ভারত-চীন সম্পর্কের সাম্প্রতিক উত্তেজনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন পাঞ্জাবে বসবাসরত শিখ ধর্মানুসারীরা। তাদের আশঙ্কা এই সম্পর্কের টানাপোড়েনের বলি হতে পারেন তারা। উত্তর আমেরিকায় তাদের যাওয়া বন্ধ করে দিতে পারে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার।
সম্প্রতি হারদীপ সিং নিজ্জার নামে এক শিখ নেতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত ও কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক। কানাডার দাবি, সারেতে হারদীপের হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় এজেন্টরা জড়িত ছিল এবং এর বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। তবে ভারত এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। ইতোমধ্যে দুই দেশ পারষ্পরিক কূটনীতিক বহিষ্কার করেছে। কানাডীয়দের জন্য ভিসা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ভারত।
এমন অবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পাঞ্জাবে অবস্থানরত শিখরা। কারণ হারদীপ সিং ছিলেন খালিস্তান আন্দোলনের নেতা। এই আন্দোলনের মূল দাবি, পাঞ্জাবে খালিস্তান নামে শিখদের আলাদা একটি প্রদেশ হবে। তবে ভারত এই দাবি আমলে নেয় না, বরং এর সঙ্গে যুক্ত সবাইকে খালিস্তানি সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দেয়। হারদীপ সিংকেও ২০২০ সালে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল মোদি সরকার।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়,ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের ২ শতাংশ শিখ অনুসারী। পাঞ্জাবে ৩ কোটি শিখের বসবাস। এখানেই ৫০০ বছর আগে এই ধর্মের প্রচলন শুরু হয়। পাঞ্জাবরে বাইরে সবচেয়ে বেশি শিখদের বাস কানাডায়।
১৯৮০ এর ৯০ এর দশকে খালিস্তান আন্দোলন শুরু হয়। পাঞ্জাবে খালিস্তান নামে আলাদা এক প্রদেশের দাবিতে প্রাণ হারায় হাজার হাজার মানুষ। তারপরও স্বাধীনতার দাবিতে অটল তারা।
হারদীপ সিংয়ের গ্রাম ভারসিংপুরায় থাকেন তার চাচা হিম্মত সিং। ৭৯ বছর বয়সী হিম্মত বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সাহসী কাজ করেছেন জাস্টিন ট্রুডো। তিনি বলেন, ‘মাত্র একজন ব্যক্তির জন্য তার পুরো সরকারের সঙ্গে ঝামেলার দরকার ছিল না। কিন্তু তারপরও তিনি কাজটি করেছেন।
তবে তার আশঙ্কা ভারত-কানাডার কূটনৈতিক এই উত্তেজনায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পাঞ্জাব। একসময় এখান থেকে ভারতের খাবারের যোগান আসতো। তবে বিগত দুই দশকে প্রযুক্তি, উৎপাদন ও সেবায় অন্যান্য প্রদেশগুলো পাঞ্জাবকে ছাড়িয়ে গেছে। হিম্মত সিং বলেন, ‘এখন প্রত্যেক পরিবারই তাদের সন্তানকে কানাডা পাঠাতে চায়। কারণ এখানকার কৃষিকাজ আর আগের মতো লাভজনক নয়।’
কানাডায় সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যায় ভারত থেকে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২০ হাজার।
গুরসিমরান সিং নামে ১৯ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা আতঙ্কিত যে কানাডা এখন আর আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের ভিসা দিতে চাইবে কি না।’
Leave a Reply