওয়াম ও উবাইদা বিন জাররাহ রা: প্রমুখ সম্ভ্রান্ত যুবকদের ইসলাম গ্রহণ। হজরত খাদিজা রা:-এর আত্মীয়-স্বজন ও কিছু দাস-দাসী ইসলাম কবুল। নওমুসলিমদের ওপর নেমে আসে নির্মম শারীরিক নির্যাতন। হজরত আরকামের ঘরে ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র খোলা হয়। প্রথম তিন বছরে আনুমানিক ৪০ জন লোকের ইসলাম গ্রহণ।
দ্বিতীয় তিন বছর : প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াতের বিধান। রাসূলুল্লাহ সা: আপন আত্মীয়-স্বজনকে ইসলামের দাওয়াত দেন। কিন্তু পূর্বপুরুষের ধর্ম ত্যাগ করতে খুব কম লোক রাজি হয়। মুসলিমদের ওপর কুরাইশদের অত্যাচার ও নির্যাতন বৃদ্ধি পায়। ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দের রজব মাসে গোপনে চারজন মহিলাসহ ১৫ জন মুসলিম আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। এদের মধ্যে ছিলেন হজরত উসমান রা: ও তার পতœী রাসূলকন্যা হজরত রুকাইয়া রা:। আবু জাহিল রাসূলকে শারীরিক নির্যাতন করে। প্রতিবাদে হজরত হামজা ইসলাম গ্রহণ করেন।
তৃতীয় তিন বছর : কুরইশরা ইসলামের প্রতি আরো কঠোর হয়ে উঠে। রাসূলুল্লাহ সা: ও তাঁর সাথীদের সমাজচ্যুত করে তিন বছর সময় ‘শিআবে আবি তালিব’-এ অবরুদ্ধ করে রাখে।
নবুওয়াতের দশম বছর : রাসূল সা:-এর জন্য শোকের বছর। এই বছর প্রিয়তমা স্ত্রী হজরত খাদিজা রা: ও চাচা আবু তালিব মৃত্যুবরণ করেন।
কাফিরদের অত্যাচার সীমাহীন বৃদ্ধি পায়। মহানবী তায়েফ গমন করেন। কিন্তু তায়েফবাসী কর্তৃক নির্যাতিত হন। রাসূলের মিরাজ গমন।
নবুওয়াতের একাদশ বছর : হজরত উমরের ইসলাম গ্রহণ ও প্রকাশ্যে কাবা চত্বরে সালাত আদায়। আবিসিনিয়ায় মুসলমানদের দ্বিতীয় দলের হিজরত। মদিনার লোকদের আকাবার বায়আত। মক্কার বাইরের বিভিন্ন গোত্রের লোকের ইসলাম গ্রহণ।
নবুওয়াতের দ্বাদশ বছর : মদিনাবাসী কর্তৃক আকাবার দ্বিতীয় বায়আত। ক্রমে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও কুরাইশদের নির্যাতন বৃদ্ধি।
বেশ কিছু সংখ্যক মদিনাবাসীর ইসলাম গ্রহণ ও মদিনায় ইসলাম প্রচারকেন্দ্র স্থাপন। নবুওয়াতের ত্রয়োদশ বছর : হজরত সাওদা ও হজরত আয়েশার সাথে রাসূল সা:-এর বিয়ে। নবীজীর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত।
মদিনায় নবী জীবন (৫৪-৬৩ বছর)
প্রথম হিজরি : মুহাজির আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন প্রতিষ্ঠা। ঐতিহাসিক মদিনা সনদ তৈরি। কুবায় মসজিদে তাকওয়া নির্মাণ। বনু সালেম মহল্লায় প্রথম জুমার নামাজ আদায় । আবু আইউব আনসারী রা:-এর ঘরে আতিথ্য গ্রহণ। মসজিদে নববী নির্মাণ।
দ্বিতীয় হিজরি : কিবলা পরিবর্তন। বদরের যুদ্ধ। জাকাত ফরজ। রমজানের রোজা ফরজ। রাসূলকন্যা রুকাইয়ার ইন্তেকাল। হজরত ফাতিমা ও হজরত আলী রা:-এর বিয়ে।
তৃতীয় হিজরি : হজরত উসমান রা:-এর সাথে রাসূলকন্যা উম্মে কুলসুমের বিয়ে। হজরত হাসান রা:-এর জন্ম। উহুদের যুদ্ধ, রাসূলের দাঁত মোবারক শহীদ হয়। হজরত হামজার শাহাদাত।
চতুর্থ হিজরি : গাদ্দারি ও নবীজীকে হত্যা চেষ্টার অপরাধে বনু নজিরকে অবরোধ। বীরে মাউনায় ৭০ জন সাহাবির শাহাদাত। রাসূলের সাথে হজরত উম্মে সালমার বিয়ে। পর্দার বিধান জারি। মদপান নিষিদ্ধ।
পঞ্চম হিজরি : আহজাব বা খন্দকের যুদ্ধ। রাসূলের দৌহিত্র আবদুল্লাহ বিন উসমানের ওফাত। জয়নাব বিনতে জাহাশের সাথে রাসূল সা:-এর বিয়ে। হজরত খালিদ ও আমর ইবনে আসের ইসলাম গ্রহণ। বনু কুরাইজার যুদ্ধ।
ষষ্ঠ হিজরি : খায়বারের যুদ্ধ। হুদায়বিয়ার সন্ধি। বায়আতে রিদওয়ান। রাষ্ট্রপ্রধানদের প্রতি নবীজীর চিঠি ও ইসলামের দাওয়াত।
সপ্তম হিজরি : রাসূল সা:-এর ২০০ সাহাবিসহ উমরাহ পালন। হজরত উম্মে হাবিবাকে বিয়ে।
অষ্টম হিজরি : মক্কা বিজয়, মানবতার অগ্রযাত্রা। হুনাইনের যুদ্ধ। হজরত আবু সুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণ। মুতার যুদ্ধ।
নবম হিজরি : রোমানদের বিরুদ্ধে তাবুকের যুদ্ধ। হজরত আবু বকর রা:-এর নেতৃত্বে। ইসলামের প্রথম হজ আদায়। নবীজীর সাথে আরবের বিভিন্ন গোত্রের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ ও ইসলাম গ্রহণ।
দশম হিজরি : লক্ষাধিক সাহাবিসহ নবীজীর বিদায় হজ। বিদায় হজের ভাষণ ও মক্কায় ১০ দিন অবস্থান।
একাদশ হিজরি : উসামা বিন জায়েদের নেতৃত্বে সিরিয়ায় অভিযানের প্রস্তুতি। সফর মাসের শেষ ভাগে রাসূলুল্লাহ সা:-এর অসুস্থতা। রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ (মতান্তরে ১/২) সোমবার দুনিয়ার জীবন ত্যাগ করে পরম বন্ধুর সান্নিধ্যে গমন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
লেখক :
শিক্ষক, প্রাবন্ধিক
Leave a Reply